গাজীপুরে প্রতিবন্ধীর ভিটে দখল, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

গাজীপুরে প্রতিবন্ধীর ভিটে দখল, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

Other

গাজীপুরের কাপাসিয়া সদরের বানারহাওলা এলাকায় অসহায় প্রতিবন্ধীর ভিটে দখলে নিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছে চিহ্নিত এক মাদক কারবারি। কাপাসিয়া বাজার সংলগ্ন এ ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়ে কোনো সমাধান না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে কাপাসিয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী মাহবুব হোসেন ইরানের স্ত্রী এমিলি আক্তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

পরে সাংবাদিকরা সরজমিনে উচ্ছেদ ভিটা পরিদর্শনে গেলে অভিযুক্ত নজরুল ও তার বাহিনী তাদের উপর চাড়াও হয়।

 

খবর পেয়ে ওইদিন বিকেলে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. ইসমত আরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, উপজেলা সদরের বানারহাওলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শারীরিকভাবে অসুস্থ মাহবুব হোসেন ইরান (৪০) তার  মায়ের বাবা আব্দুল মালেক ভূঁইয়া ও মায়ের মা মল্লিকা নেছার বানারহাওলা ও খোদাদিয়া মৌজায় ৩৩৫ রেকর্ডমূলে মালিক হন।

২০১৫ সালে বাবা এবং ২০১৮ সালে মাতার মৃত্যুর পূর্ব থেকেই প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই তাদের সহজ সরলতার সুযোগে বাড়িভিটার জায়গা-জমি থেকে বেদখল দেয়। ২০১২ সালে তারা তাদের ভোগদখলীয় সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য ইট, বালি, সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন সামগ্রী এনে কাজ শুরু করলে সন্ত্রাসী নজরুল দলবল নিয়ে বাধা প্রদান করে এবং সকল নির্মাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।

এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য লোকজনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে অভিযাগ করেন।

পরে ইরানের মাতা মল্লিকা নেছা বাদী হয়ে গাজীপুরের বিজ্ঞ আদালতে এজমালি সম্পত্তি বন্টনের মামলা (নং-৩৪৪/১৬) দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর নজরুল ইসলাম গং তাদের উপর আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বাড়ি ছাড়া করে। ফলে নিরুপায় হয়ে তারা পার্শ্ববর্তী রাউৎকোনা গ্রামের আত্ময়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মল্লিকা নেছা তার একমাত্র ছেলে সন্তান মাহবুব হোসেন ইরানের জীবন রক্ষায় তাকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেন।

এরই মাঝে নিজ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বিনা চিকিৎসায় অনাহারে থেকে ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল মল্লিকা নেছা মারা গেলে সন্ত্রাসী নজরুল বাহিনী তার কবর দিতেও বাধা প্রদান করে। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে একমাত্র সন্তান ইরান দেশে ফিরে আসে। বর্তমানে সে নজরুল বাহিনীর অব্যাহত অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তার স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এমিলি আক্তার বাদী হয়ে কাপাসিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-৭৭৪) দায়ের করেছেন।

এতে তিনি উল্লখ করেছেন, প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম (৫০) মাতা মল্লিকা নেছার নাম বানারহাওলা ও খোদাদিয়া মৌজার রেকর্ডিয় ৬৬৩, ৬৬৫, ৬৬৬, ৬৬৭, ৬৬৮, ৬৬৯, ৬৬৭০, ৬৫৯, ৯১৮ নং দাগের তাদের ভোগ দখলীয় জায়গা-জমি থেকে বেদখলের জন্য পূর্ব থেকে নানাবিধ শত্রুতা পোষণ করে আসছে। আদালতে মামলা চলমান এবং আদালত সকল সম্পত্তিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। আগামী ২৭ জুন পর্যন্ত আদালতের নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান থাকার পরও গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে নজরুল গংরা তাদের হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করে।

ইতিপূর্বে ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের নিমার্ণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। ৭০ বছরের অতিপুরানো ৭ লাখ টাকা মূল্যের দুইটি বড় মাটির ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে অতিপুরানো ৫ লাখ টাকা মূল্যের সেগুন, আম, কাঁঠাল, লিচু, নিমগাছসহ বাঁশঝাড় কেটে নিয়ে যায়।

রাতের আঁধারে জমি থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের মাটি কেটে বিক্রি করে দেয়। এছাড়া জোরপূর্বক ঘর নিমার্ণ করে ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এতে ভুক্তভোগিদের ৫০ লাখ টাকার বেমি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।  

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব হোসেন ইরান ছাড়া প্রতিবেশী জহিরুল ইসলাম শামীম, মহসীন হাসন চন্দন, রিপন মিয়াসহ তার স্ত্রী ও কন্যারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিবারের সদস্যরা কান্নজড়িত কন্ঠে সংসাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

ইতিপূর্বে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারের নিকট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকালে উভয় পক্ষকে থানায় হাজির হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এছাড়া বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. ইসমত আরা বৃহস্পতিবার বিকালেই সরজমিনে উচ্ছেদ ভিটা পরিদর্শন করে সত্যতা পান। উভয়পক্ষকে আগামি মঙ্গলবার সকালে তাঁর দপ্তরে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।