সুন্দরবনে তিন মাসব্যাপী মধু আহরণ শুরু

সুন্দরবনে তিন মাসব্যাপী মধু আহরণ শুরু

মধু আহরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা!
Other

সুন্দরবনে আজ ১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে তিন মাসব্যাপী মধু আহরণ মৌসুম। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের অফিস থেকে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার প্রায় ৬ হাজার মৌয়াল মধু আহরণের পাস-পারমিট (অনুমতিপত্র) নিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এসব মৌয়ালদের বেশিরভাগই মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে সুন্দরবনে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পাসের অপেক্ষায় বসে আছেন বন অফিসের ঘাটে।

বৃহস্পতিবার সকালে ১৪ দিনের পাস-পারমিট নিয়ে এসব মৌয়ালদের অধিকাংশই মধু আহরণের সরঞ্জামসহ নৌকায় করে ঢুকবে সুন্দরবনে।

আবার এখনও নৌকা প্রস্তুতির কাজ চলছে অনেকের। সুন্দরবন সংলগ্ন কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।


মোবাইল ফোনে কথা বলার পরই স্কুলছাত্রীর গলায় ফাঁস

মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের

দেশে আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন

করোনা ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: প্রধান বিচারপতি

 


সুন্দরবন বিভাগ এবার মৌয়ালদের জন্য ৯টি নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সংরক্ষিত অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মধু আহরণ না করা, কোনো মৌয়াল নিষিদ্ধ বনাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তার পারমিট বাতিল করা, মৌয়ালদের অনুর্ধ্ব ২০০মন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈধ বিএলসি ধারী নৌকার মালিক হওয়া, মধু আহরণের জন্য মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুন্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থসহ রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা।

এগুলোসহ ৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মৌয়ালদের। এই নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে বন আইনে শাস্তির বির্ধারণও রয়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, গত বছর মধু আহরণ মৌসুমে শরণখোলা ও চাঁদপই রেঞ্জ থেকে ১ হাজার ২২০ কুইন্টার মধু এবং ৩৬৬কুইন্টাল মোম আহরণ করা হয়। সেখানে এবছর মধু আহরণ মৌসুমের তিন মাসে ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধাণ করেছে বন বিভাগ।

তবে, মধু আহরণের অপেক্ষোয় পাশ-পারমিট নিতে বন অফিসে আসা কয়েকজন মৌয়ালদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মধু আহরণ মৌসুমের শুরুতে সুন্দরবনে খলিশা ফুলের মধু আসে। এরপর আসে গারণ ফুলের। সর্বশেষ আসে কেওড়া ও ছইলা ফুলের মধু। এই তিন প্রজাতির মধুর মধ্যে সবচেয়ে দামী হচ্ছে খলিশার মধু। এবছর সুন্দরবনে কোনো বৃষ্টি হয়নি। আর বৃষ্টি না হলে ফুলে মধু জমে না। ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়। তাই এবছর মধু কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন মৌয়ালরা।

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী এলাকার নৌকার মালিক মৌয়াল মো. ইউনুচ হাওলাদারের (৬৫) জানান, তার নৌকাটি প্রস্তুত করতে প্রায় ৫০হাজার টাকা খরচ হবে। কাজ প্রায় শেষের পথে। দুই-তিন তারিখ তারা পাস নিয়ে বনে যাবেন। তার নৌকায় ১২জন ভাগী রয়েছে। গত বছর একেকজন ভাগী দুই মন করে মধু পেয়েছেন ভাগে। ২৫ হাজার টাকা মন দরে তা বিক্রি করেছেন। মৌসুমের তিন মাসে মধু আহরণ করতে গিয়ে একেকজন মৌয়ালের খরচ হয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। এবার বৃষ্টি নেই। তাই মধু কেমন হবে তা বলা যাচ্ছে না।

শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের অপর পারে ঘাটে নৌকা নিয়ে অবস্থান করা মৌয়াল সোবাহান হাওলাদার (৬০) জানান, তার নৌকায় ১০জন মৌয়াল (ভাগী) রয়েছেন। মৌসুমের প্রথম দিনেই (১ এপ্রিল) তারা পাস নিয়ে বনে যাবেন। তারা গহীন সুন্দরবনের জাইল্যার ট্যাক এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করবেন।

শরণখোলার সৌখিন মধু ব্যবসায়ী মো. রাসেল আহমেদ জানান, তিনি এবছর তিনটি নৌকায় দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তার আরো বেশি বিনিয়োগের ইচ্ছা ছিল এবার। কিন্তু বৃষ্টির গতিবিধি খারাপ দেখে তিনি বেশি বিনিয়োগে সাহস করেননি। কারণ, এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় বনে ফুলের সমারোহ বেশি থাকলেও তার ঝরে যাচ্ছে। আর ফুল টিকে না থাকলে মধুও কম হবে। যা বিনিয়োগ করেছেন তাও উঠবে কিনা সেই আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবনে আজ ১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে তিন মাসব্যাপী মধু আহরণ মৌসুম। সংশ্লিষ্ট বন অফিস থেকে ১৪ দিনের পাস গ্রহন করে বনে প্রবেশ করবে মৌয়ালরা। সুন্দরবনে মৌসুমে মধু কম-বেশি হওয়া অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। এবার একেবারেই বৃষ্টি নেই। তাই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। সামনে বৃষ্টিপাত হলে হয়তো টার্গেট পুরণ হবে। এবার মৌয়ালদের জন্য ৯টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এরমধ্যে রয়েছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সংরক্ষিত অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মধু আহরণ না করা, কোনো মৌয়াল নিষিদ্ধ বনাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তার পারমিট বাতিল করা, মৌয়ালদের অনুর্ধ্ব ২০০মন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈধ বিএলসি ধারী নৌকার মালিক হওয়া, মধু আহরণের জন্য মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুন্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থসহ রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা। এগুলোসহ ৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মৌয়ালদের। এই নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে বন আইনে শাস্তির বিধানও রয়েছে।

news24bd.tv তৌহিদ