মা কিংবা মন খারাপের গল্প

মা কিংবা মন খারাপের গল্প

Other

করোনা সংক্রমণের আগে প্রায় প্রতি শুক্রবার সকালে আমরা রেসিডেনসিয়াল মডেলের স্কুলের বন্ধুরা স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতাম। সবার বয়স প্রায় চল্লিশের আগে পিছে। টানা অনেকক্ষণ খেলতে পারি না। খেলার ফাঁকে বিরতির সময় আড্ডা হয়।

অনেক গল্প হয়। সবই মজার গল্প। একদিন পাভেল বললো, ক্লাস থ্রি তে হাউসে আমরা একসাথে কাঁদতাম। হাউসের পাশে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে কাঁদতাম।
তপু এসে বলতো, এই কার কার মন খারাপ? চলে আসো। আমরা এখন কাঁদতে যাবো। তারপর সবাই গাছের পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে কাঁদতাম।

পুরোনো সেই কাহিনী শুনে খেলার মাঠে সবাই হো হো করে হাসলাম। কিন্তু বাসায় ফিরে ঘটনাটা যখনি ভাবতাম মনটা কেমন যেন হু হু করে  উঠতো। মায়ের জন্য মন কেমন করা ক্লাস থ্রি'র ছোট ছোট বাচ্চাগুলো গাছের আড়ালে লুকিয়ে একত্রে কাঁদছে। আহারে কি করুণ দৃশ্য!

news24bd.tvআমার ক্যাডেটে পড়ার শখ ছিল। চান্স পাইনি। নাইনে রেসিডেনসিয়ালে চান্স পেয়ে তাই খুব খুশি ছিলাম। হাউসে থাকবো। অনেক বন্ধু। অনেক মজা। এক বিকেলে বাবা মা আমাকে ফজলুল হক হাউসে রেখে আসতে গেলেন। আরো ছেলেরা ও তাদের গার্ডিয়ানও এসেছে। সন্ধ্যায় সব গার্ডিয়ানকে চলে যেতে বলা হলো। একমাত্র ছেলেকে রেখে যাচ্ছেন। বিদায় নেয়ার সময় মা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এক পলক মা'র দিকে তাকালাম। মা'র দু"চোখ বেয়ে দুই সারি অশ্রুধারা। ওই এক পলকই। আর একবারও পেছনে ফেরেনি মা। বা পারেনি। এরপর কতো কিছুই শুরু হলো। ভোরে পিটি, সকালে ক্লাস, বিকেলে গেমস, রাতে আড্ডা, কিন্তু এক পলকের সেই অশ্রুজল মুখটা কিছুতেই মন থেকে মুছতে পারিনি। আজও।

সিনেমার অনেক দৃশ্য আমি ঠিক নিতে পারি না। 'তারে জামিন পার' সিনেমায় দারশিলকে যখন বোর্ডিং স্কুলে দিয়ে বাবা মা ফিরে আসে আর 'মেরি মা' গান শুরু হয়-

Main Kabhi Batlaata Nahi, Par Andhere Se Darta Hoon Main Maa
Yuun To Main Dikhlaata Nahi, Teri Parwaah Karta Hoon Main Maa
Tujhe Sab Hai Pata, Hai Na Maa
Tujhe Sab Hai Pata... Meri Maa…

তখন আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারিনা। সারাজীবন আবেগের সাথে লুকোচুরি খেলেছি। কিছুতেই ধরা দেই না। কান বন্ধ করার উপায় নাই। তবে খুব সংগোপনে ল্যাপটপের স্ক্রীণে চোখ না রেখে একটু উপরে তাকিয়ে থাকি। আড়চোখে অন্যদের দিকে তাকাই। ওদের চোখ টলোমলো। পলকেই চোখ সরিয়ে নেই। দ্বিতীয়বার তাকানোর সাহস করি না। চোখের জল যে বড্ড ছোঁয়াচে!

আমার মা বাবা বেঁচে আছেন। তাই সত্যিই জানি না যাদের মা বেঁচে নেই তারা কিভাবে নিতে পারে যখন জেমস গেয়ে ওঠে-

সবাই বলে ঐ আকাশে লুকিয়ে আছে
খুঁজে দেখো পাবে দূর নক্ষত্র মাঝে
রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস
কোথায় আছে কেমন আছে “মা”
ওরে তারা রাতের তারা “মাকে” জানিয়ে দিস
অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না।

কিংবা যখন ফকির আলমগীর এর সেই বিখ্যাত গান শুনতে পায়-

মায়ের একধার দুধের দাম
কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোশ বানাইলে ঋণের শোধ হবে না
এমন দরদি ভবে, কেউ হবেনা আমার মা-গো।

কিংবা যখন জলদ গম্ভীর কন্ঠের আবৃত্তি কানে আসে-

মাকে আমার পড়ে না মনে
শুধু যখন বসি গিয়ে
শোবার ঘরের কোণে,
জানালা থেকে তাকাই দূরে 
নীল আকাশের দিকে
মনে হয়, মা আমার পানে
চাইছে অনিমিখে।
কোলের  পরে ধরে কবে
দেখত আমায় চেয়ে,
সেই চাউনি রেখে গেছে
সারা আকাশ ছেয়ে।

আরও পড়ুন


বাড়িতে যেতে চাইলে হাসবেন-ভয় দেখাবেন, এই আপনাদের বিচার!

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় সীমিত পরিসরে চলছে ফেরি, অপেক্ষায় শতশত যাত্রী

নিয়ন্ত্রণ হারানো চীনের রকেট পড়লো ভারত মহাসাগরে

যাত্রীদের চাপ সামলাতে সব ফেরিঘাটে বিজিবি মোতায়েন


কবি বলেছেন, ''মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই, মায়ের চেয়ে নামটি মধুর ত্রিভুবনে নাই''। তবুও সন্তানেরা মা'কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়। মাকে ফেলে আসে রেলস্টেশনে। জঙ্গলে।

আজ প্রতিটা প্যারা লিখতে বড় সমস্যা হচ্ছে। বারবার দুচোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এতো জল যে কোত্থেকে আমদানি হয়? আর বুকের ভেতর কোথায়ইবা লুকিয়ে থাকে?

চোখের জলের হয় না কোনো রঙ 
তবু কতো রঙের ছবি আছে আঁকা।

পুনশ্চ: মাকে নিয়ে লেখা কখনো পুরোনো লেখা হয়না। আমার মা, শ্বাশুড়ি মা থেকে শুরু করে বেঁচে থাকা এবং দূর আকাশের তারা হওয়া সকল মায়েদের প্রতি জ্ঞাপন করি বিনম্র শ্রদ্ধা। মা তো নিত্যদিনের, তাই বছরে একদিন মা দিবস নিয়ে অনেকেরই আপত্তি। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমার মতামতটা বলি, নিস্তরঙ্গ মায়ের জীবনে একটা দিনে আসুক না একটু উদ্বেলিত তরঙ্গ। সন্তানেরা একটা দিন মা'কে নিয়ে করুক না একটু বাড়াবাড়ি। কোনো ক্ষতিতো নেই তাতে।

news24bd.tv আহমেদ

সম্পর্কিত খবর