দুই বাসের পাল্লায় এবার থেঁতলে গেল পথচারীর পা

দুই বাসের পাল্লায় এবার থেঁতলে গেল পথচারীর পা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ফের বাসচাপায় পা হারিয়েছেন এক পথচারী। মো. নুরুল আমিন (৬০) নামে এক ব্যক্তি মহাখালী রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিসি ও ৬ নম্বরের একটি বাসের রেষারেষিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনায় আহত নুরুল আমিনকে দ্রুত প্রত্যক্ষদর্শীদের সহযোগিতায় পুলিশ প্রথমে আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও পরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করে।

নুরুল আমিন থাকেন রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায়। তার গ্রামের বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার মধুপুরে।

বনানী থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. বেলাল হোসেন জানান, ঘটনার পর ঘাতক বাস দু’টির মধ্যে ৬ নম্বর বাসটি আটক করে মহাখালী ট্রাফিক পুলিশ। বাসটি বনানী থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, কাল দুপুরে মহাখালীর রেলক্রসিংয়ের পাশেই রাস্তার মাঝে তৈরি নতুন আইল্যান্ড পার হচ্ছিলেন নুরুল আমিন নামে ওই পথচারী। ঠিক ওই সময় মতিঝিল থেকে গুলশান চলাচলকারী ৬ নম্বরের একটি বাস চাপ দেয় তাকে। নিমেষেই থেঁতলে যায় তার পা।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘাতক বাস দু’টি ছিল, ৬ নম্বর ও বিআরটিসি বাস। দু’টি বাসই যাচ্ছিল ফার্মগেটের দিকে। বাস দু’টির মধ্যে রেষারেষি চলছিল। রাস্তা পার হতে গিয়ে ওই ব্যক্তি হাত দেখান। বাসচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওই মধ্য বয়সী বলছিলেন, আমি আগে পার হই এরপর যান। কিন্তু হেলপার বলছিল ডানে চাপাও। ডানে বিআরটিসি বাস। ৬নং বাসের চালক ডানে চাপ দেয়ায় আইল্যান্ডের সাথে ঝুঁকেও রক্ষা পাননি পথচারী নুরুল আমিন। ৬নং বাসটির পেছনের চাকায় পিষ্ট হয় তার বাম পা। আঘাত পান ডান পায়েও।

আরও পড়ুন → দুই বাসের রেষারেষিতে এবার প্রাণ গেল বিজ্ঞাপন কর্মকতার

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও বলেন, বাস দুটির মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, তাড়াহুড়োর কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলো। এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। আজকের ঘটনাতেও বাস দু’টি নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় পুলিশের সামনেই। প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ মানুষই বাস দু’টি আটকে রেখেছিল। পুলিশকে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে পার হয়ে যায়।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ওই ঘটনায় খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসির প্রতিবেদক আদিত্য আরাফাতকে হেনস্তা করেছে পুলিশ। ঘটনার সময় সংবাদ সংগ্রহে উপস্থিত হন ওই সাংবাদিক। কিন্তু দুর্ঘটনার খবর সংগ্রহ ও ফুটেজ নিতে পুলিশ তাকে বাধা দেয়।

এ ব্যাপারে আদিত্য আরাফাত বলেন, আমরা অফিসে ফেরার সময় মানুষের জটলা ও একজন মানুষকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাকা রাস্তা থেকে তুলতে দেখি। পাশেই বাস আটকাও দেখা যায়। ঘটনা দেখে দ্রুত ক্যামেরা সেট করি। কিন্তু পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। তারা বলেন, দুর্ঘটনার খবর প্রচার করলে পুলিশের বদনাম হয়। আমাদের সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। ক্যামেরার ফুটেজ ডিলেট করারও চেষ্টা চলে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের মহাখালী জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফ উল্লাহ বলেন, পথচারীর ভুল কিংবা বাসচালকের দোষ যাই হয়ে থাকুক না কেন দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমাদের প্রথম কাজ আহতকে হাসপাতালে পাঠানো। এরপর ঘাতক বাস ও চালককে আটকসহ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আজকের ঘটনায় আমরা ইতোমধ্যে ঘাতক ৬নং বাসটি আটক করেছি। বাসটি বনানী থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বনানী থানা পুলিশকে দেয়া হয়েছে।

সাংবাদিক হেনস্তার ব্যাপারে জানতে চাইলে আশরাফ উল্লাহ বলেন, আসলে ওই দুর্ঘটনার পরিস্থিতির এমনিতেই রাস্তায় মানুষের জটলা হয়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে টিভি ক্যামেরা দেখে আরও মানুষ রাস্তায় অবস্থান নেয়। যে কারণে আমরা প্রথমে তাদের (ডিবিসি রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যান) সরে যেতে বলি। পরে তারা সরে গেলেও রেললাইনে ফের অবস্থান নেন। উৎসুক জনতাও রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে যায়। ঠিক ওই সময়ই ট্রেন আসার সিগন্যাল আসে। যে কারণে পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর