কৃত্রিম লেন্সে জন্মান্ধ পরিবারে আলো দেখলো জোনাকী

পৃথিবীর আলো দেখলো জোনাকী

কৃত্রিম লেন্সে জন্মান্ধ পরিবারে আলো দেখলো জোনাকী

মোহাম্মদ আল-আমীন, গাজীপুর

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার উজিলাব গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে জোনাকি আক্তার (১০)।  জন্ম থেকেই চোখে দেখে না। শুধু জোনাকীই নয় জোনাকির চাচা আমির হোসেন, দুই ফুফু হাসিনা আক্তার ও নাসরিন আক্তারও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ফুফাত বোন রুপা ও ভাই মারুফ জন্মান্ধ।

এক চোখে দেখতে পান না জোনাকির চাচি শিউলী আক্তার। জোনাকির বাবাও চোখে অনেক কম দেখেন বলে গত ছয় আগে চাকরি হারান তিনি।

তরুণ ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন অনন্ত'র উদ্যোগে রাজধানীর ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে জোনাকির একটি চোখে কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর সামনে তাঁর দাদিকে দেখতে পেয়ে বলে ওঠে ‘তুমি আমার দাদু।

আমি দেখতাছি তো'।

জোনাকির বাবা জাকির হোসেন জানান, চিকিৎসায় চোখের আলো ফিরতে পারে এ ছিল তাঁদের জন্য স্বপ্ন দেখা। এতে যে ব্যয় হবে সেই সামর্থ্য না থাকায় ওই স্বপ্নও তাঁরা দেখতেন না। বছর খানেক আগে একদিন সাদ্দাম হোসেন অনন্ত নামে এক তরুণ ব্যবসায়ী তাঁদের বাড়িতে আসেন। ওই ব্যবসায়ী তাঁদের দুর্দশার চিত্র দেখে প্রথমে খাদ্য সহায়তা দেন। পরে তাঁর শিশু মেয়ে জোনাকির চোখের আলো ফেরানোর চেষ্টা করতে চান।

জোনাকির বাবা জাকির হোসেন আরও জানান, তাঁর শিশু মেয়েটির স্মরণশক্তি খুবই ভালো। মক্তবে শুনে কোরআন শিখেছে সে। এবার তাঁকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেবেন তিনি।

জোনাকির দাদি রাশিদা বেগম জানান, তাঁর স্বামী হোসেন আলীরও এক চোখ অন্ধ ছিল। প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম জানান, আমির হোসেন একটি পথশিল্পী দলের সদস্য। তিনি দলটির ঢোলবাদক। জাকির হোসেন গ্রামে একটি কারখানায় চাকরি করতেন। চোখে কম দেখেন বলে প্রায় ছয় মাস আগে তাঁর চাকরি চলে গেছে।

সামান্য ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই তাঁদের। সরকারি সাহায্য যা পান তা দিয়ে এক সপ্তাহও চলে না। ফলে পরিবারে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কাউকেই চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার সুযোগ হয়নি।

সাদ্দাম হোসেন অনন্ত জানান, জোনাকিকে প্রথম গাজীপুরের সালনায় এবিসি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অপারগতা জানায়। পরে গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীর ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। গত ৮ জানুয়ারি চোখের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জোনাকির চোখের আলো ফেরানো সম্ভব বলে জানান। তবে তার চোখে কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করতে হবে।

সাদ্দাম হোসেন অনন্ত আরো জানান, গত সোমবার জোনাকির একটি চোখে লেন্স প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আগামী ২৫ জানুয়ারি অন্য চোখেও লেন্স প্রতিস্থাপন করা হবে।

গতকাল দুপুরে জোনাকীর চোখের ব্যান্ডেজ খোলার সময় সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তার দাদী। চোখ মেলেই জোনাকি বলে ওঠে, ‘তুমি আমার দাদু। আমি দেখতাছি ত!’ তখন আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরে জোনাকি। একে একে স্বজনদের জড়িয়ে ধরে সে কী আনন্দ তাঁর। কেউ কথা বললেই বলে দিতে পারে সে কে।

আরও পড়ুন


ঝটিকা সফরে মেয়র আতিক, রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী দেখে ক্ষোভ

news24bd.tv এসএম