ঐতিহ্য হারাচ্ছে কুন্ডু বাড়ির মেলা

কুন্ডু বাড়ির মেলা

ঐতিহ্য হারাচ্ছে কুন্ডু বাড়ির মেলা

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরের কালকিনি শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা। প্রতি বছর কালিপূজা ও দিপাবলী উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় এই মেলার। প্রায় ২শ' বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা এবছর চাঁদাবাজীর কারণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এই মেলায় দোকান বরাদ্ধ নিয়ে শনিবার রাতে আবির নামে এক যুবক খুন হন।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবপত্রের সমারোহ ঘটে এই মেলায়। এতে মাদারীপুর ও এর আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার লোকের ঢল নামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের কুন্ডু বাড়িতে দিপাবলী ও কালিপূজা উপলক্ষ্যে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডুদের বংশের নামানুসারে মেলা নাম হয় কুন্ডবাড়ির মেলা।

সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে পালাগান, জারি গান, নৌকা বাইচ বন্ধ হয়ে গেছে। বংশপরম্পরায় প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় অধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত। মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই মেলা চলবে আরো একসপ্তাহ। তবে এবছর মেলার দোকানিদের কাছ থেকে ভিটি ভাড়া, শ্রমিক মজুরী, ধর্মীফান্ডসহ বিভিন্ন নামে আদায় করা হচ্ছে মোটা অংঙ্কের চাঁদা। দোকান ভেদে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

শরীফুল ইসলাম নামে ফার্নিচার দোকানী জানান, ‘আমাদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। আমরা বগুড়া থেকে এসেছি। না দিয়েও তো উপায় নেই। আমার এদের কাছে এখন জিম্মি। তারা বলে দিয়েছে দোকান করতে হলে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এই মেলা আগের সেই এতিহ্য নেই। প্রভাবশালীরা মেলায় দোকান বরাদ্ধের নামে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। মেলায় ৫ শতাধিক দোকান বসে। এসব দোকান থেকে প্রভাবশালীলা কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা আদায় করে। শনিবার এই দোকান বরাদ্ধ নিয়ে খুন হয় আবির নামে এক যুবক।

প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা কম রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে দু-একদিন পরে মেলা জমে উঠলে বিক্রি বাড়বে।

মেলার এক দোকানী সেলিম হাওলাদার  জানান, আমরা গত ১০ বছর ধরে এই মেলায় আসবাবপত্র বিক্রি করছি।

মেলা কমিটির সভাপতি ভজন কুন্ড জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষ মাত্র ৪ একর জমির উপর এই মেলার আয়োজন করেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা বিস্তৃত হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরে। প্রতি বছর এই মোলায় কমপক্ষে  কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। তবে তিনি চাঁদাবাজীর কথা অস্বীকার করেন।

কালকিনি থানার ওসি মোফাজ্জল হোসেন জানান, মেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/বেলাল/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর