আকায়েদের শরীরেই বিস্ফোরক লাগানো ছিল!

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে সন্দেহভাজন হামলাকারী আকায়েদ উল্লাহ। ছবি: এএফপি।

আকায়েদের শরীরেই বিস্ফোরক লাগানো ছিল!

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথে গত সোমবার সকালে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের নাগরিক আকায়েদ উল্লাহকে (২৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিস্ফোরণে আহত হয়েছে আকায়েদ নিজেও। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরকটি তার শরীরেই লাগানো ছিল।

 

বাংলাদেশে আকায়েদের পরিচিতজনদের খুঁজছে পুলিশ। আকায়েদ উল্লাহর দেশের বাড়ি সন্দ্বীপের মুছাপুরে। বাবার নাম সানাউল্লাহ মিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে তিনি ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় থাকতেন বলে জানা গেছে।

ঘটনাটি গত সোমবারের। স্থানীয় সময় তখন সকাল সাতটা। কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছে মানুষ। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনালে যেতে ছুটছে মানুষ। টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথটি সরু হওয়ায় মানুষের ভিড়ও সবসময় একটু বেশি থাকে। এদিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। হঠাৎ বিকট শব্দ আর ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় পুরো এলোকা। দিগ্‌বিদিক ছুটতে শুরু করে মানুষ। আতঙ্ক আর ভয়ের অনুভূতি কেড়ে নিয়েছিল সকালের স্নিগ্ধতা। প্রথমে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ বিস্ফোরণ বলে ধারণা করা হলেও পরে জানা যায় সেটি ছিল বোমা হামলা।

এরপরই সামনে আসে সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরিচয়। পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারীর নাম আকায়েদ উল্লাহ। তিনি একজন বাংলাদেশি। সাত বছর আগে নিউইয়র্কে আসেন তিনি। ইদানীং থাকেন ব্রুকলিনে। পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে আকায়েদের গ্রামের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার খবর পায়নি বাংলাদেশ পুলিশ। রয়টার্সকে বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, দেশে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে আকায়েদ উল্লাহর সম্পর্ক ছিল না। তিনি গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

আজ মঙ্গলবার আকায়েদ উল্লাহর এক আত্মীয়কে শনাক্ত করে রয়টার্স। আহমেদ উল্লাহ নামের ওই ব্যক্তি জানান, আকায়েদ উল্লাহর বাবা পাঁচ বছর আগে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে আকায়েদ উল্লাহ সাধারণ সরকারি স্কুলে লেখাপড়া করতেন।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামিম আহসান বলেন, আকায়েদ উল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর মা, বোন ও দুই ভাই থাকেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পেয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আকায়েদ উল্লাহর নিউইয়র্ক শহরে ট্যাক্সি ও লিমোজিন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল। ২০১৫ সালের মে মাসের পর ওই লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি।

গুরুতর আহত আকায়েদ উল্লাহকে এখন বেলেভু হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিস্ফোরণে তাঁর হাত ও পেটের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণে আরও চার ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

নিউইয়র্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, কর্মস্থলে বিস্ফোরকটি তৈরি করেছিলেন আকায়েদ উল্লাহ। আকায়েদ এটি স্বীকার করেছেন। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হয়নি। আকায়েদ ইচ্ছে করেই নির্দিষ্ট স্থানে বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছেন। বাস টার্মিনালে হামলার পরপরই পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পর তা নাকচ করা হয়।

নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিলের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, আকায়েদ উল্লাহ যে বিস্ফোরকটি ব্যবহার করেন, সেটি তাঁর শরীরে লাগানো ছিল। তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের তার ও ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। তবে বিস্ফোরকে ব্যবহৃত প্রযুক্তি উচ্চমানের ছিল না।  

নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি বৈদ্যুতিক কোম্পানিতে কাজ করছিলেন আকায়েদ। সেখানে তাঁর ভাইও কাজ করতেন।

এদিকে আকায়েদের প্রতিবেশী অ্যালান বুতরিকো সিএনএনকে জানিয়েছেন, আকায়েদ পরিবার নিয়ে থাকতেন। আকায়েদ থাকতেন ভূগর্ভস্থ কক্ষে। বোন থাকতেন দোতলায়। তার ভাইও থাকত ওই ভবনে। তাদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের খুব একটা কথাবার্তা হত না। আকায়েদের পরিবার একেবারেই অর্ন্তমুখী স্বভাবের। গত দুই রাত ধরে আকায়েদের বাড়ি থেকে মারামারি, চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।  

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্রের বরাতে সিএনএন বলছে, গাজায় ইসরায়েলের ‘অনুপ্রবেশ’ আকায়েদ মেনে নিতে পারেননি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এমনটাই জানিয়েছেন।  

নিউইয়র্কে চলতি বছরে এটি তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। গত মার্চ মাসে মার্কিন সেনাবাহিনীর এক সাবেক সদস্য ছুরিকাঘাতে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। এ ছাড়া গত অক্টোবর মাসে এক উজবেক বংশোদ্ভূত অভিবাসী পথচারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিলে আটজনের মৃত্যু হয়।

সম্পর্কিত খবর