ই-পাসপোর্টের বাড়তি সুবিধা কী?

ই-পাসপোর্টের বাড়তি সুবিধা কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রবর্তনের ৮ বছরের মাথায় পদ্ধতি পরিবর্তন করে ই-পাসপোর্ট সিস্টেমে চলে যাচ্ছে। চালু করা এমআরপি ব্যবস্থায় পাসপোর্টে জালিয়াতির আশঙ্কা এবং দশ আঙুলের ছাপ ডাটাবেজে সংরক্ষণ না থাকায় এবং সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগে একাধিক পাসপোর্টের বিষয়টি ধরা পড়েছে। তাই সরকার চার হাজার ৬৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট দেয়ার ১০ বছর মেয়াদে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে।

আজ (২১ জুন) বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে একনেক সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, জার্মানির রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ‘ভেরিডোস জিএমবিএইচ’-এর কারিগরি সহায়তায় এ পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ৫ ও ১০ বছর। প্রাথমিকভাবে জার্মানি থেকে তৈরি করে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট আনা হবে। পরে দেশে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে আরো দুই কোটি ৮০ লাখ ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হবে।

একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার আগেই ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির’ বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত ২০১০ সালের ১ এপ্রিল এমআরপি ও এমআরভি সিস্টেম প্রবর্তন করা হয়। চালু করা এমআরপি ব্যবস্থায় পাসপোর্টের জালিয়াতির আশঙ্কা এবং দশ আঙুলের ছাপ ডাটাবেজে সংরক্ষণ না থাকার সুযোগে সিস্টেমের দুর্বলতায় একাধিক পাসপোর্ট করার প্রবণতা ধরা পড়ায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমটি চালু করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়।

প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনকালে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের কার্যক্রম নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি সফরকালে জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ভেরিডোস জিএমবিএইচ’ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর ব্যাপারে ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। তারা ই-পাসপোর্টের কারিগরি বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করেন। প্রকল্পটি ২০২৮ সালের জুনে শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্টের (এমআরপি) চেয়ে ‘ই-পাসপোর্ট’ অধিক নিরাপদ হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১১৮টি দেশে এ ধরনের পাসপোর্ট চালু রয়েছে। ‘ই-পাসপোর্ট’ চালু হলে বর্তমান এমআরপির ডাটাবেজ থেকে সব তথ্য ই-পাসপোর্ট ডাটা বেইজে স্থানান্তর করা হবে। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে চাহিদা মোতাবেক পর্যায়ক্রমে ‘ই-গেট’ স্থাপনের মাধ্যমে ‘ই-পাসপোর্ট’ ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হবে।

এই প্রকল্পের এলাকা হলো- ঢাকায় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়, ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট অফিস, ডাটা সেন্টার, পাসপোর্ট এসেম্বলি লাইন, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৭২টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিদেশে অবস্থিত ৮০টি বাংলাদেশ মিশন, যশোরে অবস্থিত ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার, দেশের অভ্যন্তরে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর, ৭২টি এসবি বা ডিএসবি অফিস, মিউনিখ জার্মানির রেফারেন্স পয়েন্ট।

প্রকল্প ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদেশ থেকে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট বুকলেট আমদানিতে ব্যয় হবে ১৪২ কোটি ৪২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এতে প্রতিটি বুকলেটে খরচ পড়বে ৭১২.১৪ টাকা। আর যন্ত্রপাতি আমদানির পর দেশে উৎপাদিত হবে দুই কোটি ৮০ লাখ ই-পাসপোর্ট বুকলেট। এতে উৎপাদন ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৬২৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখানে দেশে উৎপাদন করলে প্রতিটিতে খরচ হচ্ছে ৫৮০.১৭ টাকা। অপারেশন এবং তদন্ত সংক্রান্ত সেবা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৮ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সরঞ্জামাদি মেরামত ও সংরক্ষণ ব্যয় ৭১৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এক হাজার কোটি টাকা যাবে ভ্যাট ও সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স খাতে। বিভিন্ন সিস্টেম সফওয়্যার খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা। বিভিন্ন স্ক্যানার, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, স্মার্ট কার্ড রিডার, সিগনেচার প্যাড, ই-পাসপোর্ট রিডার কিনতে হবে পাঁচ হাজার ২৫১টি। ই-পাসপোর্ট পারসোনালাইজেশন মেশিনে যাবে ১২৫ কোটি ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

গতকাল পরিকল্পনা কমিশন ও পাসপোর্ট সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী জুলাই থেকে এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। ৩৮টি নিরাপত্তা ফিচার নিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ই-পাসপোর্টের প্রবর্তন করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশীদের হাতে যে পাসপোর্ট রয়েছে তা মেশিন রিড্যাবল পাসপোর্ট। পাসপোর্টের ভেতর কী রয়েছে তা মেশিনের মাধ্যমে একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা দেখতে পারেন। ই-পাসপোর্ট তার চেয়ে অত্যাধুনিক। এটি নিরাপত্তার দিক থেকেও অনেক নিশ্চিদ্র।

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর