বিচ্ছিন্ন খুলনা

সংগৃহীত ছবি

বিএনপির গণসমাবেশ 

বিচ্ছিন্ন খুলনা

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপির গণসমাবেশের আগে খুলনা নগরী কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাসের পর খুলনাগামী লঞ্চ ও ট্রলার চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। অচল করে দেওয়া হয়েছে নগরীর প্রবেশদ্বার রূপসা ঘাট। সড়কপথে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং ট্রেনেও তল্লাশির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রায় বাড়তি ভাড়া গুনতে বাধ্য হয়েছেন যাত্রীরা। অনেকে গন্তব্যে পৌঁছতে হিমশিম খেয়েছেন।

যশোর থেকে খুলনাগামী আন্তঃজেলা বাসসহ সবধরনের যাত্রীবাহী বাস বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকে নড়াইল থেকে খুলনাগামী কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না।  

পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগের খুলনাগামী ৫টি ট্রেনে টিকিট বিক্রি হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার সঙ্গে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েয়টি রুটের সব গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে।  

খুলনা মহানগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার রূপসা ফেরিঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য ঘাট বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন নৌকা মাঝি সংঘের নেতারা।

রূপসা ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ নদী পার হয়। রূপসা, ফকিরহাট, বাগেরহাটসহ আশপাশের জেলা-উপজেলার মানুষ এই ঘাট দিয়ে খুলনা নগরীতে প্রবেশ করে। ঘাট বন্ধ করে দেওয়ায় দুই পাশে শত শত মানুষ আটকা পড়েছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রূপসায় অবস্থান করছেন। তারা যাতে নগরীতে প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য ঘাট বন্ধ করা হয়েছে। ঘাট বন্ধ রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঠেকানো যাবে না। শুধু শুধু সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের তৎপরতা জনমনে উৎকণ্ঠার জন্ম দেয়। গত দুই দিনে খুলনায় আটক করা হয়েছে বিএনপির ৬০ নেতাকর্মীকে। গতকাল শনিবার ভোরে মাগুরা থেকে বাসে খুলনায় নামার পরপরই আটক করা হয়েছে সেখানকার ১০ নেতাকর্মীকে। সন্ধ্যার পর থেকেই নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে পুলিশের অভিযান। এমন পরিবেশে আজ শনিবার নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করেন, সমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাস চলাচল। বিকল্প হিসেবে নেতাকর্মীরা নদীপথে ট্রলার ও লঞ্চে আসার প্রস্তুতি নিলেও তা বন্ধ করে দেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সকালে নওয়াপাড়ায় ট্রেনে তল্লাশি চালিয়ে যাদের ব্যাগ নেই- এমন অনেককে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শনিবার ইজিবাইক, সিএনজি, মাহিন্দ্রাসহ সব গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এ ছাড়া নগরীর প্রবেশ পথগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে 'পাহারা' বসাবে বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে। তবে সরকারি দলের নেতারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সমাবেশ বানচাল করতে খুলনা বিভাগজুড়ে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক শামসুজ্জামান। গতকাল খুলনার কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাসের পর লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, নড়াইল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কি পায়ে হেঁটে আসবেন? এ কেমন মানসিকতা?

এই বিষয়ে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, পরিবহন বন্ধ করা আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটা পরিবহনমালিকদের সিদ্ধান্ত। তাঁর দাবি, ‘পরিবহন ধর্মঘট কেন করেছে, এটা পরিবহনের লোকেরা জানেন। আমরা সাংগঠনিক অবস্থা গিয়ারআপ (চাঙা) করার জন্য দুই দিন কিছু কর্মকাণ্ড করেছি।

news24bd.tv/আলী