স্পেনের স্বপ্ন ভেঙ্গে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টারে মরক্কো

স্পেনের স্বপ্ন ভেঙ্গে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টারে মরক্কো

নিজস্ব প্রতিবেদক

নক আউট পর্বের লড়াইয়ে রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে ফেবারিট স্পেনকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আফ্রিকান সিংহ মরক্কো। নিজেদর ইতিহাস গড়ার দিনে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে মরক্কো।  আশরাফ হাকিমির পেনাল্টিতে গোল হওয়ার সাথে সাথে গর্জে উঠলো পুরো মরক্কো তথা পুরো আফ্রিকা। কেননা এবারের বিশ্বকাপের একমাত্র আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো মরক্কো।

গোলশূন্য ১২০ মিনিট খেলা শেষে টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো তারা। পেনাল্টি শুটআউটে মরক্কোর গোলরক্ষক বৌনর অসাধারণ দক্ষতায় ৩টি শট নিয়ে একটিতে গোল করতে পারেনি স্পেন। পুরো ম্যাচে মরক্কোর খেলা দেখে একবারও মনে হয়নি তারা হারার জন্য এসেছে। ২০১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে দাঁতে দাঁতে কামড়ে লড়াই করেছে আটলাস লায়নরা।

চলমান কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া-জাপান ম্যাচের পর ২য় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোলশূন্য অবস্থার পর খেলার অতিরিক্ত ৩০ মিনিটিও গোল দিতে ব্যর্থ হয় দুই দল। স্পেনের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেললেও গোলটাই কেবল পায়নি আফ্রিকান সিংহ মরক্কো। খেলায় দুদলই লড়েছে সমান সমানে।  

দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে শেষ ষোলর লড়াইয়ে মঙ্গলবার স্পেনের মুখোমুখি হয় মরক্কো। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয় গোলশূণ্য অবস্থায়। পরে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলতে তাকে। স্পেন একের পর এক আক্রমণ চালাতে তাকে, কিন্তু মরক্কোর ঝালে বল পাঠাতে সক্ষম হয়নি দলটি। শেষ পর্যন্ত কোনও দলই এদিন কাঙ্খিত গোলের দেখা পায়নি।  কোন গোল না হওয়া এই ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। রুদ্বশ্বাস টাইব্রেকারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টারে প্রথমবারের মত জায়গা করে নেয় আফ্রিকান সিংহ খ্যাত মরক্কো।

এদিন অতিরিক্ত সময়ের গোলের আশায় মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে দু'দল। ম্যাচের ৯৪ মিনিটে বল নিয়ে এগিয়ে যায় ওয়ালিদ চেদ্দারি। তবে গোল করতে ব্যর্থ হন তিনি। ম্যাচের ৯৭ মিনিটে সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। তবে বাম দিক থেকে ভেসে আসা বলে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হয় মোরাতা।  

ম্যাচের ১০০ মিনিটে আবারও সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। তবে মোরাতার বাড়ানো বলে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হলে গোল পাওয়া হয় না স্পেনের। ম্যাচের ১০৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে শট করে রদ্রিগো। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। ম্যাচের ১০৪ মিনিটে আক্রমণে যায় মরক্কো। ওয়ালিদ চেদ্দারির নেওয়া শট দারুণ সেভে দলকে রক্ষা করেন উনাই সিমন। গোল করতে ব্যর্থ হলে গোলশূন্য থেকে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষ করে স্পেন ও মরক্কো।

বিরতি থেকে ফিরে অতিরিক্ত সময়ের ১০৬ মিনিটে আক্রমণে ওঠে স্পেন। তবে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। এরপর আরও কিছু আক্রমণ করে দু'দল। তবে গোলের দেখা পায় না কেউ। ম্যাচের ১১৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলের সুযোগ তৈরী করলেও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হয় ওয়ালিদ চেদ্দারি। ম্যাচের ১১৭ মিনিটে বল নিয়ে এগিয়ে যায় মোরাতা। গোলের সুযোগ সৃষ্টি করলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় স্পেন। এরপর আরও বেশ কিছু আক্রমণ করলেও গোল করতে ব্যর্থ হয় দু'দল। শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা না পেলে টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচটি।  সেই রুদ্বশ্বাস টাইব্রেকারে স্পেনের স্বপ্ন ভেঙ্গে প্রথবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিলো আফ্রিকান সিংহ খ্যাত মরক্কো।

এদিন শক্তির বিচারে চেয়ে ঢের এগিয়ে থাকা স্পেন বল দখলে এগিয়ে ছিল। তবে তাদের বড়সড় কোনো সুযোগ তৈরি করতে দেয়নি মরক্কো। শুধু এখানেই শেষ নয়, বল দখলে পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণটা বেশি করেছে মরক্কোই। কিন্তু বেশকিছু আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি ছড়িয়েও পুরো ম্যাচে গোলের দেখা পায়নি আফ্রিকান দলটি।

খেলার শুরু থেকেই ছোট ছোট পাসে বিল্ড আপ ফুটবল খেলতে থাকে স্পেন। বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে তারা। অন্যদিকে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবল খেলতে থাকে মরক্কো। ম্যাচের ৭ মিনিটে ডান দিক থেকে আক্রমণে যায় মরক্কো। তবে তা আটকে দেন সার্জিও বুস্কেটস। এরপর ম্যাচের ৯ মিনিটে আক্রমণে ওঠে স্পেন। তবে তা আটকে যায় মরক্কো রক্ষণে।  

ম্যাচের ১০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। সেখান থেকে আশরাফ হাকিমির নেওয়া শট অল্পের জন্য চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ম্যাচের ১৫ মিনিটে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান নওসাইর মাজরাউই। তবে তা নিজের গ্লাভসে নেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমন। ম্যাচের ২০ মিনিটে বাম দিক থেকে ক্রস বাড়ান আশরাফ হাকিমি। তবে তা ক্লিয়ার করে দেন আয়মেরিক ল্যাপোর্টে।

ম্যাচের ২৬ মিনিটে সহজ সুযোগ পায় স্পেন। জর্ডি আলবার পাস থেকে বল পান মার্কো অ্যাসেনসিও। সেখান থেকে শট করে বল জড়ান সাইড নেটে। ফলে গোল পাওয়া হয় না স্পেনের। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থাকে জোড়ালো শট করেন নওসাইর মাজরাউই। তবে তা অসাধরণ সেভে দলকে রক্ষা করেন উনাই সিমন।  

এরপর স্পেন বেশ কিছু অ্যাটাক করলেও তা থেকে সুবিধা করতে পারেনি তারা। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ফ্রি কিক পায় মরক্কো। তবে সেখান থেকে সুবিধা করতে না পারলেও সেখান থেকে সাজানো আক্রমণ করে মরক্কো। বাম দিক থেকে বাড়ানো বলে হেড করেন নায়েফ আগুয়ের্ড। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। এরপর আবারও সুযোগ তৈরী করেও ব্যর্থ হয় মরক্কো।

ম্যাচের ৪৫ মিনিটে কর্নার পায় স্পেন। তবে সেখান থেকে কাজে লাগাতে পারেনি স্পেন। এরপর বিরতি থেকে ফিরেই আক্রমনে যায় স্পেন। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডান দিক থেকে ফ্রি কিক পায় স্পেন। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে বাম দিক থেকে আক্রমণে ওঠে স্পেন। সেখানে গাভিকে ফাউল করলে ফ্রি কিক পায় স্পেন। সেখান থেকে শট করেন দানি ওলমো। তবে তা রুখে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু।  

এরপর আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দু'দল। ম্যাচের ৬১ মিনিটে ফ্রি কিক পায় স্পেন। সেখান থেকে বিপদ মুক্ত করেন ইয়াসিন বাউনু। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে কর্নার পায় স্পেন।  তবে তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এরপর বল নিজেদের দখলে রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে স্পেন।  

ম্যাচের ৭৯ মিনিটে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি স্পেন। এরপর ম্যাচের ৮০ মিনিটে কর্নার পায় স্পেন। তবে সেখান থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান আশরাফ হাকিমি। তবে তা থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয় মরক্কো।  ম্যাচের ৮৮ মিনিটে সুযোগ আসে স্পেনের সামনে। তবে নিকো উইলিয়ামসের নেওয়া শট আটকে দেন সোফিয়ান আমরাবাত। খেলার অতিরিক্ত সময়ের ৯৫ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত আক্রমণে গেলেও গোল করতে পারেনি স্পেন। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে দুদল বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোলের দেখা পায়নি কোনও দলই। শেষ পর্যন্ত গোল না হলে গোলশূন্য থেকেই খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে দুদল গোলের দেখা না পাওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে দুদল শেষ পর্যন্ত কোন গোল না দিতে না পারায় জয়ী নির্ধারণে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেই রুদ্বশ্বাস টাইব্রেকারে স্পেনের স্বপ্ন ভেঙ্গে প্রথবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিলো আফ্রিকান সিংহ খ্যাত মরক্কো।
news24bd.tv/আলী