২৮ মিনিট সড়ক আটকিয়ে ১৫ মাসের জেল জলবায়ু কর্মীর

জলবায়ু কর্মী ভায়োলেট কোকো (ছবি: সংগৃহীত)

২৮ মিনিট সড়ক আটকিয়ে ১৫ মাসের জেল জলবায়ু কর্মীর

অনলাইন ডেস্ক

ঘটনাটি গত এপ্রিলের। ব্যস্ততম সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজের একটি লেনে অবস্থান নেন জলবায়ু কর্মী ভায়োলেট কোকো। এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মাত্র ২৮ মিনিট সড়ক আটকিয়ে রাখেন এই জলবায়ু কর্মী।

এরপরেই তাকেই সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ২৮ মিনিটের  জন্য ১৫ মাসের জেল হয়েছে কোকোর। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানোর জন্য গত এপ্রিলে সিডনি হারবার ব্রিজের একটি লেন আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন কোকো।

এতে করে ওই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ২৮ মিনিট সেখানে থাকেন কোকো। পরের মাসে অর্থাৎ মে-তে তাকে আটক করা হয়। এই ২৮ মিনিটের জন্য অবশেষে ১৫ মাসের সাজা হয়েছে কোকোর।

গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত কোকোর বিরুদ্ধে এই রায় দেন। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, আগুন জ্বালানো ও পুলিশের আদেশ অমান্য করার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

অস্ট্রেলিয় বিচারকের এই রায়ের সমালোচনা করছে আন্তর্জাতিক মহল।

রায়ের পর বিচারক এলিসন হওকিনস বলেন, ‘এই জলবায়ু কর্মীর স্বার্থপর মানসিক ক্রিয়াকলাপের জন্য গোট শহরের মানুষ ভোগান্তিতে ভুগেছেন। আপনি যখন এই ধরনের শিশুসুলভ আচরণ করবেন, তার মানে আপনি নিজের ক্ষতি করলেন। ’

আদালতের এমন রায়কে চ্যালেঞ্জ করা হবে বলে জানিয়েছেন কোকোর আইনজীবী মার্ক ড্যাভিস। তিনি বলেছেন, ‘আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার রায়ে কঠোরতা দেখিয়েছেন বিচারক। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই ব্রিজে পাঁচ লেনের সড়ক রয়েছে। তিনি কেবল একটি আটকিয়ে ছিলেন, তাও বেশি সময়ের জন্য না। অন্য অভিযুক্তদের সাজা দেওয়া হলো না।  শুধু কোকোকেই নজিরবিহীন সাজা দেওয়া হলো। ’

এ দিকে কোকোর বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের পরেই বিক্ষোভ করছে দেশটির জনগণ। ছোট ছোট বিক্ষোভ হচ্ছে দেশজুড়েই। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছে মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং কিছু রাজনীতিবিদ।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক সোফি ম্যাকনিল বলেছেন, ‘এই রায় বিশ্ববাসীকে একটি ভয়ঙ্কর বার্তা পাঠিয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারগুলোকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সম্মানের সাথে আচরণ করার জন্য এবং তাদের জেলে না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি দেশ যারা কি না গণতন্ত্র রক্ষায় এই অঞ্চলে নেতৃত্ব দেয় তারা শান্তি প্রিয় কর্মীদের জেলে বন্দি করছে। ’

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ক্লেমেন্ট ভউল বলেছেন, ‘কোকোর রায়ে আমি শঙ্কিত। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের কখনই অপরাধী করা বা কারারুদ্ধ করা উচিত নয়। ’

তবে এ বিষয়ে অনেকে ভিন্ন মত পোষণ করছেন। রাস্তা আটকানো কিংবা সাধারণের জীবন ব্যাহত করার অধিকার কি জলবায়ু কর্মীদের আছে কি না, এ নিয়ে বিতর্কও হচ্ছে। নিউ সাউথ ওয়েলস সরকার বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে যেসব ক্রিয়াকলাপ হচ্ছে আমরা তার পক্ষে। কিন্তু মুষ্টিমেয় প্রতিবাদকারীকে শহরকে স্থবির করার অনুমতি দেওয়া যায় না।

news24bd.tv/মামুন