সুন্দরবনের বিষধর শঙ্খিনী সাপ নিয়ে তুলকালাম, হামলায় আহত ১

সুন্দরবনের বিষধর শঙ্খিনী সাপ নিয়ে তুলকালাম, হামলায় আহত ১

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটের শরণখোলায় সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে চলে আসা বিরল প্রজাতির একটি শঙ্খিনী সাপ নিয়ে ঘটেছে তুলকালাম কাণ্ড। আজ বিকালে উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের মিন্টু সরদারের সবজি ক্ষেতের বেড়ার জালে জড়িয়ে ছিলো কালো-হলুদ ডোরাকাটা শঙ্খিনী সাপটি।  

প্রতিবেশী আইউব আলী সেই সাপটি দেখে খবর দেন সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) সদস্যদের। পরে ভিটিআরটি সদস্য নিবাস হাওলাদার ঘটনাস্থলে এসে সাপটি উদ্ধার করে সুন্দরবন বিভাগের কাছে হস্তান্তর।

সুন্দরবনের ভিটিআরসি সদস্য সাপটি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পরই ঘটে অঘটন।  

মিন্টু সরদার দাবি করেন, সাপটি তার পোষা। এর দাম কোটি টাকা। আইউব তার অনেক বড় ক্ষতি করেছে।

এরপর রেগে হয়ে আইউব আলীকে বেদম মারপিট করেন মিন্টু ও তার লোকেরা। আহত আইউব আলী এখন শরণখোলা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এঘটনায় শরণখোলা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন আইউব আলী।

ভিটিআরটি সদস্য নিবাস হাওলাদার জানান, সাপটি মিন্টু সরদারের বাড়ির সবজি ক্ষেতের বেড়ার জালে জড়ানো ছিলো। সেটি উদ্ধার করতে গেলে মিন্টুসহ কয়েকজন তাকে বাধা দেন। দাবি করেন, কোটি টাকা মূল্যের সাপটি নাকি তাদের পোষা। বাধা দেওয়ার পরও সাপটি উদ্ধার করে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর ফরেস্ট অফিসে নিয়ে যান।  

বিরল প্রজাতির শঙ্খিনী সাপটি প্রায় ৬ ফুট লম্বা এবং ওজন প্রায় দুই কেজি। গায়ে কালো-হলুদ ডোরাকাটা। এই প্রজাতির সাপ সচরাচর দেখা যায় না। পরে উদ্ধার করা শঙ্খিনী সাপটি তার আবাসস্থল সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়। গত বছর সুন্দরবন থেকে চলে আসা এমন একটি সাপ মাছ ধরা জালে জড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলেও জানান এই ভিটিআরটি সদস্য।  

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা (এসও) রবিউল ইসলাম বলেন, লোকালয় থেকে উদ্ধার করা শঙ্খিনী সাপটি ধানসাগর স্টেশন অফিসসংলগ্ন বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। শঙ্খিনী সাপ খুবই বিষাক্ত। এই সাপ এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। বিশ্বে ৭টি বিষধর সাপের মধ্যে শঙ্খিনী একটি।  

এই বিষধর সাপের ৫টি প্রজাতি বাংলাদেশে রয়েছে। সুন্দরবন থেকে লোকাকলে চলে যাওয়া শঙ্খিনী সাপ ধরা নিয়ে গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। সাপ ও অন্য যে কোনো বন্যপ্রাণি হত্যা বা অসৎ উদ্দেশে আটক রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে লোকালয়ের সচেতন করতে সোমবার সকালে পশ্চিম রাজাপুর গ্রামবাসীদের নিয়ে এক সভা আহবান করা হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আইউব আলী (৪৫) জানান, সাপের খবর সুন্দরবন সুরক্ষায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যদের জানানোর কারণে মিন্টু সরদার, মনির সরদার ও মধু সরদার মিলে আমাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। পিটিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সাপটি তারা গোপনে বিক্রি করতে চেয়েছিলো। আমার কারণে তা পারেনি। এঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকরাম হোসেন বলেন, বিরল প্রজাতির একটি শঙ্খিনী সাপের বিষয় নিয়ে মারপিটের ঘটনার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

news24bd.tv/কেআই