‘ইতেকাফ’ শুরু

‘ইতেকাফ’ শুরু

অনলাইন ডেস্ক

‘ইতেকাফ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ অবস্থান করা, নিজেকে কোনো স্থানে আবদ্ধ করে রাখা। পরিভাষিক অর্থে- কতগুলো বিশেষ শর্তসাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে ইতেকাফ বলে।

পবিত্র রমজানে মাগফিরাত শেষে ২১ রমজান থেকে শুরু হয় নাজাতের দশক।

এ নাজাতের দশকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ‌‘ইতেকাফ’। পবিত্র রমজানের ২১তম তারাবিহ তথা আজ বুধবার (১২ এপ্রিল থেকে ইতেকাফ শুরু।

ইতেকাফ বাধ্যতামূলক ইবাদত না হলেও রমজানের শেষ দশকের স্বেচ্ছায় পালনীয় এ ইবাদত খুবই ফজিলতপূর্ল। পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্বাদা কিফায়া।

রমজান মাসকে ইবাদতের জন্য প্রতিযোগিতার মাস বলা হয়ে থাকে। রাসুল (সা.)-এর আমলে রমজান মাসে সাহাবিরা এ মাসে ইবাদতের প্রতিযোগিতা করতেন।

আর এ মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো ইতেকাফ পালন করা। 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতেন। ' (বুখারি, মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও ক্ষমালাভের এক অনন্য সুযোগ হলো ইতেকাফ। ইতেকাফ শুরু করতে হয় ২০ রমজানের সূর্যাস্তের আগ থেকে। আর তা শেষ হয় রমজান শেষ হলে। অর্থাৎ ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে বা ৩০ তারিখ পূর্ণ হলে।

তাই যারা রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, অনুকম্পা, ক্ষমা ও করুণার লাভের আশায় মসজিদে ইতেকাফ পালন করতে চান, তাদের আজ সন্ধ্যার মধ্যে মসজিদে গিয়ে অবস্থান নিতে হবে।

সহিহ বুখারি শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ যদি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতে চায়, তাহলে সে যেন ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে। ’

ইতেকাফ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ১২৫ নম্বর আয়াতে বলেন,
وَ اِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا ؕ وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهٖمَ مُصَلًّی ؕ وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ

অর্থ: ‘আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতেকাফকারী ও রুকুকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর। ’
 
মহানবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণের কথা বলেছেন। তাই কেউ যদি লাইলাতুল কদরের অন্বেষণ করতে চায়, তাহলে তার জন্য সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ইতেকাফ।
 
ইতেকাফের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে প্রিয় নবী (সা.) ঘোষণা দেন:

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতেকাফ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন পরিখা পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করবেন; যার দূরত্ব আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের থেকে বেশি। ’ (কানযুল উম্মাল: ২৪০১৯)

ইতেকাফ পালনকারী দুই কবুল হজ ও দুই ওমরার সওয়াব পাবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে দশ দিন ইতেকাফ করবে তার আমলনামায় দুটি কবুল হজ ও দুটি ওমরাহর সমতুল্য সওয়াব লিখা হবে। ’ (শুআবুল ইমান: ৩৬৮১; কানযুল উম্মাল: ২৪০০৬)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘ইতেকাফকারী ইতেকাফের কারণে গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং সব নেকির সওয়াব অর্জন করে। ’ (আল মুগনি : ৩/৪৫৫)।

ইতেকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বান্দা সচেতন থাকলে এবং অন্তরের গভীরে ইতেকাফের চেতনাকে লালনে সমর্থ হলে সীমিত সময়ের এই সাধনা বান্দার বাকি জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

news24bd.tv/তৌহিদ