আজ প্রবীণদের জন্য কিছু করলে ভবিষ্যতে সেই সুফলটা আমিও পাব 

প্রবীণদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সম্মান দিতে হবে

আজ প্রবীণদের জন্য কিছু করলে ভবিষ্যতে সেই সুফলটা আমিও পাব 

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ প্রবীণরা পরিবারের ও সমাজের জন্য আশীর্বাদ। নবীনদের দিকনির্দেশনা দিয়ে সমাজ গঠনে বড় অবদান রাখেন তাঁরা। অথচ এই প্রবীণ জনগোষ্ঠী আজ ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার। আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগব্যাধিতে।

অথচ পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে প্রবীণ এই জনগোষ্ঠীকে ভালো রাখার পাশাপাশি সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।

বয়স বাড়লে শারীরিক, সামাজিক, মানসিক, অর্থনৈতিক- অনেক ধরনের সমস্যার শিকার হতে হয়। শারীরিক রোগের পাশাপাশি মানসিক বিষণ্নতা জেঁকে ধরে। নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন অনেকে।

এমনটা হলে প্রবীণদের রোগের মাত্রাটা আরও বেড়ে যায়। মন ভালো না থাকলে খাবারেও রুচি থাকে না। এতে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়। তাই প্রবীণদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও সম্মান দিতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদেরকে দাওয়াত দিতে হবে। রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, হাসপাতালে সর্বত্রই তাদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলেই তাদের পরিপূর্ণ সেবা নিশ্চিত হবে। এটা তাদের চিকিৎসারও একটি অংশ।

প্রবীণ মানুষদের এখন সারা দেশেই প্রবীণনিবাস তৈরি হচ্ছে। অথচ এগুলো ৩০-৪০ বছর আগেও কেউ ভাবত না। এটা পশ্চিমা সংস্কৃতি। কর্মব্যস্ততার কারণে সেখানে সন্তানরা বাবা-মাকে সময় দিতে পারতো না বলে প্রবীণ নিবাসে রেখে আসত। বর্তমানে আমাদের দেশেও এমনটা হচ্ছে। মানুষ অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবার গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে প্রবীণের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই সংকট আরও বাড়বে।  

এটা মনে রাখতে হবে, আমাদের সবাইকেই একদিন প্রবীণ হতে হবে। আজ প্রবীণরা যেসব সমস্যা নিয়ে বসবাস করছেন হয়তো সে অবস্থায় আমার নিজেকেও পতিত হতে হবে। তাই আমাদের মনে করতে হবে, আজ প্রবীণদের জন্য কিছু করে যেতে পারলে ভবিষ্যতে সেই সুফলটা আমিও পাব। এটা সরকার, সমাজ, পরিবার- সবারই দায়িত্ব। তবে আমি মনে করি, পরিবার থেকেই এই কর্তব্যের বিষয়টা শুরু হওয়া দরকার।  

বাবা-মা জীবনের সবটুকু উজাড় করে সন্তানদের মানুষ করেঅ অথচ আমাদের সমাজে দেখা যায়, শেষ বয়সে সেই সন্তানরাই তাদের দেখভাল করে না। এর চেয়ে কষ্টের আসলে কিছু নেই। যার যতটুকু সামর্থ্য থাকে ততটুকু নিয়েই বাবা-মার সেবা করা উচিৎ। আরো কষ্টের কথা যে, অনেকে আবার বৃদ্ধ বাবা-মাকে বোঝা মনে করেন। অনেক ক্ষেত্রে ছেলের বউ শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে পছন্দ করেন না। তবে কর্মফল সবাইকে ভোগ করতে হয়।  

বার্নার্ড শ’র একটা গল্প আছে, ছেলে তার পিতাকে মারতে মারতে বাড়ির গেটের বাইরে নিয়ে আসে। তখন বাবা তার ছেলেকে বলেন, ‘বাবারে, আমি আমার বাবাকেও একদিন এভাবে মারতে মারতে ঘরের দরজার বাইরে এনেছিলাম, কিন্তু তুমি আজ আমাকে গেটের বাইরে নিয়ে এসেছো!’

এ থেকে শিক্ষা হলো, আজ আমি যা করব, কাল আমাকেও সেই ফল ভোগ করতে হবে। তাই আইন প্রয়োগ করে এসব বাস্তবায়ন হবে না। দায়িত্ববোধের শিক্ষাটা পরিবার থেকেই আসতে হবে। একটা শিশু যা দেখে বড় হবে, পরবর্তীতে সে সেটারই প্রতিফলন ঘটাবে। বয়স বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই কিছু রোগ-ব্যাধি হবে। ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হার্টের রোগ, লিভারের রোগ, চোখের সমস্যা ইত্যাদি বাড়বে। তাই তাদের যত্নও বেশি লাগবে এটাই স্বাভাবিক।  

মনে রাখতে হবে, বৃদ্ধকালে প্রবীণ ওই ব্যক্তিটির মন খারাপ থাকলে, পুষ্টিহীনতা দেখা দিলে রোগের প্রবণতা আরও বাড়বে। এই বিষয়গুলো পরিবারের সদস্যদের মাথায় রাখা উচিৎ।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।