‘রক্তপাতহীন ভূখন্ড বিনিময় করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাননি শেখ হাসিনা’

সংগৃহীত ছবি

‘রক্তপাতহীন ভূখন্ড বিনিময় করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাননি শেখ হাসিনা’

হুমাযুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

‘কুড়িগ্রামে ছিটমহল বিনিময় : ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে কুড়িগ্রাম কলেজমোড়ের শেখ রাসেল অডিটোরিয়ামে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেসরকারি সংগঠন উদ্দীপন, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ ও উত্তরবঙ্গ যাদুঘর এ সেমিনারের আয়োজন করে।

উত্তরবঙ্গ যাদুঘর ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান এডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি মইনুল হক, সেক্রেটারী গোলাম মোস্তফা, উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসুসহ অনেকে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, ছিটমহল বিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত। দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের লাঞ্চনা-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে একটি রক্তপাতবিহীন ভূখণ্ড বিনিময় ও মানুষ বিনিময়ের ঘটনাটি বিরল হলেও, সেভাবে প্রচার করা হয়নি। যতটা প্রচার পেয়েছিল ছিট বিনিময় চুক্তি করে শেখ মুজিব ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন বলে।

এই ল্যান্ড চুক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়তি আরও ১০ হাজার হেক্টর ভূখন্ড বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছেন।

বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সেক্রেটারী গোলাম মোস্তফা দাবি তোলেন, ১ আগস্ট তারিখকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছিটমহলমুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হোক। এছাড়া তিনি ছিটমহল আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলেন তাদের তালিকা রাষ্ট্রীয়ভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করার দাবি জানান।

পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ছিটমহলের মানুষের ভেতরের যে কথা, তা ডকুমেন্টশন করা দরকার। কারণ এই মানুষগুলো সারাজীবন থাকবেন না। এই যে মানুষের দুঃখের গল্প, মানুষের চাপা ক্ষোভের গল্প। র‌্যাডলিফ দেশ ভাগ করে একটি টিউমার রেখে গেছেন। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আপনারা টিউমারটি অপারেশন করতে পেরেছেন। এই টিউমারের ব্যথা ৬৮ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনারা ভোগ করে গেছেন। এর প্রতিকার আপনারা করতে পারেন আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচার চেয়ে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির ফলে যে বিশাল অর্জন হয়েছে, তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাজ করা দরকার। এটি শেখ হাসিনা সরকারের বিশাল সাফল্য, অথচ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হননি। এটি নিয়েও কাজ করা দরকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, ছিটমহলগুলোর জন্য বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করছেন। তাদের জন্য আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেই কাজগুলো সবার মিলে করা দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, আগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলছে, আলপথ এখন রাজপথ হয়েছে। আজকের ছিটমহল এবং ৮ বছর আগের ছিটমহলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য হয়েছে। এক সময় স্বাধীনতা বিরোধীরা গোলামি চুক্তি বলেছিল, অথচ এই চুক্তি ৫১ হাজার মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছে। শোকাবহ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলবাসীদের জীবনে আলোক বর্তিতা নিয়ে এসেছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, আগামী বছর থেকে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে বলে আমি কথা দিচ্ছি। এছাড়াও তিনি বলেন, জনসংখ্যা বিষয়ে যে সকল বিরোধ রয়েছে সেটি মিটিয়ে ফেলা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহল দুই দিনের মধ্যে বিনিময় হয়। এতে ৫১ হাজার ছিটমহলবাসী বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক জীবন যাপনকারী ছিটবাসীর উন্নয়নের পথ সুগম হয়। আর কয়েক বছরে বাংলাদেশি ছিটমহলগুলো অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে।

সভায় বক্তারা ছিটমহল বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্বীকার করে ছিটমহলের ইতিহাস সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

news24bd.tv/SHS