কোরআন যাদের অন্তর তালাবদ্ধ বলা হয়েছে

কোরআন যাদের অন্তর তালাবদ্ধ বলা হয়েছে

আলেমা হাবিবা আক্তার

কোরআন দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্ত হলো মনোযোগসহ পাঠ করা। কোরআন পাঠের সময় মনোযোগ না থাকলে তা মানুষের জন্য ফলপ্রসূ হয় না। অমনোযোগসহ কোরআন পাঠ করা এবং তা শ্রবণ করা পাঠ না করারই নামান্তর। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোরআন তিলাওয়াত করতেন তা কাফির-মুশরিকরাও শুনতে পেত, কিন্তু কোরআনের আলো দ্বারা তারা উপকৃত হতে পারেনি।

তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, তারা শ্রবণ করে না, তারা বধির। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের মধ্যে কতক তোমার দিকে কান পেতে রাখে, কিন্তু আমি তাদের অন্তরের ওপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে; তাদের বধির করেছি এবং নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলে তারা তাতে ঈমান আনবে না। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ২৫)
মনে রাখতে হবে, কোনো কিছু পাঠ করা বা শ্রবণ করা তখনই বলা হবে, যখন তা গভীরভাবে উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী আমল করা হয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনকে গভীর উপলব্ধির সঙ্গে পাঠ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এক কল্যাণময় কিতাব, তা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা গ্রহণ করে উপদেশ। ’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৯)

অন্য আয়াতে আল্লাহ সেসব মানুষকে তিরস্কার করেছেন, যারা কোরআনের মর্মার্থ গভীরভাবে উপলব্ধি করে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি গভীর মনোযোগসহ কোরআন নিয়ে চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ২৪)

আমাদের একটি ত্রুটি হলো আমরা কোরআনের অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করার চেষ্টা করি না। কোরআনের মর্ম উপলব্ধি করার জন্য শুধু অনুবাদ পাঠ করাই যথেষ্ট নয়।

ভাসা ভাসা অনুবাদ করে কোরআন বোঝা এবং তা জীবনে ধারণ করা সম্ভব নয়। এর অর্থ এই নয় যে সবাইকে প্রাজ্ঞ আলেম ও পণ্ডিত হতে হবে। আমার উদ্দেশ্য কোরআনের যেসব বিষয় আমাদের জীবন ও দ্বিনি বিধান-বিধানের সঙ্গে জড়িত তা মনোযোগসহ পাঠ করা এবং তার মর্ম অনুধাবনের চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে সেসব গ্রন্থ সহায়ক হতে পারে যেগুলোতে কোরআনের বিষয়বস্তু লিপিবদ্ধ রয়েছে। কোরআনের অর্থ ও মর্ম বোঝার জন্য শুধু অনুবাদ গ্রন্থের ওপর নির্ভর করা ভুল।

এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো কোনো প্রাজ্ঞ আলেমের সহযোগিতা গ্রহণ করা। তাঁরা যেসব বৈঠকে কোরআনের আলোচনা করেন তাতে অংশগ্রহণ করা। কেননা কোরআনে এমন বহু বিষয় আছে, যা অনুধাবন করতে হলে আরবি ব্যাকরণ, অলংকারশাস্ত্র, শরিয়তের মূলনীতি ও ইসলামী আইন (ফিকহ) সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। এজন্য প্রাজ্ঞ ও আল্লাহভীরু আলেমদের তত্ত্বাবধানে কোরআন পাঠ করা সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ, বিশেষত যেসব বিষয়ে মনে সংশয় ও সন্দেহ জাগে নিজে তার ব্যাখ্যা দাঁড় না করিয়ে আলেমদের কাছে জিজ্ঞাসা করে নেওয়াই শ্রেয়।

কোরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা গ্রন্থ নির্বাচনের সময় লেখকের ধর্মীয় জ্ঞান, শাস্ত্রীয় দক্ষতা ও আল্লাহভীতিকে প্রাধান্য দেওয়া আবশ্যক। বর্তমানে এমন বহু মানুষ কোরআন তরজমা করে থাকে, যাদের আরবি ভাষায় কোনো দক্ষতা নেই। ধর্মীয় জ্ঞানের সীমাও প্রাথিক স্তরের। এদের তরজমা ও তাফসির পরিহার করতে হবে। বরং সেসব বিজ্ঞ আলেমের অনুবাদ গ্রহণ করা আবশ্যক, যাঁদের ভাষাগত দুর্বলতা থাকলেও ধর্মীয় জ্ঞানে সুপণ্ডিত।

ধরুন, দুইজন চিকিৎসকের একজন চিকিৎসাশাস্ত্রে দক্ষ, কিন্তু তাঁদের ভাষাগত দক্ষতা নেই; অপরজনের ভাষা সুন্দর, কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রে খুবই দুর্বল। আপনি কার চিকিৎসা গ্রহণ করবেন? কাকে আপনার জন্য নিরাপদ মনে করবেন? নিশ্চয়ই যিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে দক্ষ। কোরআনের বিষয়টিও অনুরূপ। বিজ্ঞ আলেমরা কোরআনের যেসব অনুবাদ ও তাফসির লিখেছেন, কোরআন অনুধাবনের জন্য সেগুলোই পাঠ করা আবশ্যক। যদিও তাঁদের ভাষা সাহিত্যমান উত্তীর্ণ নয়।

 


 

এই রকম আরও টপিক