সরকার পতন নিয়ে যা বললেন রিজভী

সংগৃহীত ছবি

সরকার পতন নিয়ে যা বললেন রিজভী

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘জনগণের সম্মিলিত যে আওয়াজ, সেই আওয়াজে আমরা সরকার পতনের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। সেই পতন বেশি দূরে নয়। এ কারণে ওবায়দুল কাদের এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা চিৎকার করে গলার জোরে টেলিভিশনের সব আলো নিজেদের দিকে নিয়ে গলা ফাটিয়ে অনর্গল মিথ্যা বলছেন। ’ বুধবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

ক্ষমতায় এডিক্টেড (আসক্ত) আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘকেও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা করছেন বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘গোটা বিশ্বে যেসব সংগঠনগুলো দেশে দেশে মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কাজ করছে— দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে সংস্থাটি গঠিত হয়েছে; সেই জাতিসংঘের সদস্য না হলে বাংলাদেশ যে পূর্ণাঙ্গদেশ, তার কোনো প্রমাণ থাকে না— সেই জাতিসংঘকেও তারা অবজ্ঞা করছে। ’

তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের জাতিসংঘকেও তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য করছেন। তাদের বক্তব্য বিবৃতি ফালতু হিসেবে বিবেচনা করছেন। এটা কি দেশবাসী জানছে না? বিশ্ববাসী জানছে না? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং তাদের সংগঠনগুলো জানছে না? তাদের এত ক্ষমতার উৎস কোথায়— যেখান থেকে তারা এসব কথাবার্তা বলছেন?’

বিএনপির এই মুখপাত্র সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘আসলে যখন মানুষ কোনোকিছুতে এডিক্টেড হয়ে যায়, তখন চারপাশে কে বাবা, কে মা, কে ভাই, কে বোন, কে সন্তান— কাউকেই তারা বুঝতে চায় না।

এডিক্টেড মানুষেরা এ রকমই হয়। যদি তারা মাদকসেবী হয়, তাদের মধ্যে যদি এডিকশন চলে আসে, তারা বাবা মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। মেরে পর্যন্ত ফেলে। আজকে তেমনি ক্ষমতায় এডিক্টেড হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ কারণে তারা শুরু করেছে বি-রাজনীতিকরণের পালা। ’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা, একজন কূটনীতিককে গায়ে হাত তোলার কথা বলে, মারধরের কথা বলে, চড় দেওয়ার কথা বলে।  কোন পর্যায়ে গেছে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বাংলাদেশে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে আপনি গায়ে হাত দেবেন। দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তারা। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এই আওয়ামী লীগ- গুন্ডা পান্ডা রাজনৈতিক নেতা বানিয়ে। ’

রিজভী বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে যেভাবে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা হুমকি ধামকি দিচ্ছে- সে কারণে পিটার হাস নিজের এবং অ্যাম্বাসির কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত বছর রাজধানীর শাহীনবাগে গুম হওয়া নেতাকর্মীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি আটকে হামলা করেছিলেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। পিটার হাস বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলছেন— এটা বলতেই পারেন। ’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘অবরোধ কর্মসূচিতে পূর্বের মতো সারাদেশে চালানো হয়েছে প্রবল পুলিশি আক্রমণ। পুলিশ যেন একেবারে ধাবমান হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গ্রেপ্তারের জন্য।  নেতাকর্মীদের ধরা না পেলে মা-বাবা-ভাই বা পরিবারের অন্য লোকগুলোকে নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। ভাঙচুর করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র। ’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সদস্য আলামিনকে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। এখন তাকে কোথায় রেখেছে, কীভাবে রেখেছে— আমরা জানি না। এই পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দারা এই কাজগুলো করছে। একটি সামগ্রিক নৈরাজ্য ভীতির পরিবেশ তৈরি করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে রাস্তায় নামতে না পারে। ’ 

আমাদের ঠিকানা হয় কারাগার না হয় রাজপথ  মন্তব্য করে বিএনপির এই শীর্ষনেতা আরও বলেন, ‘সকল প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা বুকে বুলেট বরণ করে নিয়ে রাজপথে দাঁড়াচ্ছেন। রাজপথে তারা দাঁড়াবে যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য দেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরে না আসে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না আসা পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে। আমাদের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমাদের ঠিকানা হয় কারাগার না হয় রাজপথ। এর মাঝখানে আমাদের কিছু নেই। আমাদের নিয়ে যেতে পারে কারাগারে নানাভাবে আঘাত করতে পারে অত্যাচার করতে পারে আমরা সবকিছু বরণ করেই আমাদের উদ্বেল অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষ তাদের পাওনার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছে। তাদের প্রতিও সরকারের বিদ্বেষ ধরা পড়লো। তাদের প্রতিও মারমুখী হয়ে উঠছে সরকার। কয়েকদিন আগে একজন শ্রমিক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে একজন নারী শ্রমিককেউ হত্যা করা হয়েছে। কেন আজকে পুলিশ উৎসাহিত? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উৎসাহিত? কারণ এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তির ওপরে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, রক্তাক্ত করা হয়েছে; তাতে সরকারের যে আশকারা তারা পাচ্ছে তাতে তারা আরও উৎসাহিত হয়ে পড়েছে। ’

news24bd.tv/আইএএম