‘মুহাম্মদ আলী বক্সার না হলে ইমাম হতেন’

এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ আলীর মেয়ে মারিয়াম আলী

‘মুহাম্মদ আলী বক্সার না হলে ইমাম হতেন’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

মুহাম্মদ আলী বক্সার না হলে একজন ইমাম হতেন বলে জানিয়েছেন তারই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় মরহুম বক্সার মুহাম্মদ আলীর মেয়ে মারিয়াম আলী।

১০ নভেম্বর ‘Islamic Speakers Bureau of Atlanta’-এর বার্ষিক সভায় মারিয়াম আলী এসব কথা বলেন। মারিয়াম আলী একজন সমাজকর্মী হিসেবে তরুণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য অলাভজনক সংস্থা ‘DMTL’ প্রতিষ্ঠা করেন।

মরিয়াম বলেন, তার বাবা জীবিত থাকলে বর্তমানে আমেরিকান সমাজের মধ্যকার বিভক্তি দেখে মোটেও অবাক হতেন না।

বর্ণবাদ কোনো নতুন কিছু নয়। একদল আরেক দলের চেয়ে বড় এই ধারণা নতুন কোনো আবিষ্কার নয়।

তার বাবা ঠিক এরকম বিশ্বেই বসবাস করতেন যেখানে তিনি প্রতিনিয়ত এসব ঘৃণামূলক আক্রমণের শিকার হতেন।

সৃষ্টিকর্তা আপনার কর্ম দ্বারাই আপনার বিচার করবেন উল্লেখ করে মুহাম্মদ আলীর বড় মেয়ে বলেন, ‘তিনি (মোহাম্মদ আলী) শুধু অপ্রতিরোধ্যই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক মানুষ।

‘তিনি (মুহাম্মদ আলী) জীবিত থাকলে বলতেন, জনগণকে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং এভাবে তাদের জীবনকে আরো সুন্দর করা যায়। তিনি শুধু সৃষ্টিকর্তাকেই ভয় পাওয়ার জন্য আহ্বান জানাতেন এছাড়া অন্য কাউকে নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও নয়। কোনোভাবেই শ্বেতাঙ্গদের বড়ত্ব মেনে নিও না। তারা আমাদের চাইতে শক্তিশালী নয়’- বলেন মরিয়াম।

মারিয়াম আলী জানান, তিনি এবং তার বাবা মুহাম্মদ আলী সবসময় জীবন এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে গভীর আলোচনা করতেন। তার বাবার সঙ্গে তার এসব আলোচনা এখন তার কাছে গুপ্তধনের মতোই দামি বলে মনে হয়।

বাবা মুহাম্মদ আলীর প্রশংসা করে মারিয়াম আলী বলেন, ‘খুবই মজার একজন মানুষ ছিলেন তিনি, যেমনি স্পষ্টবাদী তেমনি দাতা, তিনি গভীরভাবে আধ্যাত্মিক একজন মানুষ ছিলেন। ’

মারিয়াম আলী বলেন, ‘পার্কিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে মুহাম্মদ আলী তার জীবনের শেষ কয়েক বছরে বাকরুদ্ধ ছিলেন। যখন কথা বলতে পারতেন তিনি তার প্রতিবাদের ভাষার মাধ্যমে অনেক কিছুই করেছিলেন। ’

‘একজন ক্রীড়াবিদ থেকে একজন আধ্যাত্মিক মানুষে পরিণত হওয়া নিয়ে তিনি লোকজনের সমালোচনাকে গুরুত্ব দিতেন না। তিনি শুধু সঠিক কাজটাই করতেন। ’

মুহাম্মদ আলী জানতেন বিশ্বের সকল মানুষ তাকে ভালোবাসে। তিনি বলেছিলেন- ‘আমি তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে আছি, তাহলে কেন আমি আমার ধর্মীয় বিশ্বাসে আমি সৎ থাকব না?’

একদিন রাতের বেলা মারিয়াম আলী তার বাবা মুহাম্মদ আলীর সঙ্গে গাড়ি করে কোথাও যাচ্ছিলেন। তখন তিনি হঠাৎ করেই দেখতে পেলেন দুজন লোকের মধ্যে তুমুল মারামারি হচ্ছে। মুহাম্মদ আলী তাদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তিনি সত্যিকারের মুহাম্মদ আলীর মতোই কথা বলা শুরু করে দিলেন।

তিনি তাদের জানালেন, তিনিই মুহাম্মদ আলী, দ্যা গ্রেটেস্ট। তিনি তার বাহু উঁচু করলেন এবং বক্সিং খেলার মতো করে ভঙ্গি করলেন। তিনি তাদের বললেন, তারা তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায় কিনা। কিছু সময় পরেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়ে গেল ঝগড়ায় লিপ্ত দুজন স্বাভাবিক হয়ে গেল। তারা  মুহাম্মদ আলীর সঙ্গে কৌতুকে মেতে উঠেছিল।

মারিয়াম আলী বলেন, ‘যদি তিনি বক্সার না হতেন তবে আমার মতে তিনি একজন ইমাম হতেন। তিনি মানুষের জন্য নিজেকে অনেক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির ঠেলে দিয়েছিলেন এবং তিনি এরকমই ছিলেন।

তিনি বিশ্বাস করতেন, সকলের জীবনই গুরুত্বপূর্ণ।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর