সিরাজগঞ্জে মাছের অভাবে শুটকি উৎপাদন ব্যাহত

সিরাজগঞ্জে মাছের অভাবে শুটকি উৎপাদন ব্যাহত

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ:

মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের চলনবিলে চলছে শুটকি উৎপাদন। তবে দুয়ারী, সুতি ও কারেন্ট জাল মা মাছ নিধন করায় মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় শুটকির উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শুটকি ব্যবসায়ীরা। তবে মৎস্য বিভাগ মাছের উৎপাদন কম হচ্ছে স্বীকার করে বলছেন, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চলনবিলে অবৈধ জাল দিয়ে শিকার বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, চলবিলের মিঠা পানির মাছ দিয়ে উৎপাদিত শুটকি ভাল মানের হওয়ায় এর সুনাম দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুম শুটকি উৎপাদনকে ঘিরে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে শুটকির চাতাল। বিভিন্ন মৎস্য আড়ত ও জেলেদের কাছ থেকে নানা প্রজাতির মাছ কমমূল্যে কিনে চাতালে তৈরি করা হয় শুটকি। কিন্তু বিগত বছরের চেয়ে এ বছর চলনবিলে মাছের উৎপাদন কম হওয়ায় শুটকি উৎপাদনও কমে গেছে।

 

শুটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুয়ারী, সুতি কারেন্টে জাল মা মাছ নিধনসহ অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় করায় চলনবিলে মাছ কমে গেছে। এ কারণে চরা দামের মাছ কিনে শুটকি উৎপাদন করতে গিয়ে লোকসানে পড়ে অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে একদিকে শুটকির পরিমাণ কমে গেছে অন্যদিকে শুটকির সাথে জড়িতরাও বেকার হয়ে পড়ছে।

শুটকির চাতাল ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর জানান, সিরাজগঞ্জের চলনবিলের মিঠা পানির পানির পুঁটি, খৈলসা, চান্দা, মলা, ইচা, টেংড়া, গুচি, ক্যাকিলা, টাকি, শোল ও বোয়াল মাছসহ বিভিন্ন প্রকারের শুটকি উৎপাদন করা হয়। ২০০ থেকে ১৫শ টাকায় কেজি দরে শুটকি বিক্রয় করা হয়। শুটকিগুলো প্রথমে সৈয়দপুরে আড়তে দেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বাইরেও বিক্রি হয়ে থাকে।

শুঁটকির ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম, দেলবার হোসেন ও আলম জানান, চলনবিলের মহিষলুটি মৎস্য আড়ত ঘিরে আশপাশে ২৫টি শুঁটকির চাতাল ছিল। এবছর মাত্র ৫টি চাতালে শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছের অভাবে

ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছেন প্রায় ২০ জন ব্যবসায়ী। তারা জানান, প্রতিদিন একটি শুঁটকির চাতালে ৩শ মণ মাছের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজার ও মৎস্য আড়ত ঘুরে ৩০-৫০ মণের বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে শুটকি উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ব্যবসায়ী নান্নু হোসেন জানান, বর্ষার শুরুতেই সুতি, দুয়ারি ও কারেন্ট জাল দিয়ে মা মাছ নিধন করার ফলে মাছ উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে মাছ পাওয়া দুষ্করকর হয়ে পড়ায় শুটকি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মাছ নিধন বন্ধসহ অপরিকল্পিত পুকুর খননের বন্ধের দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শুটকি উৎপাদনের সাথে জড়িত শ্রমিক আমেনা খাতুন, কমেলা খাতুন, জোসনা পারভিন, চম্পা পারভিন ও সাজেদা বেগম জানান, বর্ষা মৌসুমে শুঁটকির চাতালের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এ বছর মাছের অভাবে অনেকের কর্মহীন দিন কাটছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, চলবিনের মিঠা পানির মাছ দিয়ে উৎপাদিত শুটকি ভাল মানের হওয়ায় দেশ ও বিদেশে শুটকির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চলতি বছর ২৫০শত মেট্রিকটন শুটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে নানা কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়ে বলেন, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চলনবিলে অবৈধ জাল দিয়ে মা মাছ শিকার বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আগামী বছর থেকে শুটকি ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

news24bd.tv/কেআই