রূপগঞ্জে ব্যবধান গড়ে দেবেন তরুণ ভোটাররা

সংগৃহীত ছবি

রূপগঞ্জে ব্যবধান গড়ে দেবেন তরুণ ভোটাররা

অনলাইন ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড় ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন নতুন ও তরুণ ভোটাররা। জীবনে প্রথম ভোট দিতে যাচ্ছেন, এমন ভোটাররা বলেছেন, তাঁরা দল বা প্রতীক বিবেচনায় না নিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চান।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রূপগঞ্জ আসনে এবার ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮৬ হাজার ১২। গতবার এই আসনে ভোটার ছিলেন তিন লাখ ৪৯ হাজার ৭৯০ জন।

এবার ভোটার বেড়েছে ৩৬ হাজার ২২২ জন। তাঁদের প্রায় সবাই নতুন ভোটার।

এই আসনের ভোটারদের নিয়ে একটি জারিপ চালিয়েছে জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ। জরিপে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে জরিপে অংশগ্রহণ করা ১১ হাজার ১৭৫ জনের মধ্যে ৯ হাজার ৫০৬ জন বা ৮৫.০৭ শতাংশ ভোটার যোগ্যতার ভিত্তিতে ভোট দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

জরিপে দেখা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর তুলনায় এবারের ভোটযুদ্ধে তরুণ-তরুণীর কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন পর পর তিনবারের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া।

জানা যায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে ভয়ভীতি ও ইভিএমের গোলযোগে অনেকে ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছিলেন তখনকার নতুন ভোটাররা। কিন্তু দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচন হবে ব্যালটে, ফলে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না বিএনপি। ফলে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।

তাই বেশির ভাগ আসনে নৌকার পাশাপাশি আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা লড়ছেন, যাঁরা সবাই নিজেদের দিকে ভোট চাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন তরুণ ও নবীন ভোটাররা। তা ছাড়া গত নির্বাচনে যাঁরা প্রথমবার ভোটার ছিলেন, সেই তরুণরাও এবার ভোটে উৎসাহ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এর আগে সমসাময়িক বাংলাদেশে যুবসমাজের অবস্থান, ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে) যৌথভাবে ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে’ শীর্ষক এক জরিপে দেখা যায়, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ৭৪ শতাংশ তরুণ-তরুণী। দেশের আটটি বিভাগে সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে পরিচালনা করা হয়।

জরিপে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, সুশাসনসহ নানা বিষয় নিয়ে তরুণ-তরুণীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। জরিপের ফলাফলে তাঁদের আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ—উভয়ই সমানভাবে ওঠে। জরিপে তরুণদের চোখে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি (৮৮.৮ শতাংশ)।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার সাবিহা ডালি বলেন, ‘অবশ্যই যে প্রার্থী তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে মনে করছি, তাঁকেই আমি ভোট দেব। আমাদের রূপগঞ্জকে অনেকেই কারখানার এলাকা বলে। কিন্তু আমাদের পাড়া-প্রতিবেশীরা সেখানে শ্রমিকের কাজ করেন। অফিসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সংখ্যা খুব কম। ’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থার বেহালের কারণে আমাদের মধ্যে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আমাদের মানসম্পন্ন স্কুল-কলেজের সংকট রয়েছে। আমাদের সংসদ সদস্য টানা তিনবারের নির্বাচিত। তিনি সরকারের মন্ত্রীও। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। বরং মাদক, সন্ত্রাস ও ভূমি দখলের পরিমাণ বেড়েছে। ’

যাত্রামুড়ার লায়ন মো. মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একসময় বেশির ভাগ মানুষ দল ও মার্কা দেখে ভোট দিত। এটি ঠিক নয়। আমরা এমন কাউকে নির্বাচিত করতে চাই না, যার আসলে এমপি হওয়ার যোগ্যতাই নেই। এবার যোগ্যতার বিবেচনায় ভোট দেওয়া হবে। মাদক, সন্ত্রাস ও ভূমি দখলের সঙ্গে জড়িত এমন কাউকে আমরা ভোট দেব না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভোট আমি দিতে পারলে পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দেব। রূপগঞ্জের সন্তানকেই ভোট দেব। ’

তারাব পৌরসভার বাসিন্দা হাজি আয়েত আলী ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. হোসাইন তারিক বলেন, ‘মানসম্মত পড়ালেখা করতে আমাদের রাজধানী শহরে যেতে হয়। রাজধানীর পাশে থেকেও আমরা অবহেলিত। আমার সহপাঠীদের অনেকে এখন মাদক ব্যবসা, বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রমেও জড়িয়েছে। তবে তাদের মন্তব্য, নেতাদের দ্বারাই তারা প্রভাবিত হয়েছে। আমি তাদের ভোট দেব না। ’

কারা তাদের প্রভাবিত করেছে? এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, ‘যদি ভোট দিতে পারি, তবে বুঝতে পারবেন। এখন বলা যাবে না। ’

news24bd.tv/আইএএম