বাম্পার ফলনে লাভের আশায় অপরিপক্ক আলু তুলতে ব্যস্ত রংপুরের কৃষক

আলু উৎপাদনে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে রংপুরে।

বাম্পার ফলনে লাভের আশায় অপরিপক্ক আলু তুলতে ব্যস্ত রংপুরের কৃষক

রংপুর প্রতিনিধি

আলু উৎপাদনে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষ হয়েছে রংপুরে। আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত চাষিরা। মাঝে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কা চেপে বসলেও এখন পর্যন্ত কোথাও তেমন ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।

আলুর মৌসুমে দাম বেশি থাকায় সময়ের আগেই অনেকে অপরিপক্ক আলু তুলছেন এবং ক্ষেতেই বিক্রি করে দিচ্ছেন।

বর্তমানে জমি থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। তবে অপরিপক্ক আলু তোলার কারণে হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু সংরক্ষণ নিয়ে সংশয় দেখছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় চলতি বছর ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। এ বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

সে হিসাবে ২ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেড়েছে। এ বছর রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৭ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছিল। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আলু তোলা হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির।

আলু চাষি লিমন মিয়া বলেন, যার আলু যত আগে উঠবে সেই কৃষক তত বেশি দাম পাবেন। তাই সবাই লাভের আশায় আগেই আলু তুলে বিক্রি করছি।

আলু চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর আলু ক্ষেত থেকে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করে পরবর্তীতে ৫০ টাকা কেজি দরে কিনে খাওয়া হয়েছে। সেই তুলনায় এবারে আলুর ক্ষেতেই ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যাচ্ছে। যার কারণে একটু অপরিপক্ক থাকলেও আলু তুলে বিক্রি করছি। লাভ হচ্ছে। লোকসানের সম্ভাবনা নেই।

সদ্যপুস্কনি এলাকার আলু চাষি রবিউল মোল্লা বলেন, আলুর দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে, তবে গত বারের তুলনায় এবারে খরচও বাড়ছে। আলু তোলার শ্রমিকরা এবারে বেশি টাকা নিচ্ছেন। তারপরও লাভ থাকবে।

আলু শ্রমিক আকুল মিয়া, রনি, ফুলমিয়া বলেন, আলুর মৌসুমে আলু তোলায় কিছু আয় হয়। আলু তুলতে গেলে আলুও পাওয়া যায়। তবে এবারে আগাম আলু তোলায় বেশিদিন আলু তোলার কাজ করা যাবে।

আলু ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বলেন, তিনি নিজে আলু চাষ করেননি। তবে প্রতিবছরের মতো এবারেও তিনি ৩৩ শতক জমির আলু আগাম কিনে নিয়েছেন ৫৬ হাজার টাকায়। আলুর বর্তমান বাজার অনুযায়ী আলু তোলার খরচসহ ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাগবে। তাতে লোকসান হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে আলু চাষি এই পরিমাণ জমিতে লাভ করেছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

আলু হিমাগারের মালিক আমানুল্লাহ জানান, অপরিপক্ক আলু যেভাবে তোলা হচ্ছে, তাতে হিমাগারে আলু পাওয়া যাবে না। আর হিমাগারে আলু না রাখলে আলুর দাম আগামীতে আরও বাড়বে।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে দেশি ও উচ্চফলনশীল দুই জাতের আলুই চাষ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি আলুর গড় ফলন ১১ টন। আলুর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ২০ টন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকটি উচ্চফলনশীল আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে বিগত কয়েক বছরে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল জাতের আলু চাষ করলে ফলন বাড়বে এবং উৎপাদন খরচ কমে আসবে। যা দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।

তিনি আরও বলেন, রংপুরে অনেক স্থানে লাভের আশায় আলু চাষিরা অপরিপক্ক আলু তুলছেন। যদিও আমরা চাষিদের এ বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।

news24bd.tv/ab

এই রকম আরও টপিক