বাগেরহাটে সন্ত্রাসী হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত

বাগেরহাটে সন্ত্রাসী হামলায় আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে ভোর রাতে সন্ত্রাসীদের হামলায় আব্দুস সালাম সরদার (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে ৪টি বসতবাড়িতে হামলা ও বাড়ি ভাঙচুরের সময় নারীসহ আরও ১০ জন আহত হয়েছে। বুধবার ভোর রাতে ছোট কুমারখালী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে।  

নিহত সালাম সরদার ছোট কুমারখালী গ্রামের মৃত এরফান উদ্দিন সরদারের ছেলে।

আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মন্টু মোল্লা ও জাফর শেখ নামে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।  

নিহত আ. সালাম সরদার বিগত ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেতা এনায়েত শিকদার হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন।

ওই মামলাটি এখন বাগেরহাট জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধে প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগ কর্মী সালাম সরদারকে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।  

আহতদের মধ্যে ৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন, মোরেলগঞ্জে গড়ঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী শামীম সরদার (২৪), তার স্ত্রী জান্নাতি বেগম (১৯), পিতা এসমাইল সরদার (৫০), রাকিব সরদার (১৪), মোজাম সরদার (৫০), লোকমান সরদার (৪০) ও মঞ্জু বেগম (৩০)। আহত অন্যদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।  

নিহতের স্ত্রী রেক্সনা বেগম দাবি করেন, রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিগত ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচন চলাকালে জামায়াত বিএনপির কর্মীদের হাতে আওয়ামী লীগ কর্মী এনায়েত সিকদার নিহত হন। বাগেরহাট জেলা ও দায়েরা জজ আদালতে বিচারাধীন ওই মামলার সাক্ষী ছিলেন তার স্বামী সালাম সরদার। সে কারণেই এই  হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, রাত ৩টার দিকে জামায়াত-বিএনপি ক্যাতার কবির মোল্লার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লোহার রড, হাতুড়ি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে দরজা জানালা ভাংচুর চালায়। প্রথমে লোকমান সরদারের ঘরে ঢুকে তাকে মারপিট শুরু করে। লোকমানের চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে তার ছোট ভাই সালাম সরদার ছুটে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খালে ফেলে দেয়।  

এ সময়ে পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বাইরে বের হলে সন্ত্রাসীরা তাদেরও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করাসহ ৪টি বসতবাড়িতে ভাংচুর করে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা চলে যাবার সময় ৪টি মিনি গ্যাস সিলিন্ডার, বেশকিছু লাঠি ও ধারালো অস্ত্র এসব বাড়িতে ফেলে রেখে যায়। পরে পরিবারের অন্য সদস্যরা গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সালাম সরদারকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ১০ জনের মধ্যে ৭ জনকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলাম জানায়, সকালে খবর পেয়ে তিনিসহ মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, থানার ওসি কেএম আজিজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  

হামলাকারীদের আটকে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান শুরু করেছে। দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মন্টু মোল্লা ও জাফর শেখ নামে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। নিহত সালাম সরদারের মরদেহ ময়না তদন্ত দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিরোধের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।  


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল)