সাজা নাকি সাজা পাওয়ার ভয়, কোনটি দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত

সাজা নাকি সাজা পাওয়ার ভয়, কোনটি দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত

আনোয়ার সাদী

আমরা সবাই চাইছি ধর্ষকদের সঙ্গে এমন কিছু করা হোক, যা দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ হয়ে থাকবে। সেই উাদাহরণ মনে রেখে কেউ ধর্ষণের মতো কোনো অপরাধ করতে চাইবে না। সহজ কথায় বলতে গেলে, ধর্ষকদের সঙ্গে এমন কিছু করা হোক যাতে তার পরিণতি ভয়াবহ খারাপ হয়।  

আশা করা হয়, একই অপরাধ করলে যে কারো একই পরিণতি হতে পারে, সেই ভয়ে মানুষ ধর্ষণ করা থেকে বিরত থাকবে।

এটা সাজার একটা দর্শন। একজনকে কঠোর সাজা দিয়ে বাকীদেরকে একই ধরনের অপরাধ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। এই চেষ্টা এখনো দুনিয়া জুড়েই কাজে দিচ্ছে।

কাজে দিচ্ছে কারণ অন্যকে অনুকরণ করা বা অনুসরণ করা বা অন্যকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়ার ইচ্ছা মানুষের ভেতরেই আছে ।

জন্মের পর থেকে অন্যকে দেখে দেখে শিশু অনেক কিছু শেখে। কাজেই মানুষের ভেতরে থাকা একটা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ থেকে বিরত রাখার যে সূত্র বা কৌশল বা পদ্ধতি মানুষ বের করেছে তা কাজে না লাগার কথা না।  


আরও পড়ুন: সাজা মৃত্যুদণ্ড করায় ধর্ষণ কমে আসবে: আইনমন্ত্রী


এখন প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্র দৃষ্টান্তমূলক সাজা বলতে কী বূঝবে? বা রাষ্ট্র কী দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেবে না কি এমন দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ তৈরি করবে, যা দেখে মানুষ অপরাধ করা থেকে বিরত থাকবে? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং ক্রমাগত ধর্ষণ বৃদ্ধি ও এর ফলে তৈরি হওয়া আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড করার উদ্যোগের এই সময়ে এই প্রশ্ন নিয়ে অনেকেই আলোচনা করছেন।  

আইনের জগতে মৃত্যূদণ্ডের চেয়ে বড় কোনো সাজা নেই। রাষ্ট্রের হাতেও এরচেয়ে বড় কেনো সাজা নেই। মৃত্যুদণ্ড মানে শুধু পৃথিবী থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া নয়। এর সঙ্গে আরো অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। প্রথমে রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হয়, কোনো একজন মানুষ প্রকৃতই মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো অপরাধ করেছে । বিচারের এই প্রক্রিয়ায় অপরাধী বুঝতে পারে, সে কীভাবে আইন লঙ্ঘন করেছে । যে আইনের ওপর ভিত্তি করে সভ্যতা টিকে থাকে তা সে কীভাবে নষ্ট করেছে । যে সব আচরণ মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে, সে সব আচরণ করেতে সে কখন কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এসব বিষয়গুলো অন্য সাজা পা্ওয়ার ক্ষেত্রেও হয়।  

মৃত্যুদণ্ড পা্ওয়া আসামিকে রাখা হয় কনডেম সেলে । সেখানে সে একা থাকে। মানুষ যখন একা থাকে, তখন সে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলে, বোঝাপড়া করে। নিজের অপরাধ তখন তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। এটাও এক ধরনের সাজা।  

যাহোক, কথা হলো আইনের কাছে এবং রাষ্ট্রের কাছে মৃত্যুদণ্ড সবচেয়ে বড় সাজা। ফলে, সাধারণ মানুষ দুষ্টান্তমূলক সাজা বলতে মৃত্যুদণ্ডকে বুঝে। ফলে, ধর্ষণ বন্ধ করার আন্দোলন তাদের কাছে ধর্ষককে মৃত্যূদণ্ড দেওয়ার দাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকার তাদের অনুভুতির প্রতি সম্মান দেখিয়েছে, ধর্ষণের সাজার মেয়াদ বাড়ছে।  

অনেকে আবার এই সাজা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে । তাদের আশঙ্কা এই আইনের অপব্যবহার হতে পারে। কেউ কেউ অবশ্য এই মৃত্যুদণ্ডের রাজনৈতিক ব্যবহারের আশঙ্কাও করেছেন। অনেকেই বলছেন, সাজা না বাড়িয়ে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধ ঠেকানো যায়।  

যাহোক, আমার কথা ভিন্ন। আমি বলতে চাই, দৃষ্টান্ত বলতে আমরা কী বুঝবো? দৃষ্টান্ত মানে কী মৃত্যুদণ্ড, কঠোর সাজা নাকি অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না তা নিশ্চিত করা?
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও অপরাধ হয়। সেখানে অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না এমন একটা ধারণা সমাজে প্রচলিত আছে। এই ধারণা অপরাধের মাত্রা কমায় বলেই অনেকে মনে করেন।  

ধর্ষণের মতো অপরাধকে সবাই ঘৃনার চোখে দেখে। এই ধারনা সমাজে প্রচলিত আছে । ধর্ষণ করলে পার পা্ওয়া যাবে না, এই ধারনা এখন সবার মনে গেঁথে দেওয়া দরকার। সংশ্লিষ্টরা এই উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করি।  

আনোয়ার সাদী, সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজটোয়েন্টিফোর।

news24bd.tv নাজিম