প্রসঙ্গ : ভাস্কর্য ও মূর্তি

প্রসঙ্গ : ভাস্কর্য ও মূর্তি

জাকির তালুকদার

ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য দেখানোর এত প্রয়াসের কোনো দরকার নেই। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে শত শত ভাস্কর্য আছে, সেসব উদাহরণও আমাদের দেবার কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না।

হেফাজতের নেতারা দাবি করছেন যে তারা কোরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোনো উদাহরণ গ্রহণ করতে রাজি না।

আমার সোজা উত্তর-- বাংলাদেশ কোরআন-সুন্নাহর আইন দ্বারা পরিচালিত হয় না।

পরিচালিত হয় সংবিধান এবং পেনাল কোড দিয়ে। এখানে চোরের শাস্তি হাতকাটা নয়। ব্যভিচারের শাস্তি অর্ধেক মাটিতে পুঁতে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শব্দটি এই সরকারের অন্যায় ব্যবহারে খেলো হয়ে গেছে।
তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিই ছিল। কারো কারো মনে এবং জীবনাচরণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত হয় সবসময়।  

আরও পড়ুন: 


করোনায় ঢাবির আরেক সাবেক অধ্যাপকের মৃত্যু

একটু উদার হই

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শোকের দিন হওয়ার কথা আজ


সেই চেতনা এবং বাংলাদেশের আইন অনুসারে ভাস্কর্য নির্মাণ করা কোনো অন্যায় নয়। কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা দেশ চালাতে গেলে আপনাদের তা করতে হবে নিজেরা ক্ষমতায় গিয়ে। চোরাগোপ্তা হত্যা, ফতোয়াবাজি করা, মাঝে মাঝে একটা-দুইটা সমাবেশ করার বদলে পারলে নিজেরা ক্ষমতায় যান। তবে নিজেরা ক্ষমতায় গেলেই যে কোরআন-সুন্নাহর আইন চালাতে পারবেন তারও নিশ্চয়তা নেই। তুরস্কে এরদোয়ান এতদিন ক্ষমতায় থেকেও তা চালু করেননি।  

বস্তুত চার খলিফার মোট সাড়ে একত্রিশ বছরের খেলাফতের পরে মুসলিম বিশ্ব থেকে কোরআন-সুন্নাহর আইন উঠে গেছে। শত শত বছর মুসলিম শাসকরা অর্ধেক পৃথিবী শাসন করলেও কেউ-ই কোরআন-সুন্নাহর আইন পুনরায় প্রবর্তন করেননি। কেন করেননি, সে প্রশ্নের উত্তর নিজেরা পারলে খুঁজে বের করুন। আমি বললে দিলে চোট লাগবে আপনাদের।

বাংলাদেশকে কি আপনারা তাহলে দার-উল-হারব ঘোষণা করবেন?

ব্রিটিশ আমলে এক শ্রেণীর ধর্মীয় নেতা ভারতবর্ষকে দার-উল-হারব ঘোষণা করে মক্কায় চলে গিয়েছিলেন। মক্কাই তাদের কাছে তখন একমাত্র দার-উল-ইসলাম ছিল। কিন্তু তাদের ঘোষণাকে ভুল আখ্যা দিয়েছিলেন মক্কার চার মজহাবের চার প্রধান মুফতি। তারা জানিয়েছিলেন, যে দেশে নামাজ-রোজাসহ ধর্মীয় উপাসনা করতে কোনো বাধা নেই, যে দেশে মুসলমানদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয় না, যে দেশে মুসলমানদের জুম্মা-জমায়েতে কোনো বাধা দেওয়া হয় না, সেই দেশকে দার-উল-হারব বলা যাবে না।

বাংলাদেশসহ কোনো মুসলিমপ্রধান দেশেই কোরআন-সুন্নাহর আইন প্রচলিত নেই। কিন্তু কোনো দেশই দার-উল-হারব নয়।

ভাস্কর্য নিয়ে নয়। আন্দোলন করুন বাংলাদেশের লুটেরাদের বিরুদ্ধে, দেশের তেল-গ্যাস সম্পদকে যারা জনগণের কাজে না লাগিয়ে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয় তাদের বিরুদ্ধে, সুন্দরবনকে যারা ধ্বংস করে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে।

আন্দোলন করুন দেশের সিংহভাগ মানুষকে যারা গরিব করে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে। এটাই অনেক বড় জেহাদ। কারণ হাদিসে আছে-- দারিদ্র্য কুফরে নিক্ষেপ করতে পারে মানুষকে।

 লেখক, জাকির তালুকদার

news24bd.tv কামরুল