মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনটা দারুণ বর্ণিল

শরিফুল হাসান

মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনটা দারুণ বর্ণিল

শরিফুল হাসান

চট্টগ্রামের প্রাণপুরুষ ছিলেন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আমাদের যাদের শৈশব কৈশোর চট্টগ্রামে কেটেছে তাদের কাছে মহিউদ্দিন চৌধুরী একটা মহিরুহ।

বিএনপি তখন ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে।

আমরা সেই সময় দেখেছি, ১৯৯৪ সালে প্রচণ্ড প্রতাপে তিনি মেয়র নির্বাচিত হলেন। এরপর চট্টগ্রামকে পরিনত করেন নান্দনিক এক শহরে। আমি তখন প্রাইমারি  স্কুল শেষে করে হাইস্কুলে। চট্টগ্রাম শহরটা ঘুরলে আমার কাছে ছবির শহর মনে হতো।
কী পরিচ্ছন্ন এক শহর।  

মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনটা দারুণ বর্ণিল। ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম।  

ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। সেই সময় গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। কিন্তু শত নির্যাতনের মুখেও নতি স্বীকার করেননি। পরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে উত্তর প্রদেশের তান্ডুয়া সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্কোয়াডের কমান্ডার নিযুক্ত হন মহিউদ্দিন। এরপর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন।   

বঙ্গবন্ধু ভীষণ ভালোবাসতেন মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। যখুনি তিনি চট্টগ্রামে আসতেন ট্রেন থেকে নেমে প্রথমেই জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমার মহিউদ্দিন কই?’ 


আরও পড়ুন:

সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

ফাইনাল না খেলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে সাকিব

'যুক্তরাষ্ট্র সাইবার হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হলেই রাশিয়ার ঘাড়ে দোষ চাপায়'

বোমা হামলায় কাবুলের ডেপুটি গভর্নর নিহত


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাম‌রিক আই‌নে সাজা ভো‌গের পর তি‌নি ভার‌তে চ‌লে যান। প‌রিকল্পনা ক‌রেন সশস্ত্র প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার। ১৯৮১ সা‌লে শেখ হা‌সিনা দে‌শে ফির‌লে যি‌নি চট্টগ্রা‌মের দল‌ীয় কার্যালয়‌কে দখলমুক্ত ক‌রে শেখ হা‌সিনা‌কে অ‌ফিস বু‌ঝি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি‌লেন।  


ম‌হিউ‌দ্দিন চৌধুরীর পুরো জীবনটাই তার বিপ্ল‌বের। ত‌বে সব‌চে‌য়ে বড় প‌রিচয় তি‌নি সারাজীবন মানবতাবাদী ছি‌লেন। মানুষ ছি‌লো তার ধ্যান জ্ঞান। বি‌শেষ ক‌রে চট্টলার মানুষ।  

২০০৫ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আবার তিনি যখন মেয়র নির্বাচন করবেন তার আগে ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। আমি তখন বিডিনউজে। সেই সময়ে বিডিনিউজের বার্তা সম্পাদক বর্তমানে সানের সম্পাদক এনাম ভাই সবার সাথে তাঁর কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি তখন বললাম আমি চট্টগ্রামে বড় হয়েছি ভীষণ খুশি হলেন। চট্টগ্রামর মানুষকে তিনি শুধু তার ভোটার মনে করতেন না, মনে করতেন নিজের স্বজন বা সন্তান।  

আমার মনে আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা বছর কয়েক আগে তাকে মন্ত্রী কর‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লেন। কিন্তু তি‌নি ভা‌লোবাসার চট্টগ্রাম ছাড়‌তে রা‌জি হন‌নি। গত বছর নি‌জের জন্ম‌দি‌নে অসুস্থ অবস্থায় ব‌লে‌ছি‌লেন, টিল ডেথ, আই উইল ডু ফর দ্য পিপল অব চিটাগং, চট্টগ্রামের মানুষকে আমি ভালোবাসি।  

আসলেই তাই হয়েছে। আফসোস এমন একজন নেতা ২০০৯ সালের নির্বাচনে হারেন শুধুমাত্র দলীয় কোন্দলে। এরপর চট্টগ্রামের অবস্থা কী হয়, সেখানকার রাস্তাঘাটের কী দশা সবাই এখন জানেন। আমার মনে হয় ওই যে ক্ষমতা হারানো, দলীয় কোন্দল এসবই তাকে অসুস্থ করে তোলে। ২০১৭ সালের এই দিনে তিনি মারা যান। তবে কীর্তিমানরা আসলে কখনোই মরে না।

আমি নি‌শ্চিত চট্টগ্রাম যতোদিন থাকবে মহিউদ্দিন চোধুরীর নাম মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।   আপনি আজীবন হয়ে থাকবেন চট্টলবীর, চট্টলশার্দুল কিংবা চট্টলপিতা। চশমা‌হিল থে‌কে শুরু ক‌রে লাল‌দিঘী, চট্টগ্রা‌মের প্র‌তি‌টি ইঞ্চি আপনা‌কে মিস কর‌বে। কারণ আপনি ছিলেন জনতার মেয়র। আল্লাহ আপনাকে বেহেশতে নিক।

শরিফুল হাসান, উন্নয়ন কর্মী, (ফেসবুক থেকে নেয়া)

news24bd.tv নাজিম