শিশুকাল থেকেই স্বপ্ন আমার সঙ্গী

শিশুকাল থেকেই স্বপ্ন আমার সঙ্গী

Other

অনেকদিন কোনো স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন দেখা যেনো ভুলেই যাচ্ছি! স্বপ্ন না থাকলে বাঁচব কিভাবে! আমারতো স্বপ্ন ছাড়া কিছু নাই। প্রকৃত স্বপ্নবাজ যদি কেউ থাকে সেটা হচ্ছি আমি। আমি স্বপ্ন দেখি কারণ স্বপ্ন দেখতে পয়সা লাগে না, কারো অনুমতি লাগে না, কেউ জানতেও পারে না।

আমি একলা একলা স্বপ্ন দেখি। শিশুকাল থেকেই আমি স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি।  

আমার যখন কিছুই ছিল না তখন স্বপ্ন আমার সঙ্গী ছিল। স্বপ্ন আমাকে উদ্দীপ্ত রাখত, স্বপ্ন আমাকে প্রেরনা জোগাত, স্বপ্ন আমাকে বাঁচতে শেখাত।

কিন্তু কোভিড আসায় স্বপ্নগুলো কেমন লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে। ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও কি আমি স্বপ্ন দেখি না! দেখি। স্বপ্ন দেখি একদিন পৃথিবী আবার আগের মতো হবে।

আবার তুমুল আড্ডা হবে, বেড়ানো হবে, পরস্পরের মুখ দেখতে পাব, বুকের স্পন্দন শুনতে পাব, গায়ের ঘ্রাণ পাব, ভ্যালেন্টাইন পালন করব, বৈশাখ হবে, একুশের শীতের রাতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাব।  

এক বছর ধরে মাস্ক পরছি। বাইরে গেলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারি না, নিঃশ্বাস আটকে যায়, চশমার গ্লাস ঘোলা হয়ে যায়, কমিউনিকেশন হয় না যথাযথ। মানুষে মানুষে দুই মিটার দূরত্ব। অচেনা মানুষের কাছে যেতে ভয় লাগে। মুখোশের আড়ালে চেনা মানুষও অচেনা লাগে। প্রতিদিন ঘুম ভেঙ্গে কোভিড চেক করি। পৃথিবীতে কত মানুষ আক্রান্ত হলো, কত মানুষ মারা গেলো সেসব দেখি। কানাডা আর বাংলাদেশের সর্বশেষ আপডেট দেখি।  

কখনো আশা জেগে উঠে কখনো হাতাশা গ্রাস করে। এরই মধ্যে কত আপনজন হারিয়েছি। অনেক চেনা মানুষকে আর দেখবো না। কানাডায় এখন চরম উইন্টার। চারিদিকে বরফের স্তুপ। কোথাও যাওয়া নাই। বন্দী জীবন। তাই হতাশা ঘিরে আছে। এই সময়টা আমি দেশে থাকি। কিন্তু এবার কোনো পরিকল্পনা করতে পারছিনা। এখানে ভ্যাকসিন কবে পাব জানিনা। সে তুলনায় বাংলাদেশে অনেক এগিয়ে আছে।
 
কিন্তু স্বপ্ন জাগরুক আছে। হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারঙ্গম আমি। বেশি পরিকল্পনা করে আমি কিছু করতে পারি না। লাভ ক্ষতির চিন্তা করি না। মন যা সায় দেয় তাই করি। সেজন্য যে কেনো ক্ষতি মেনে নিতে দ্বিধা করব না। তখন কোনো যুক্তি কাজ করে না। পূর্বাপর পরণতি না ভেবেই অনেক কিছু করি আমি। এজন্য আমি জীবনে অনেক মূল্য দিয়েছি। সেজন্য আমার কোনো অনুতাপ হয় না। স্বপ্নই আমাকে উদ্দীপ্ত করে।  

স্বপ্ন দেখি কবে আবার পীয়ারসন এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনটা আমাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে। সাড়ে বারো হাজার কিলোমটিার উড়ে ক্লান্ত এয়ারবাসটা যখনই আগুনের ফুলকি ছুটিয়ে হুস করে ঢাকার মাটিতে ল্যান্ড করবে তখন আমার চোখ অজান্তেই ভিজে উঠবে। ইমিগ্রেশনের বেড়াজাল পার হয়ে বাইরে বের হয়ে প্রথমেই বুক ভরে নিঃশ্বাস নেব। একবছরে ঢাকা কতটুকু বদলেছে সে সব পরখ করে দেখব। ঢাকার রাস্তার ধূলিকনার সাথে কথা বলব। প্রিয় শহর ঢাকা। আমার দেশ। গাড়ির পিছনের সীটে বসে আমার চোখে জল গড়াবে।


আবারও বাড়ল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি

দিনের শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে রাহীর আঘাত

রাজশাহীর চার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে, ৪২টি ঝুঁকিপূর্ণ

‌‘করোনায়’ দুই বাঘের বাচ্চার মৃত্যু


গত এক বছরে কতকিইতো করতে চেয়েছিলাম। কত পরিকল্পনা ছিল, স্বপ্ন ছিল। কত জায়গায় যেতে চেয়েছিলাম। অটোয়া, ক্যালগেরি, নিউইয়র্ক, আটলান্টা, টেক্সাস, লসএঞ্জেলেস, লন্ডন, প্যারিস, কোলকাতা। তালিকা ছোট নয়। কিছুই হয় নাই। এয়ারপোর্ট জায়গাটা আমার বড় পছন্দ বা যে কোনো স্টেশন। স্টেশন মানেই জায়গা বদল। ছুটে চলা।  

চলতে চলতে একদিন এমন এক পারলৌকিক স্টেশনে নামব যেখান থেকে আর ফিরব না। সেখানে কেনো প্লাটফর্ম থাকবে না, কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করবে না। কেউ ফেরে না সেই অচেনা স্টেশন থেকে। ছোটবেলায় প্লেন দেখলেই আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। গুম গুম শব্দ করে একটা ছোট্ট জিনিস উড়ে যাচ্ছে। ভাবতাম পাখির মতো জিনিসটা কেথায় যায়! কোথা থেকে এসেছে! বড় বিস্ময় জাগত মনে।
 
মাকে একদিন বললাম, মা, আমি প্লেনে চড়ে একদিন অনেকদূরে চলে যাব। মা বলতেন কোথায় যাবি! তাতো জানি না দূরে কেথাও চলে যাব। মা বলতেন তোর আবার মাথায় ঘুঘু ডাকছে। এই বলে মায়ের চোখ ছল ছল করে উঠত। হ্যাঁ আমার মাথায় প্রায় প্রায় ঘুঘু ডাকে। পারাপারের ললিতের মতো মাথায় আকাশ ঢুকে পড়ে আমার।

প্রতিবার ঢাকায় পৌঁছেই বরিশাল যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠতাম। সেই তরুণ বয়সে বরিশাল ছেড়েছি। আমােকে ছাড়া মায়ের জীবনটা শূন্য হয়ে গিয়েছিল। কারণ আমি ছিলাম সবার ছোট সন্তান। বাবা ছিল না বলে মা আগলে রাখত সারাক্ষন। সেই আমি হুট করে বরিশাল ছেড়ে ঢাকায় আসলাম। স্বপ্ন লেখক হবো। কোনো মানে হয় না! ওসব না করলেই ভাল ছিল। মায়ের পাশে থাকতে পারতাম।  

প্রতিদিন ফেলে আসা স্বপ্ন দেখি। ঢাকা থেকে স্টীমারে চড়ে খুব ভোরে বরিশাল পৌঁছে যাই। স্টীমার রকেটটি ভোঁ দিয়ে যখন বরিশাল ঘাটে থামতো তখনও রয়ে যেতো অন্ধকার। ঘাট থেকে মাত্র পনেরো মিনিটের রিকশা পথ আমাদের বাড়ি। মনে হয় পথ আর ফুরোয় না। তখনও আকাশভরা তারা, আর পূবদিকে আকাশের রঙ ময়ূরের গলার মতো রঙিন। সামান্য ঠান্ডা অনুভূতি হয় ভোরের সকালে। সেই হিম ধুয়ে দেয় বাতাসকে। বাতাস বড় শীতল, বড় উদার মনে হয় তখন।  

বাড়িতে গেলে যে ক’টা দিন থাকতাম, মা কেবল গল্প করতো। নদী, নৌকা আর গাছগাছালির গল্প। মায়ের হাতে জাদু ছিল। মাটি কথা বলতো মায়ের সঙ্গে। যা কিছু মা রোপন করত তাই লকলকিয়ে উঠতো। মাছ, ধান আর পিঠে-পায়েসের গল্প করত মা। একঘেঁয়ে, তবু কান পেতে শুনতাম আমি। ছোটবেলায় যখন বছরে দু-তিন মাস মায়ের সঙ্গে ঢাপরকাঠি মামা বাড়িতে থাকতাম, তখন নদী, নৌকো, মাছ আর ধান আমার অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।

সেসব গল্প করত মা। মায়ের গলায় জল-মাটির নোনা আর সোঁদা গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে যায়। তবু সবকিছু ছাপিয়ে ওঠে সেই পিঁপড়ার কামড়, শেষ রাত্রির আবছায়ায় ঘুম ও স্তব্ধতার মধ্যে এক অলৌকিক নিরুদ্দেশ যাত্রা। যেখানে মা চলে গেছেন। একটা অজানা এয়ারপোর্ট, চেক ইন, ইমিগ্রেশন, কাষ্টমস, বোর্ডিং পাস, বোর্ডিং ব্রীজ, ফাসিংবেল্ট এন্ড নাথিং টু ডিক্লায়ার! 

জসিম মল্লিক, টরেন্টো।

news24bd.tv আয়শা