আমাদের জীবনের বড় বড় নায়কেরা আমাদের পাশেই থাকে

আমাদের জীবনের বড় বড় নায়কেরা আমাদের পাশেই থাকে

Other

আব্বা প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে যেতেন। মাটির রাস্তা। বর্ষায় কাদা আর শীতে ধূলোময়। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব চার কিলোমিটার।

প্রতিদিন আট কিলোমিটার রাস্তা হাঁটতেন। ঘরে কোন ঘড়ি ছিলো না। সূর্যের ভাঁজ বুঝে বুঝে স্কুলে যেতেন। বেশিরভাগ সময় আগে গিয়েই বসে থাকতেন।
স্কুল থেকে ফিরে হারিকেনের আলোয় পড়া। কখনো কখনো কেরসিন থাকতো না। রাত্রে পড়তে পারতেন না। খুব ভোরে উঠতেন। ভোরে উঠে প্রকৃতির আলোয় পড়তেন।

১৯৬৪ থেকে মেট্রিক পরীক্ষার আগ পর্যন্ত, আট কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে হেঁটে স্কুল করেছেন। ১৯৬৯ সালে আব্বা মেট্রিক পাশ করলেন—ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, বায়োলজি ও উচ্চতর গণিত নিয়ে।

ছাত্র হিসেবে খুব ভালো ছিলেন। এলাকায় তার মেধার একটা নাম ছিলো। মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে গ্রামের অনেক স্টুডেন্টকে পড়াতে শুরু করলেন। ভর্তি হলেন কুমিল্লা পলিটেকনিক‍্যাল কলেজে। ইলেক্ট্রিক‍্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেন। পলিটেকনিক‍্যালে ভর্তি হওয়ার প্রধান কারণ হলো স্টাইপেন্ড। সেসময় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্টুডেন্টরা ভালো স্টাইপেন্ড পেতো। স্টাইপেন্ড না পেলে আব্বার পড়া বন্ধ।

কলেজের আশেপাশে লজিং পেলেন। লজিং মানে হলো জায়গির মাস্টার। যে বাড়িতে থাকতেন তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর বিনিময়ে থাকা ও খাওয়া ফ্রি। কলেজের স্টাইপেন্ডের টাকায় নিজে চলতেন। পরিবারকে দিতেন।

আব্বার সহপাঠীদের বেশিরভাগই ঝরে গেছে ক্লাস এইট-নাইনে থাকতেই। অনেকেই পরিবারের কৃষিকাজে হাল ধরেছেন। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়লেই তখন পুলিশ-আর্মিতে চাকরি। গ্রামের ছেলেদের জন‍্য তখন এরচেয়ে বেশি কিছুর স্বপ্ন ছিলো না। পলিটেকনিক‍্যালে পড়েছেন বলে প্রায়ই দুঃখ করতেন। আব্বা পরে বুঝেছিলেন, ইন্টারমেডিয়েট পড়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়লে ভালো করতেন। চাইলেই সেসময় অনায়েসে ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়তে পারতেন। কিন্তু সেরকম পরামর্শ দেয়ার কোন মানুষ ছিলো না। উৎসাহ ছিলো না। তাছাড়া স্টাইপেন্ড না পেলে তো পড়া চালানো যেতো না। আব্বার ছাত্রজীবনের কথা যতোবার শুনেছি, ততোবার আমার অন্তর ছিঁড়ে গেছে। কতো বঞ্চনা, কতো অপ্রাপ্তি আর ক্লেশের ছাত্রজীবন! তবুও থামেন নি।


আরও পড়ুনঃ


চীনে সন্তান নেয়ার প্রবণতা কমছে, কমছে জন্মহার

কাল-পরশু হয়তো লকডাউনটা আরো ‘ডাউন’ হয়ে যাবে

কুমারীত্ব পরীক্ষায় 'ফেল' করায় নববধূকে বিবাহবিচ্ছেদের নির্দেশ

বাদশাহ সালমানের নির্দেশে সৌদিতে কমছে তারাবির রাকাত সংখ্যা


শুধু কৈশোর-যৌবনেই যে সংগ্রাম করেছেন, তা নয়। পরিবারের অনেক আর্থিক টানা-পোড়েনেও, চাকরি জীবনে সততা থেকে চুলসম চ‍্যুত হননি। জীবনে ঠকেছেন, কিন্তু কাউকে ঠকাননি। সংগ্রাম করে বড়ো হয়েছেন বলেই হয়তো জীবনে কোন সাধ-আহ্লাদ ছিলো না। বিলাসীতার ছিটে-ফোঁটাও ছিলো না। আজো নেই। একটা নির্লোভ, নির্বিবাদ, অন্তর্মুখী জীবন যাপন করেছেন। করছেন।   

আমাদের জীবনের বড় বড় নায়কেরা আমাদের পাশেই থাকে। আমরা সেসব নায়কদের জীবন থেকে শিক্ষা নেই না। অথচ, তাদের গল্পগুলোই আমাদের পথের সবচেয়ে বড়ো পাথেয়। সবচেয়ে বড়ো শক্তি। সবচেয়ে বড় উৎসাহ।

news24bd.tv / নকিব