এ প্রশ্নের মীমাংসা দরকার

এ প্রশ্নের মীমাংসা দরকার

Other

মুসা (আঃ) এর জামানায়  মহাপ্লাবনের সময় পানি ক্রমশ বাড়তেছিলো আর এক লোক পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে বারবার বলতেছিলো "আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি, আল্লাহই আমাকে বাঁচাবেন, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমি যাবো না"। এদিকে পানি দ্রুত বাড়ার ফলে কয়েকজন লোক কয়েকবার তাকে উদ্ধার করতে গেলে তিনি বারংবার তাদের নিবৃত্ত করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ডুবে মারা যান।

মহান আল্লাহ তাঁকে ঠিকই সাহায্য করেছিলেন।

ঐ যে বারবার তাকে যারা উদ্ধার করতে গিয়েছিলো তারাই ছিলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যকারী। কিন্তু গোয়ার্তুমির কারণে আল্লাহর উপর ভরসার স্বরূপ বুঝতে না পারার কারণে তাকে ডুবে মরতে হলো।

করোনাকালীন দুর্যোগে কেউ কেউ মাস্ক না পড়ে বা নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বলেছেন আমাদের "করোনা" ধরবে না। আমরা আল্লাহ উপর ভরসা করি।

এগুলো চরম হটকারী ও মোনাফেকী। অনেকটা আল্লাহ কে চ্যালেন্জ করার মত। "আমি মানবো না; আল্লাহ ভরসা! দেখি "করোনা" হয় কি না!  মনে রাখতে হবে শত্রুর মূহুর্মূহ গুলির সামনে দাড়ানোর নাম বীরত্ব নয় অবিমৃষ্যকারীতা এবংএটি  ভরসার কোন স্বরূপও নয়।

হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করব, না বন্ধনমুক্ত রেখে? তিনি বললেন, উট বেঁধে নাও, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর। (তিরমিযি)

মোনাফেকি  এজন্য যে নিজের অনেক ব্যাপারে আল্লাহ উপর এমন ভরসা করে না। ডায়বেটিস আক্রান্ত কেউ আল্লাহর উপর ভরসা করে সুগারে ডুব দেয় না কিংবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণবিহীন রাখে না। কারও স্ত্রী স্বামীর সাথে "খিলওয়াতুস সহীহ" বা নির্জনবাস ব্যাতীত কনসিভ করলে সে স্ত্রী যদি বলে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে  গর্ভধারণ করেছি তাহলে স্ত্রী কে তো মরিয়ম (আঃ)  মনে করবেই না, ডেলিভারী সহজ হওয়ার জন্য মরিয়ম ফুলেরও ব্যাবস্থা করবে না বরং মরিয়ম গাছের ডাল দিয়ে আচ্ছামতন ঠেঙাতে পারলে ভাল বোধ করবে।   কেউ এ পথে আমাকে আক্রমন করতে পারে এটা জানার পর ঐ মুখী তো হই না আর  "করোনা" বেলায় হয়ে যাই ফানাফিল্লাহ আর বাঁকাবিল্লাহ।  

আসলে আল্লাহ যেটা ফয়সালা করে রেখেছেন, মুমিনদের জন্য সেটাই উত্তম। রাতে ঘুমানোর আগে দরজা বন্ধ করতে বলা হয়েছে, বাতি নিভানোর কথা বলা হয়েছে। তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।

রাসুল সাঃ আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতেন। তিনি তার জীবনে বিভিন্ন উপায় এবং বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। কৌশলগুলো তিনি বৈধভাবে, বৈধ উপায়ে করেছেন। তার হিজরতের ঘটনা থেকে জানা যায়, রাতের অন্ধকারে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি হজরত আবু বকর রা:কে সাথে নিয়ে মক্কা থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি তো দিনের বেলায় বের হননি। এটা তার সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করার একটি উদাহরণ। মক্কা থেকে মদিনা উত্তর দিকে। অথচ তিনি বের হওয়ার সময় দক্ষিণ দিকে রওনা হয়েছিলেন। যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে, তিনি মদিনায় চলে যাচ্ছেন। তিনি তো আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে ঘরে বসে থাকেননি।

আল্লাহ আমাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা দিয়েছেন আর চালু করে দিয়েছে সিস্টেম তথা নিয়মাবলি। জ্ঞান, বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে নিয়মের মধ্যে চলাকেই আল্লাহ পছন্দ করেন। তবে মনে রাখতে হবে মাস্ক, ঔষধ  ইত্যাদিই কেবল আমার জন্য যথেষ্ট মনে করি তাহল ঈমানের প্রশ্ন চলে আসবে। আল্লাহই সর্বোত্তাম হেফাজতকারী, তিনিই আমাদের বাঁচাবেন, তিনি ছাড়া কিছুই নেই। তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে কিছুই হবে না এটা আমাদের আকীদা।

আল্লাহর উপর ভরসার অনেক উপরের স্তরও আছে। ইমাম গাজ্জালীর মতে  সে নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে এমনভাবে সঁপে দেওয়া, যেভাবে মৃত ব্যক্তি নিজেকে গোসল দানকারীর হাতে ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি নিজে কোনো নড়াচড়া করে না। তাকে যেভাবে নাড়াচড়া করা হয়, সেভাবেই সে নড়ে।   সে অন্য আলোচনা। সে পর্যায়ে যেতে হলে তাকওয়ারও সর্বোচ্চ চূড়ায় যেতে হবে।

সে লেভেলে আমরা পৌঁছাতে পারিনি  ঠিকই  কিন্তু সামান্য  মাস্ক পড়তে বললে আমাদের কথার লেভেল কিন্তু সেখান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে-

নজরুল ইসলাম​ (ফেসবুক থেকে নেয়া)

news24bd.tv/আলী