নাকি বরাবরের মতই ঘুষকে ‘নিজের জন্য জায়েজ’ বলেই চালিয়ে যাবো?

নাকি বরাবরের মতই ঘুষকে ‘নিজের জন্য জায়েজ’ বলেই চালিয়ে যাবো?

Other

রমজানের আত্মশুদ্ধির ট্রেনিং তো প্রায় শেষের দিকে। আমরা নিজেদের ভিতরে কতটুকু পরিবর্তন আনতে পেরেছি? একটু মিলিয়ে নেই:-
• রমজান শেষে নিজের অন্তরের মধ্যে সযত্নে লালন করা অপরের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা ও প্রতিহিংসার মাত্রা কতটুকু কমাতে পেরেছি?
•কারো ভালো কিছু দেখলেই আমার ভিতরটা জ্বলে পুঁড়ে একাকার হয়ে যায়। রমজান শেষে সেই হিংসার মাত্রা কতটুকু কমাতে পেরেছি?
•যাদের হক্ব মেরে খেয়েছি। সম্পদ আত্মসাৎ করেছি।

মান সম্মান নষ্ট করেছি। জুলুম, নির্যাতন, অন্যায় অবিচার করেছি। তাদের হক্ব ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবার মানসিকতা কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি?

•বিশ্বের বিখ্যাত সব বই-পুস্তক পড়ে শেষ। অথচ রমজানে আল্লাহর কিতাব কোরআন কতটুকু পড়তে পেরেছি?
•নামাজ রমজানেও যেমন ফরজ।

তেমনি সারাবছর ও সারা জীবনের জন্যও ফরজ। মনেপ্রানে এই উপলব্ধি কতটুকু করতে পেরেছি?
•সারাবছর সুদ-ঘুষ-দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত। রমজানের পর এপথ থেকে কতটুকু সরে আসতে পারবো? নাকি বরাবরের মতই ঘুষকে স্পিডমানি, তদবির, সিস্টেম, পার্সেন্টিজ বা খরচাপাতি বলে নিশ্চিন্তে যথারীতি ‘নিজের জন্য জায়েজ’ বলেই চালিয়ে যাবো?

•সুদকে ইন্টারেস্ট নাম দিয়ে সুদের অর্থনীতি, সুদের ব্যাংকিং এবং সুদভিত্তিক ব্যাবসা আগের মতই দেদার্ছে চালিয়ে যাবো? নিত্যনতুন অযুহাত ও যুক্তি তুলে সুদের পক্ষেই আগের মতই সমানে লড়ে যাবো?

• যারা বিচারক। উপরের নির্দেশ, ফোনকল, তদবির। কিংবা ব্যক্তিগত, দলীয় বা আর্থিক লাভের আশায় মজলুমের হক্ব নষ্ট করা থেকে নিজেকে কতটুকু নিবৃত্ত রাখতে পারবো? 
• যারা রাজনৈতিক নেতা-কর্মী। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ইচ্ছামত লুটপাট করা থেকে কতটুকু সরে আসতে পারবো?

• যারা রাষ্ট্রীয়, পেশাগত, দাপ্তরিক পদে দায়িত্বরত। কিংবা সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীসহ দায়িত্বশীল কাজে নিয়োজিত। নিজ নিজ দায়িত্বশীলতার জন্য আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসিত হতে হবে- এই উপলব্ধিটুকু  আমাদের মনে কতটুকু জাগ্রত হবে?

• যারা যুবক। ইন্টারনেটে বাজে ভিডিও দেখা। বন্ধু-বান্ধবীর সাথে অশ্লীল চ্যাটিং করা থেকে নিজেকে কতটুকু সংযত রাখতে পারবো?
•জুলুম, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অশ্লীলতা, লুন্ঠনের বিরুদ্ধে। অন্যায়-অবিচার ও গরীবের হক্ব নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কতটুকু প্রতিবাদ জানানোর সাহস পাবো? হাদিসের এই কথার উপর কতটুকু আমল করতে পারবো? -— “তোমরা কোন অন্যায় দেখলে শক্তি দ্বারা তা প্রতিহত করবে। যদি সমর্থ না হও তাহলে কথার দ্বারা প্রতিবাদ করবে। এতেও সমর্থ না হলে মন থেকে তা ঘৃণা করবে। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল ঈমান। " 
আসুন, নিজের পরীক্ষা নিজে নেই। নিজেকে নিজেই নাম্বার দেই।

রমজান মাসে আমরা যেভাবে আল্লাহকে ভয় করে চলেছি। বাকি ১১ মাসও যেন সেভাবেই আল্লাহকে ভয় করে চলতে পারি। আমি যেন শুধুই এক মাসের মুমিন না হই।

লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ।

news24bd.tv/আলী