ভূঁইয়া ইকবালের গবেষণার একটি অন্যতম বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ

ভূঁইয়া ইকবালের গবেষণার একটি অন্যতম বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ

Other

আমরা এমন এক সময়ে বাস করি যখন ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’; আত্মপ্রচার আর কলরবের এই সময়ে একজন নিভৃতচারী গবেষকের জীবনাবসানের সংবাদ অনেকের চোখে পড়বে না – তাঁকে চিনতে পারবেন এমন লোকের সংখ্যাই বা কতজন? তদুপরি তিনি থেকেছেন রাজধানীর বাইরে – দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্ত গবেষণার কাজে তাঁর আত্মনিবেদনের কথা কী আসলেই বিস্মৃত হওয়া যায়? ভূঁইয়া ইকবালের মৃত্যু সংবাদ শুনে এই কথাগুলো মনে হলো।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হয়েছিলেন গবেষক হিসেবে ১৯৭৩ সালে, পরে অধ্যাপনা করেছেন - অবসর নেয়ার আগে পর্যন্ত।   কিন্ত তারও আগে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন, দৈনিক বাংলায় – প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে, পরে রিপোর্টার হিসেবে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে।

 

ইকবাল ভাইকে চেনার সুযোগ হয়েছে অগ্রজ আলী মনোয়ারের সূত্রে, স্বাধীনতার আগেই। মনোয়ার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠজনদের একজন ইকবাল ভাই। আমার কৈশোরে ভারী চশমা পড়া ইকবাল ভাইকে দেখে একধরনের সমীহার ভাব জাগতো – খানিকটা ভয়েরও। ভূইয়া ইকবালের প্রায় সার্বক্ষনিক সঙ্গী ছিলেন গোলাম মোস্তফা।

 

ইকবাল ভাইয়ের সঙ্গে আলাদা করে যোগাযোগ গড়ে ওঠে ১৯৭৪ সালের দিকে অগ্রজ আলী মনোয়ার প্রবাসী হবার পরে, সেটা সম্ভব হয়েছিল রেবু বৌদির (সুলতানা রেবু) কারণে। সেই সময়েই ইকবাল ভাইয়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘মানিক বন্দ্যোপাধায়’ গ্রন্থটি। তখনও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে আলোচনার শক্তিশালী ধারা বাংলাদেশে গড়ে উঠেছিল বলে মনে হয় না। কিন্ত সেই কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করেছিলেন ভুঁইয়া ইকবাল। নিভৃতচারী, স্বল্পবাক কথাগুলো সম্ভবত তাঁর জন্যেই তৈরি হয়েছিল।  

একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন যে, আলস্যের কারণে তাঁর লেখালেখি কম; পরিকল্পিত অনেক কাজ তিনি করে উঠতে পারেন না। কিন্ত আসল কারণ কী আলস্য নাকি গবেষণার প্রতি নিষ্ঠাই তাঁর স্বল্প রচনার কারণ? ‘সমাজ ও সংস্কৃতি’ শিরোনামে তাঁর একটি বই আছে – সেটি পাঠ করলেও বোঝা যায় বিষয়ের গভীরে প্রবেশ না করে তিনি আলোচনা করেন না; নতুনভাবে দেখা ও দেখানোর কাজটি তিনি করতে চান – সেই কারনেই তাঁর সময়ের দরকার।  

ভূঁইয়া ইকবালের গবেষণার একটি অন্যতম বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ। এই মুহুর্তে তাঁর তিনটি গ্রন্থের কথা স্মরণে আসে, ‘রবীন্দ্রনাথঃ তাঁর চিঠি, তাঁকে চিঠি’, ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্র সংবর্ধনা’, এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ’।  

ভিন্ন আলোয় রবীন্দ্রনাথকে চেনার কাজে এগুলোর ভূমিকা অসামান্য। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে ভুঁইয়া ইকবালের অনেকগুলো সম্পাদিত গ্রন্থ আছে। কিন্ত এগুলো কেবল সংগ্রহ নয়, প্রত্যেকটি সম্পাদিত গ্রন্থ তাঁর গবেষণার ফসল। ‘নরেশ গুহকে অমিয় চক্রবর্তীর স্মৃতিকথা ও পত্রাবলি’ তার একটি উদাহরণ।

কয়েক দশক ধরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও তাঁকে বিস্মৃত হবার সুযোগ ছিল না। কেবল ব্যক্তিগত কারণে আমার তাঁকে বিস্মৃত না হবার কথা নয়, তাঁকে আরেকটি কারণে সকলেরই জানা থাকার কথা; আমার স্মৃতি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করলে ১৯৭১ সালের শেষ দিকে বা ১৯৭২ সালের গোড়াতে দৈনিক বাংলায় তাঁর একটি প্রতিবেদন ছিল রাও ফরমান আলীর একটি ডায়েরির কয়েকটি পাতা নিয়ে করা; সেখানেই লেখা ছিল, বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকা।  

এখন অনেক ভাবে ইতিহাস লেখা হয়, কিন্ত এই ধরণের দলিলগুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। রাজধানীর পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে, প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতির বাইরেই সমস্ত জীবন কাটালেন ইকবাল ভাই।   কিন্ত তাই বলে তাঁকে বিস্মৃত হওয়া যাবে না, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই।

লেখাটি লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া হয়েছে। (মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

আরও পড়ুন:


পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসছে অস্ট্রেলিয়া

আগের চেয়েও কঠোর হবে কাল থেকে শুরু হওয়া লকডাউন!

দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে কর্মমুখি-ঘরমুখি উভয় দিকে যাত্রীদের চাপ

কুষ্টিয়ায় করোনা ও উপসর্গে ১৬ জনের মৃত্য


news24bd.tv / কামরুল