নিয়মিত দুর্নীতিতে চমকের পর চমক সৃষ্টি করি আমরা

নিয়মিত দুর্নীতিতে চমকের পর চমক সৃষ্টি করি আমরা

Other

ফেসবুকে লক্ষ করি প্রায় সব বাবা মাই কামনা করেন তার সন্তান যেন বড় হয়ে একজন প্রকৃত সৎ ও ভালো মানুষ হন। প্রকৃত ভালো মানুষ বলতে তারা কী বোঝেন সেটার কোনো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা অবশ্য দেন না।

রক্তদান সম্পর্কিত একটা গ্রুপে গিয়ে দেখলাম প্রথম রক্তদানের পর তাদের মায়ের কী রিয়েকশন ছিল। তাতে দেখলাম অধিকাংশ মাই বিরক্ত, দুঃখিত ও মর্মাহত হয়েছেন।

তাদের বক্তব্য ছিল ‌‌‘নিজের শরীরেই রক্ত নাই আবার রক্ত দিতে আসছে’, ‘তোরে কি খাওয়া দাওয়াইয়া বড় করছি মাইনষেরে রক্ত দিতে’ ‘যারে রক্ত দিছিস তার বাড়িত গিয়া থাক’, ‘আইছে আমার বীরপুরুষ’ ইত্যাদি৷ এইসব বক্তব্যকে আমরা সরল চোখে বাৎসল্য বা সন্তানের প্রতি মায়ের চিরন্তন দুর্বলতা হিসেবেই দেখি। আদতে এটি বাঙ্গালি মায়ের সংকীর্ণতাই। যা সন্তানকে একজন পরোপকারী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরুৎসাহিত করে।  

বাঙ্গালি মায়েরা শেখায় তোর নোটটা কাউকে দিবি না, কোথায় কোথায় পড়তে যাস বলবি না, বাংগালি মা নিজের সন্তানের ভালো রেজাল্ট দিয়ে পাশের বাসার সন্তানকে লো ফিল করাতে পছন্দ করে আবার নিজের সন্তানকে তারচেয়ে ভালো কাউকে দেখলে তার পা ধোয়া পানি খেতে বলে।

কখনো নিজের সন্তান, কখনো পরের সন্তানকে অপমান করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে কুণ্ঠা করে না।

এগুলো আমাদের সমাজে খুব ক্যাজুয়ালি চলে আসছে৷ আমরা এগুলোকে খুব মন্দ কিছু মনেও করি না। আদতে আমাদের এই আচরণগুলো সন্তানকে স্বার্থপর, নেতিবাচক ও নিন্দুক স্বভাবের করে গড়ে তোলে। একজন উদার মনের সৎ, প্রকৃত ভালোমানুষরূপে গড়ে তোলার প্রকৃত প্রেরণা বাংলার অধিকাংশ মায়েরই থাকে না।

আমি এক ডাক্তারের মা কে পেয়েছিলাম যে খুব বিরক্ত ও আফসোস নিয়ে বলেছিল তার ছেলে ঢাকা থেকে অনেক দূরের উপজেলায় চাকরি করে এটা তার ভালো লাগে না। চাকরি করে ভালো কথা, এত সিনসিয়ার হবার দরকার কী। অনেকেই তো সপ্তাহে দুই এক দিন থেকে চলে আসে।

নিজের সরকারি চাকুরে ছেলে চাকরি করে মাসে পাচ লাখ টাকা আয় করে এরকম গর্বিত মা, বাবা,  শ্বশুর এই সমাজে ভুরি ভুরি। বস্তুত আমি আজ পর্যন্ত এরকম মা কিংবা বাবাকে দেখিনি যে নিজের সন্তানের অবৈধ আয় দেখে বিব্রত হয়েছে। এমন সন্তানও দেখিনি যে পিতার অবৈধ আয়ে বিরক্ত বা বিব্রত। কোনো ধর্ষককে তার পিতা বা মাতা ত্যাগ করেছে এমন শুনিনি। বরং সব ষড়যন্ত্র, ‘সরল ছেলেটা না বুঝে ফাঁদে পা দিয়েছে’ টাইপ চিন্তাই সবাই করে।

বাস্তব সত্য হচ্ছে বাংলার অধিকাংশ মাই চায় (বাবাও) তার সন্তান সবাইকে পিছে ফেলে এগিয়ে যাক। যেভাবেই হোক- সফল হোক, স্বচ্ছল হোক। সে কারণেই হয়তো এই দেশে জেনারাস, বিনয়ী, ইতিবাচক মানুষ তৈরি হয় কালেভদ্রে। বরং নিয়মিত দুর্নীতিতে চমকের পর চমক সৃষ্টি করি আমরা। এদেশে সৎ মানুষ তৈরি হবার সিস্টেমটাই নাই।

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv তৌহিদ