শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে কিছু কথা আমিও বলতে চাই

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে কিছু কথা আমিও বলতে চাই

Other

শিক্ষা প্রতিষ্টান খোলার বিষয়ে তিন ধরনের কথা শুনতে পাই। ১. অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, দেশ রসাতলে ডুবে যাচ্ছে, এখনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। ২. আমার সন্তান যেনো বেঁচে থাকে, মানুষ না বাঁচলে শিক্ষা দিয়ে কী হবে ? ৩. পরিস্থিতি অনুকুলে এলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে টিকা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে।  

প্রথম ও দ্বিতীয় বক্তব্য দিচ্ছি আমি ও আপনি।

তৃতীয় বক্তব্য দিচ্ছে সরকার। সরকার এরই মাঝে অক্টোবরের পনের তারিখের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুচ্ছে। এর মাঝে ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে।  

এখন দেখার বিষয় পরিকল্পনা মতো সবকিছু ঠিকঠাক এগুতে পারে কীনা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সব কিছু বুঝে। তারা সমাজ ও রাজনীতি সচতেন বলে আমরা ধরে নেই। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নানা কর্মকাণ্ড থেকে এই ধারণা আমাদের হয়েছে। এই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নাম নানাভাবে জড়িয়ে আছে। তবে তারা কতটুকু স্বাস্থ্য সচেতন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে কতটুকু পটু তা এবার দেখার সুযোগ এসেছে।  

করোনা মহামারী নানারকম সামাজিক ও আর্থিক প্রভাব রেখে গেলেও এটা একটা স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাকে স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে ধরে নিয়ে, সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। উন্নত দেশগুলো এটাকে স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে ধরে নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করছে। তাহলে সুস্থ্য থাকা ও জীবন বাঁচানো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আলোচনায় অবশ্যই একটা প্রাসঙ্গিক বিষয়। যে সব অভিভাবক সন্তানকে সুস্থ্য ও জীবিত রাখার আকুতি জানান, তাদের কথায় যুক্তি আছে। আবার যারা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তাদের কথায়ও যুক্তি আছে।  

এ ক্ষেত্রে বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকঠাক চালিয়ে গেলে প্রথম পক্ষের যুক্তির ধার অনেকটা কমতো।  
করোনা মহামারী বিশ্বকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে দাঁড়িয়ে শিক্ষা দেওয়ার প্রচলিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি।  

ধরা যাক, সংক্রমনের মাত্রা শতকরা ৫ ভাগের নিচে নামিয়ে আনা গেল। সব শর্ত পূরণ করে সব শিক্ষা প্রতিষ্টান চালু করা গেল, তারপরও আগের শিক্ষা ব্যবস্থায় পুরোপুরি ফিরে যাওয়া যাবে কী না সংশয় থাকবে। বরং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে আরও সহজলভ্য করা যায়, শিক্ষা উপকরণের মান কীভাবে বাড়ানো যায়, সিলেবাস আরও কতোটা আন্তর্জাতিক মানের করা যায়, তা ভেবে দেখার দরকার আছে। আমি বিশ্বাস করি, এই বিষয়ে আরও আলোচনার দরকার আছে।  

মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্য্যায়ের শিক্ষার্থীদেরকে এই আলোচনার বাইরে রাখছি। বিশেষ করে যাদের বয়স ১৮ এর নিচে এবং যাদেরকে রাষ্ট্র টিকা দিতে পারছে না, তাদেরকে শিক্ষার নামে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া কে কে সমর্থন করবে, তা আমার জানা নেই। বরং অনলাইন বা অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতিতে তাদের শেখার কতোটা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া যাচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা এখন বেশি দরকার।   

বলছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া তুলনামূলক সহজ। তারা সচেতন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবে, টিকা নিতে পারবে ইত্যাদি নানা বিষয় অনুকূলে আছে। আবার গণরুম পরিহার করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডাইনিং ও ক্লাস পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটির দায়িত্বের মধ্যে পরবে। তারা তা কতটুকু করতে পারেন সেটাই একটা দেখার বিষয় আছে।  

এসব ছাড়া আরও একটি বিষয় আলোচনায় আছে, তা হলো রাজনীতি। ২৮ আগষ্ট শনিবারের জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।  

তাহলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে। এই যেমন, স্বাস্থ্য, টিকা, চিকিৎসা, গণরুম, শারীরিক দূরত্ব মেনে ক্লাস রুম, বাথরুম, ডাইনিং, বন্ধুত্ব, প্রেম, অনলাইন, চাকরি, হতাশা ও রাজনীতি। সব বিবেচনার পর সবচেয়ে সেরা সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছি। সে-ই সিদ্ধান্ত কী হবে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

লেখক : আনোয়ার সাদী 

 সিনিয়র নিউজ এডিটর, নিউজটোয়েন্টিফোর।

(মত-ভিন্নমত বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

NEWS24.TV / কামরুল