রাজবাড়ীতে নদী ভাঙনরোধে বিশেষ প্রার্থনা

রাজবাড়ীতে নদী ভাঙনরোধে বিশেষ প্রার্থনা

Other

অর্ধেক মসজিদ নদী গর্ভে। বাকি অর্ধেক যে কোন সময় নদী গর্ভে চলে যাবে। বাকি মসজিদের ভিতরে নামাজ আদায় করার মত কোন ব্যবস্থা নেই। তাই অর্ধেক ভাঙন কবলিত মসজিদের সামনে শুক্রবারের নামাজ আদায় করলেন এলাকার মুসল্লীগণ।

নামাজ শেষে নদীর পারে দাঁড়িয়ে বিশেষ প্রার্থনা করলেন এলাকার মুসল্লীগণ।

 আজ শুক্রবার দুপুরে রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া পদ্মা নদী পারে ভাঙন কবলিত ছিদ্দিক কাজী পাড়া জামে মসজিদে নামাজ আদায় শেষে এই প্রার্থনা করা হয়। এ সময় এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক বিভিন্ন বয়সী মুসল্লীগণ উপস্থিত ছিলেন। প্রার্থনা শেষে এলাকাবাসীর মাঝে জিলাপী বিতরণ করা হয়।


  
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে জেলার একাধিক এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। নদী গর্ভে চলে যায় শতাধিক পরিবারের বতস ভিটা। ভাঙন আতঙ্কে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয় প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার।  

এ সময় নদী গর্ভে চলে যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে পরে শহর রক্ষা বাঁধ। হুমকির মুখে পরে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরি ঘাট। এর মধ্যে লঞ্চ ঘাটের অর্ধেক অংশ এবং ১ ও ৪নং ফেরি ঘাটের অর্ধেক অংশ নদী গর্ভে চলে যায়। ভাঙনের কারণে ১, ২ ও ৪নং ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।  

দৌলতদিয়া ছিদ্দিক কাজী পাড়া জামে মসজিদ এর ইমাম জুবায়ের জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদে ইমামতি করছি। কিন্ত কযেক দিন যাবৎ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারছি না। যে কারণে মসজিদের সামনে জায়গা রয়েছে সেখানে সামিয়ানা টানিয়ে নামাজ আদায় করি। আজ শুক্রবার এই মাঠে নামাজের পর আমরা মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করছি যেন নদী ভাঙন রোধ হয়।  

দৌলতদিয়া ছিদ্দিক কাজী পাড়ার বাসিন্দা ছিদ্দিক কাজী বলেন, এই গ্রামের অর্ধেকের বেশি বসত বাড়ি আমার নিজের জায়গায়। যে কারণে এলাকাবাসী গ্রামটি আমার নামে দেয়। এই গ্রামে অবস্থিত মসজিদ এর জন্য ১৬ শতাংশ দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক মুসল্লীগণ এই মসজিদে প্রতিনিয়ত নাজাম আদায় করতো। কিন্ত পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে অর্ধেক মসজিদ নদী গর্ভে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ভাঙন শুরু হওয়ার পর বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে দেওয়া হলো। এই কাজ আগে করলে নদী গর্ভে মসজিদ যেত না। এলাকার কোন বসত বাড়িও নদীতে যেত না।  

দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন রোধে কাজও হয়। তবে ভাঙন শুরু হওয়ার পর। যে কারণে এই কাজের কোন সফলতা পাচ্ছে না এলাকাবাসী। সুতরাং এই ঘাট রক্ষা করতে হলে অবশ্যই জরুরি ভাবে স্থায়ী বাধ এর ব্যবস্থা করতে হবে। ভাঙন রোধে এর কোন বিকল্প নেই।  

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সি জানান, নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছর নদী গর্ভে শতশত বসত বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চলে যাচ্ছে। কিন্ত ভাঙনরোধে শুধু আশ্বাস আছে। কোন বাস্তবায়ন নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাগন শুধু আশ্বাস দেয়, বাস্তবায়ন করে না। তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ভাবে কাজ করার কোন বিকল্প নেই।  

বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিদুল ইসলাম জানান, জুন মাসের পর থেকে আমরা প্রস্তুত থাকি। ঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হলে জরুরি ভাবে কাজ করা হয়। তবে ভাঙনের পূর্বে বরাদ্ধ না থাকায় কাজ করা যায় না।  

তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন করার জন্য কাজ শুরু হবে। সকল কিছু ঠিক থাকলে আগামী শুকনো মৌসুমে এই উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।  

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর হাকিম জানান, নদী ভাঙন রোধে জরুরী ভাবে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন করার জন্য বরাদ্ধ হয়েছে। আশা করছি আগামী শুকনো মৌসুমে কাজ শুরু হবে।   

NEWS24.TV / কামরুল