আমৃত্যু ঈমানের ওপর অটল থাকতে পারা এবং মহান আল্লাহর ইবাদত করতে পারা সৌভাগ্যের। তবে ঈমান ও আমল নিয়ে কখনো অহংকার করা যাবে না। অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। কারণ কেউ-ই জানে না তার মৃত্যু কী অবস্থায় হবে।
হতে পারে যে লোকটি আজ মোটেই নামাজ পড়ছে না, দ্বিন-ধর্মের ধারে-কাছে নেই, মৃত্যুর আগে আল্লাহকে তাওবা নসিব করলে যে জান্নাতের অধিবাসী হয়ে যাবে। আবার কেউ সারা জীবন ইবাদত-বন্দেগি করে মৃত্যুর আগে (নাউজুবিল্লাহ) এমন কাজে লিপ্ত হয়ে গেল, যে তার সারা জীবনের আমল বৃথা হয়ে যাবে।এই জ্বলন্ত উদাহরণ সাহাবায়ে কেরামের যুগেই দেখা গেছে। সাহাল ইবনে সাদ সাঈদি (রা.) থেকে বর্ণিত, (খাইবারের যুদ্ধে) রাসুল (সা.) এবং মুশরিকরা মুখোমুখি হলেন।
তাই কখনোই নিজের আমলের ওপর অহংকার করে নিজেকে পৃথিবীর একমাত্র জান্নাতি ব্যক্তি বা নেককার মানুষ ভাবার সুযোগ নেই। বরং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তাঁর রহমতের আশায় থাকবে। মুক্তি একমাত্র তাঁরই হাতে। তিনি ঈমানি মৃত্যু না দিলে সারা জীবনের সমস্ত আমল বিফলে চলে যাবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি হলো এমন বীর্য থেকে, যাকে মায়ের পেটে চল্লিশ দিন কিংবা চল্লিশ রাত একত্র রাখা হয়। তারপর তেমনি সময়ে আলাক হয়, তারপর তেমনি সময়ে গোশতপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তার কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করেন। এই ফেরেশতাকে চারটি বিষয় সম্পর্কে লেখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। যার ফলে ফেরেশতা তার রিজিক, আমল, আয়ু এবং দুর্ভাগা কিংবা ভাগ্যবান হওয়া সম্পর্কে লিখে দেয়। তারপর তার মধ্যে প্রাণ ফুঁকে দেওয়া হয়। এ জন্যই তোমাদের কেউ জান্নাতিদের আমল করে এতটুকু এগিয়ে যায় যে তার ও জান্নাতের মাঝে শুধু এক গজের দূরত্ব থাকতেই তার ওপর লিখিত তাকদির প্রবল হয়ে যায়। তখন সে জাহান্নামিদের মতো আমল করে। শেষে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামিদের মতো আমল করে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার ওপর তাকদিরের লেখা প্রবল হয়, ফলে সে জান্নাতিদের মতো আমল করে, শেষে জান্নাতেই প্রবেশ করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৫৪)
তবে এর মানে কি এই যে ভাগ্যের ওপর সব কিছু কোনো আমল না করে বসে থাকবে? এ প্রশ্ন সাহাবায়ে কেরামের মনেও উদিত হয়েছিল। আলী (রা.) বলেন, এক জানাজায় রাসুল (সা.) উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি কিছু একটা হাতে নিয়ে তা দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বলেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার স্থান হয় জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়নি। এ কথা শুনে সবাই বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তাহলে আমল বাদ দিয়ে আমাদের লিখিত ভাগ্যের ওপর কি ভরসা করব? উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা আমল করতে থাকো। কারণ যাকে যে আমলের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে আমলকে সহজ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি সৌভাগ্যের অধিকারী হবে, তার জন্য সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের আমলকে সহজ করে দেওয়া হবে। আর যে দুর্ভাগ্যের অধিকারী হবে, তার জন্য দুর্ভাগা লোকদের আমলকে সহজ করে দেওয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করেন, সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকি হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ। এবং কেউ কার্পণ্য করলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, আর যা উত্তম তা ত্যাগ করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ। (বুখারি, হাদিস : ৪৯৪৯)
আরও পড়ুন:
তাই আমলের ওপর ভিত্তি করে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ না ভেবে সর্বদা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।
news24bd.tv রিমু