মুসলিমদের ‘হারামজাদা’ বলা হচ্ছে: আহমদ বুখারী

আহমদ বুখারীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিজয় গোয়েল।

মুসলিমদের ‘হারামজাদা’ বলা হচ্ছে: আহমদ বুখারী

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইয়্যেদ আহমদ বুখারী বলেছেন, ওরা আমার এখানে এসেছেন, ঠিক আছে। কিন্তু দেশজুড়ে মুসলিমদের টার্গেট করা হচ্ছে, গালিগালাজ করা হচ্ছে, তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মুসলিমদের এক হাতে কুরআন এবং অন্য হাতে কম্পিউটার থাকবে, সবার সঙ্গে সকলের উন্নয়ন হবে। কিন্তু মুসলিমদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের পাকিস্তানে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এমনকি ‘হারামজাদা’  বলা হয়েছে! নির্বাচনের আর এক বছর বাকি আছে, যদি সরকার এসব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখে, তাহলে ভালো কথা।

ভারতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে দিল্লির মসজিদের ইমাম এসব কথা বলেন।

শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজয় গোয়েল কেন্দ্রীয় সরকারের বিগত চার বছরের সাফল্য তুলে ধরে মুসলমানদের সমর্থন পেতে মাওলানা বুখারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এর আগে বিজয় গোয়েল বলেন, চাঁদনীচক থেকে দুবারের এমপি ছিলাম, শাহী ইমামের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক আছে।

তাঁকে ‘সাফ নিয়ত, সঠিক উন্নয়ন’ পুস্তিকা উপহার দিতে এসেছিলাম।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি নয়াদিল্লিতে ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের প্রেসিডেন্ট সিরাজুদ্দিন কুরেশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে নাকভির দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেবল ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বে শান্তি, মানবিক মুল্যবোধের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। সামাজিক সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা ভারতের ডিএনএতে আছে। যেকোনো দেশের তুলনায় ভারতের সংখ্যালঘুদের সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার বেশি নিরাপদ।

নাকভি রোববার এলাহাবাদ সার্কিট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিকস্তরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর চেয়ে বেশি বলে মন্তব্য করেছেন।

সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে নাকভি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে তার মন্ত্রণালয়ের বাজেট এক হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা একটি রেকর্ড।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সভাপতি মুহাম্মদ নূরুদ্দিন সোমবার বলেন, এনডিএ সরকারের চার বছর অতিক্রম করেছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার দেশে কতটা উন্নয়ন এনেছে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দাবি করছেন, তারা দেশকে অনেক উন্নত করেছেন এবং জনগণের আস্থা তাদের সঙ্গে আছে। সেজন্য তাদের দাবি, আগামীতে আবার নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হবে। তাদের দাবি, সংখ্যালঘু ও পিছিয়েপড়া মানুষদের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সেজন্যই নাকি জওহরলাল নেহরু বা ভারতের যেকোনো প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে নরেন্দ্র মোদী জনপ্রিয়তায় শীর্ষে অবস্থান করছে। কিন্তু বাস্তব রিপোর্ট অন্য কথা বলছে। কেন্দ্রীয় সরকার কেবলমাত্র ধর্মীয় বিভাজন করে, ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছে। দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, পিছিয়েপড়া মানুষদের এগিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা এমনকি রাজধর্ম, সকলের জন্য সমান সুযোগ দেয়াসহ সমস্ত নিরিখে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গঠিত কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই সরকারের আমলেই দাঙ্গাহাঙ্গামা বেশি হয়েছে। অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিভাজন বেড়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামার ঘটনা বেড়েছে, দাঙ্গা রোধ করার জন্য সরকারি তহবিলের খরচ বহুগুণ বেড়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা রোধ করতে পুলিশ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে মাঝেমধ্যে নামাতে হচ্ছে।

রাজনৈতিকভাবে এসবের মোকাবিলা না করে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি দল সাম্প্রদায়িকতাকে উসকানি দিয়ে গেছে বলেও জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মুহাম্মদ নূরুদ্দিন অভিযোগ করেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর