দেশে হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার 

সংগৃহীত ছবি

দেশে হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার 

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস উপলক্ষে রবিবার (১৭ এপ্রিল) 'ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব হিমোফিলিয়া' ও 'রোটারি ক্লাব অব তুরাগ উত্তরা' এর যৌথ উদ্যোগে দিবসটি উদযাপন করা হয়। এতে বৈজ্ঞািনক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব হিমোফিলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।  

'ল্যাব ওয়ান গ্রুপের প্রোগ্রাম অফিসার বাপ্পী ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮১, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর (২০২৩-২৪) ইব্রাহিম খলিল আল জায়াত পিনাক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব হিমোফিলিয়ার সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।

অনলাইন অতিথি ছিলেন ক্যানসাস ডেমক্রেটিক পার্টির এশিয়ান প্যাসিফিক আইসল্যান্ডার কোকাসের চেয়ারম্যান রোটারিয়ান রেহান রেজা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রােখন রোটারি ক্লাব অব তুরাগ উত্তরার প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান মো. আনিস-উর রশিদ ও ল্যাব ওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. জিনাত আরা।

অধ্যাপক সালাহউদ্দীন শাহ বলেন, হিমোফিলিয়া একটি বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। যাকে বলা হয় X linked recessive disorder. বিশ্বে প্রতি ১০ হাজারে একজন এই রক্তক্ষরণ রোগে ভুগছে আর তাদের ৭৫ ভাগ রোগী সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত আছে।

সে হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার হওয়ার কথা থাকলেও দেশীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রায় ৩ হাজার রোগী নিয়মিতভাবে চিকিৎসা সেবার আওতায় আছে।  
এই রোগে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই শরীরে কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত আর বন্ধ হয় না। ক্রোমোজোমে F8 ও F9 নামক জিন থাকে যা F VIII ও F-IX ক্লোটিং প্রোটিন তৈরি করে। এই ক্লোটিং প্রোটিন রক্তের সাদা অংশে পরিমাণ মতো থাকে। ফলে শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তক্ষরণ আপনা আপনিই বন্ধ হয়। আর এই প্রোটিন কম পরিমাণ থাকলে কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগকে বলা হয় ‌হিমোফিলিয়া।

তিনি আরো বলেন, রক্তে ফ্যাক্টর-৮ এর ঘাটতির কারণে হিমোফিলিয়া-এ এবং ফ্যাক্টর-৯ এর অভাবে হিমোফেলিয়া-বি’তে আক্রান্ত হয়। হিমোফেলিয়া হলে রোগীর রক্তপাত বেড়ে যায়। নারীদের মাসিকে দীর্ঘদিন ধরে রক্ত ঝরা, মাঝে মাঝে নাক বা দাঁত দিয়ে রক্ত বের হওয়া, দাঁতের অপারেশনের পর প্রচুর রক্তপাত হওয়া এবং প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি হিমোফিলিয়া রোগের লক্ষণ।

তিনি আরো বলেন, ৮৫ শতাংশ রোগীর হিমোফেলিয়া-এ এবং ১৫ শতাংশ রোগীর হিমোফেলিয়া-বি হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্তদের সবসময় সচেতনতার সঙ্গে চলাফেরা করা উচিৎ। যেন আঘাতে রক্তক্ষরণ না ঘটে। আক্রান্ত হলে রোগীকে রক্ত দিতে হবে। কারণ রক্ত থেকে তৈরি ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা এ রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সক্ষম। তবে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা তৈরিতে অনেক রক্ত ও বেশ সময় লাগে। প্লাজমা দেয়ার থেকে ফ্যাক্টর দেয়ার রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। এতে রোগীরা প্লাজমা বাহিত অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইব্রাহিম খলিল আল জায়াত পিনাক বলেন, হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। এসব রোগীকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন অব হিমোফিলিয়া। তিনি ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের পাশে থাকার জন্য সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, অসহায় মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি ধনীদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সঠিক চিকিৎসা পেলে হিমোফিলিয়া রোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

সম্পর্কিত খবর