গাড়িতে বসে ভ্যানচালককে মেয়রের ‘বেতের বাড়ি’

সংগৃহীত ছবি

গাড়িতে বসে ভ্যানচালককে মেয়রের ‘বেতের বাড়ি’

অনলাইন ডেস্ক

নিজের ব্যবহৃত গাড়িতে বসে আছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত পেতে রেখেছেন সিগারেট কোম্পানির ভ্যান চালক এক যুবক। গাড়ির জানালা দিয়ে বেত উঁচিয়ে ওই চালকের হাতে বাড়ি দিতে উদ্যত হয়েছেন মেয়র। সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এই ঘটনার ছবি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নগরবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে কারও শরীরে হাত তোলার অধিকার মেয়রের নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টার দিকে মেয়র আরিফের গাড়ি যাচ্ছিল। চৌহাট্টায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সামনে সিগারেট কোম্পানির ভ্যানগাড়ির চালক রাস্তার পাশের দোকানে সিগারেট ডেলিভারি দিতে যান।

ভ্যানগাড়ি পার্কিং দেখে মেয়র আরিফ গাড়ি থামিয়ে ভ্যানচালককে ডেকে নেন। এ সময় মেয়রের গাড়ির পাশে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিসিক কর্মীও লাঠি হাতে অবস্থান নেন। মেয়র আরিফ নিজের গাড়িতে বসে লাঠি বের করে ভ্যান চালকের হাতে আঘাত করেন এবং পার্কিংয়ের জন্য তাকে শাসিয়ে দেন। এই ঘটনার সময় মেয়রের গাড়ি বহরে থাকা আনসারের সদস্যও পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।

এদিকে কয়েক গজ সামনে আরেকটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারসহ রাস্তার পাশে আরও অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি অবৈধভাবে পার্কিং করা থাকলেও তাদের কোনো কথা না বলে মেয়র আরিফ চলে যান।  

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। প্রতিবাদ করলে উল্টো বিপদ হবে। মেয়র জিন্দাবাজারে রিকশা ঢুকতে দেন না। এ নিয়ে মুখ খুললে ভ্যানগাড়ি প্রবেশও বন্ধ করে দেবেন। এমন হলে চাকরি থাকবে না। ’

ওই ভ্যানগাড়ি ছিল একটি সিগারেট কোম্পানির। ওই কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ধ্রুব ভট্টাচার্য  বলেন, আমাদের চালকেরই ভুল ছিল। ভুল সময়ে ভুলভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমরা মালামাল সরবরাহ করছিলাম। তাই মেয়র মহোদয় আমাদের চালককে বেতের হালকা বাড়ি দিয়ে শাসিয়েছেন। যেহেতু ভুল আমাদেরই, তাই এ নিয়ে কোনো অভিযোগও নেই।

এই ঘটনার পর হযরত বিনয় ভদ্র নামে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে ভ্যানচালককে মারার ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘একজন নিপীড়ক মেয়র এবং আমাদের বিবেক। ২৩.০৪.২২ চৌহাট্টা, সিলেট। একজন সিগারেট কোম্পানির কর্মচারী ভ্যান রেখে ডেলিভারি দিতে গেছেন পাশের দোকানে। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো মেয়রের গাড়ি। তাকে দেখে এই ভ্যানচালক ভ্যান সরিয়ে নিতে গেলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে হাত পাততে বলেন এবং উনার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে দুটে বাড়ি দেন। কিন্তু একটু সামনেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিল, কিন্তু কবি সেখানে নীরব। এই শহরের অনেক রিকশা চালক ও খেটেখাওয়া মানুষের পিঠ খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে।

 এই বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের আগে নগরে যানজট যেন না হয়, সে জন্য কয়েক দিন আগেও পরিবহনশ্রমিকদের নিয়ে সিটি করপোরেশন সভা করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সকাল ১০টার আগে ভ্যান–জাতীয় যানগুলোকে মালামাল ওঠানো–নামানোর কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু আজ বেলা দেড়টার দিকে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দেখেন, ওই চালক দুটি ভ্যানগাড়ি দিয়ে মালামাল ওঠানো–নামানো করছেন। এতে সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে।

বেতের বাড়ি দেওয়ার কথা সত্য নয় দাবি করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি  বলেন, আমি ওই চালককে বেতের বাড়ি দিইনি। বেত উঁচিয়ে একটু শাসিয়েছি মাত্র। ভবিষ্যতে যেন এভাবে যান দাঁড় করিয়ে তিনি যানজট সৃষ্টি না করেন, পরে সেটি তাঁকে বুঝিয়ে বলেছি। অথচ বিষয়টি ভুল ব্যাখ্যা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ ছবিটি ছড়িয়ে অযথাই আমাকে বিতর্কিত করছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একজন যত বড় অপরাধীই হোক, কারও গায়ে হাত তোলার সুযোগ নেই। এটা পরিষ্কার মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেআইনি কাজ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কারও গায়ে হাত তুলতে পারেন না।

news24bd.tv/আলী