হাজীদের সেবাতেই আত্মতৃপ্তি তাদের

হজ কর্মী।

হাজীদের সেবাতেই আত্মতৃপ্তি তাদের

সৌদি আরব প্রতিনিধি, মোহাম্মদ আল-আমীন

আমাদের সেবার কোনো সীমানা নাই। স্বাধ্য অনুযায়ী কাজ করার চেস্টা করছি। মাঝে মধ্যে কিছু সমস্যা চলে আসে যা অতীতে কখনো ফেস করিনি। এখন সাহস হয়ে গেছে তাছাড়া আমাদের স্যার'রা যথেষ্ট সাপোর্ট দিচ্ছেন বলেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছি।

এভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বলছিলেন বাংলাদেশ হজ মিশন মদীনার মৌসুমী হজ কর্মী নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার আমিনুর রহমান। দীর্ঘ চার বছর যাবত খণ্ডকালিন চুক্তিভিত্তিক কাজ করা এই প্রবাসী আরও বলেন, টাকা আমার কাছে মুখ্য নয়। দেশ থেকে লক্ষাধিক হাজী আসে সেখানে অধিকাংশই বয়স্ক। তাদের সেবা দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি।

২০১৮সালের হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার বাংলাদেশি হজ পালনের জন্য সৌদি আরব আসেন। আর এই হাজীদের সেবা দেওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় সাড়ে ৪শ' নারী-পুরুষ মৌসুমী হজ কর্মী। যারা হজে পুরো সময় জুড়ে জেদ্দা, মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফা, মুজদালিফায় দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাধারণ প্রবাসী, বাংলাদেশি স্কুল এবং সৌদি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষক এবং গৃহিণী।

news24bd.tvnews24bd.tv

বছরের অন্যান্য সময় তারা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকলেও হজ মৌসুমের দুই/আড়াই মাস তারা নিয়োজিত থাকেন আল্লাহর মেহমান হাজীদের সেবা দেওয়ার কাজে। হজ কর্মী, গাড়িচালক, অনুবাদক, পরিচ্ছন্নকর্মী হিসাবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন তারা। দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের বিপরীতে কাজের ধরন অনুযায়ী ১১০ থেকে ১৩০ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়। মদিনায় আগে থেকেই চালু থাকলেও মক্কায় এ বছর প্রথমবারের মতো নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নারী হজ কর্মী।

মদিনার হজ কর্মীদের সুপারভাইজার রেজাউল করিম বলেন, এবারের হজ্বকে সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমাদের স্যারদের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করেছি। বিভিন্ন বয়সের ভিন্ন ভিন্ন মতের হাজীরা হজ পালনে আসেন আমরা যথাসম্ভব চেস্টা করি তাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার।

২ বছর যাবত হজ কর্মী হিসেবে কাজ করা প্রবাসী শিক্ষার্থী ফাতিমা খলিলুর রহমান বলেন, নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করছি এইজন্য যে আল্লাহর মেহমান হিসেবে সৌদি আরবে আসা নিজ দেশের মানুষদের সেবা করতে পারছি। গত বছরের চাইতে এ বছর আমাদের কাজের মান ভালো ছিল। সরকার সুযোগ দিলে অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনগুলোতেও আল্লাহর মেহমানদের পাশে থেকে সেবা দেওয়া অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি।

এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসমা আবুল খায়ের বলেন, হাজীদের সেবা করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। তাছাড়া এখান থেকে যা পাই সেটা দিয়ে আব্বুকে হেল্প করতে পারছি। এটাকে বড় একটি পাওয়া বলে মনে করি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মদিনায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মৌসুমী হজ অফিসার এবিএম আমিন উল্লাহ্‌ নুরী বলেন, হজ অফিস, বিমান বন্দর, চেক পয়েন্ট, হাঁসপাতাল ও হোটেল, হারামা শরীফসহ বিভিন্ন জায়গায় আমাদের হজ কর্মীরা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।

হাজীদের খিদদমত আমাদের ইবাদত, হাজীদের খিদমত আমাদের ইজ্জত। এই শ্লোগানগুলো দিয়ে আমরা হজ্বকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করি। ঠিকমতো কাজ করবে, ফাকি দেবে না এমন ওয়াদা করে তারা সকালে কাজে বের হয়। তারা এই কাজের লোক না হলেও তাদের সেবায় আমি সন্তুষ্ট যোগ করেন হজ মন্ত্রণালয়য়ের যুগ্ম সচিব আমিন উল্লাহ্‌ নুরী।

হজ কাউন্সিলর মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান জানান, হাজীদের সুযোগ-সুবিধা দেখার জন্যে প্রায় সাড়ে ৪শ' হজকর্মী রয়েছেন। তাদের সবাই হাজীদের খেদমতে নিয়োজিত। এরা সবাই এখানকার প্রবাসী ও নিবেদিত প্রাণ। হজ মৌসুমে এখানে কাজ করে হজকর্মীরা একদিকে আর্থিকভাবে বেশ ভালো সন্মানী পান, তারচেয়ে বড় কথা, দেশের মানুষদের প্রত্যক্ষ সেবা তথা আল্লাহর মেহমানদের জন্যে নিবেদিত প্রাণে কাজ করে নিজেরাও আনন্দ পান।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/আল-আমিন/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর