বাংলাবান্ধা বন্দরে নৈরাজ্য

বাংলাবান্ধা বন্দরে নৈরাজ্য

সরকার হায়দার • পঞ্চগড় প্রতিনিধি

দেশের সর্ব উত্তরের স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায় একটি সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। স্থলবন্দরে সিন্ডিকেটের সদস্যরা জোর করে আমদানিকারকদের কাছ থেকে কম দামে পাথর কিনে কিছু নির্দিষ্ট ব্যাবসায়ীর কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কুদরতি-খুদা মিলন।  

আজ (২১ মে) দুপুরে পঞ্চগড় প্রেস ক্লাবের হল রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বন্দরের সিএনএফ নেতারা।

তারা স্থলবন্দরের নীতিমালা অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিচালনার স্বার্থে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।  

news24bd.tv

সংবাদ সম্মেলনে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট মো. জাহাঙ্গীর আলম এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময়  
অ্যাসোসিয়েশন নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল এবং ভুটান থেকে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ হাজার টন পাথর আমদানি করা হয়।  

আমদানিকারকরা এই পাথর তাদের ইচ্ছেমতো যে কোনো স্থানে বিক্রি করার অধিকার রাখে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তার পোষ্য সন্ত্রাসী দিয়ে আমদানিকৃত পাথর তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করাতে বাধ্য করে । তাদের কাছে বিক্রি না করলে তারা হামলা এবং ছিনতাই করে পাথর নিয়ে যায়।  

গেল ১৯ মে সন্ধায় মেসার্স আঁখি এন্ড অপু ট্রেডার্স পাথর আমদানি করে। তারা সিন্ডিকেটের কাছে পাথর বিক্রি করতে অস্বীকার করলে  সিন্ডিকেট পরিচালিত কয়েকজন দালাল আঁখি এন্ড অপু এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মকছেদ আলীকে মারপিট করে। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  

news24bd.tv

এ ঘটনার পর সিএনএফ এজেন্টরা তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। ঘটনার দিন থেকে এ পর্যন্ত ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাথর নির্ভর এই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে রাজস্ব আদায়ও বন্ধ হয়ে গেছে।  

তারা আরও জানান, এই চক্রের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ, আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের কতিপয় নেতা জড়িত। এই সিন্ডিকেট চক্রটি স্থলবন্দরে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও অপতৎপরতার কারণে সিএন্ডএফ এজেন্টসহ স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। অনেকেই তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।  

অন্যদিকে, এই চক্রটির অপতৎপরতায় সরকার দৈনিক প্রায় ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, ওই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন থেকে এই সিন্ডিকেট বন্দরে অস্থিতিশীল একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। পাথর আমদানি করলে তাকে বিশেষ সুবিধা দিতে হচ্ছে । তিনি এবং তার সহযোগীরা টন প্রতি কয়েক হাজার টাকা লুট করে নিচ্ছে । এভাবে এই বন্দরে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়। ওই সিন্ডিকেটের কাছে পাথর বিক্রি না করলে তারা বিভিন্নভাবে আমদানিকারক এবং সিএনএফদেরকে নির্যাতন করে।  

news24bd.tv

এদিকে, চেয়ারম্যান কুদরতি-খুদা মিলন সংবাদ সম্মেলনকারীদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তুলেছেন। নিউজ টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, গেল ২৩ মার্চ বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির অফিস কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট মূল্যে পাথর আমদানি করে তা  একটি কমিটির মাধ্যমে কেনা-বেচার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমদানি মূল্য ঠিক রেখে বিক্রি করার ক্ষেত্রে সমিতির উন্নয়ন এবং যে ছেলেদের মাধ্যমে এটি পরিচালনা করা হবে, তাদের বেতন দেয়ার জন্য টন প্রতি ২-৩ টাকা বেশি নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।  

চেয়ারম্যানের ভাষ্য, ‘গেল দুই মাসে কল্যান তহবিলে জমা হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা এবং তা অফিসের উন্নয়নে খরচও করা হয়েছে।  এটা সকল ব্যাবসায়ীই জানে। এটা যদি সিন্ডিকেট হয় তবে আমার বিরুদ্ধে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা অধিকাংশই এই সিন্ডিকেটের সদস্য। ’

‘কারণ এ ব্যাপারে পর পর দু’টি সভায় তারা উপস্থিত ছিলেন এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে নির্দিষ্ট একটি কমিটি দ্বারা পাথর বিক্রির সিদ্ধান্তের রেজুলেশনে স্বাক্ষরও করেছেন। এখন তাদের স্বার্থে আঘাত লাগার কারণে তারা এমন অভিযোগ তুলেছেন । সংবাদ সম্মেলনের নেতারা কে কিভাবে ব্যবসা করছেন তা আমি জানি । সিএনএফ এজেন্টরা কোন আইনে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে তাও জানার দরকার আছে। ’
 
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিএনফ অ্যাসোয়িশনের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক নাসিমুল গণি, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য সাইদুর রহমান, খন্দকার আরিফ হোসেন লিপ্টন, আলমগীর হোসেন প্রমুখ।  

হায়দার/অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর