ঢাকাকে পর্যটকবান্ধব করতে ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির উদ্যোগ

ঢাকাকে পর্যটকবান্ধব করতে ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা শহরকে একটি পর্যটকবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

বুধবার (১০ মে) দুপুরে ঐতিহ্য বলয়-৫ এর যাত্রাপথ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ কথা বলেন। তাপস বলেন, আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার থেকে পর থেকে আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো ঢাকার যে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো রয়েছে, ঐতিহাসিক যে স্থাপনাগুলো রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করা।

দ্বিতীয়ত হলো আমাদের দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা।

যাতে করে পর্যটকরা এখানে এসে ঢাকার ঐতিহ্যকে অনুধাবন করতে পারে, উপভোগ করতে পারে। আমরা বহির্বিশ্বে যেভাবে দেখি, ঐতিহ্যবাহী শহরগুলোতে যেমনি পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে আমরা চাই ঢাকা শহরের পর্যটন শিল্পও সেভাবে গড়ে উঠুক। পর্যটকরা ঢাকামুখী হোক। ঢাকা হোক পর্যটকবান্ধব।
সেই লক্ষ্যেই আমরা সাতটি ঐতিহ্যের বলয় সৃষ্টি করছি।

সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এসব ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, 'আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমাদের পরামর্শকরা কাজ করছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঐতিহ্যের বলয়-৫ চিহ্নিত করেছি। একজন পর্যটক যদি আসে তাহলে সে এই বলয়ের কোন কোন স্থাপনাগুলো দেখবে, কিভাবে সে চলাচল করবে, কি কি উপভোগ করবে? এই বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি সবকিছু আমরা নির্ণয় করব এবং তাদের জন্য সে সুযোগ সুবিধাগুলো নিশ্চিত করব। '

তিনি বলেন, 'আমরা ৫ নম্বর বলয় নিয়ে আজ থেকে কাজ শুরু করছি। পর্যটকদের সুবিধা অনুযায়ী পর্যটকবান্ধব হিসেবে আমরা প্রথমে এই বলয়টাকে সাজাবো। পরবর্তীতে আমরা অন্যান্য বলয়গুলোকে সাজাবো। সবমিলিয়ে আমাদের মোট সাতটি বলয় হবে। এখানে পর্যটকরা এসে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে। তারা যাতে আনন্দ করতে, উপভোগ করতে পারে, খাবার খেতে -- এ ধরনের সকল সুযোগ-সুবিধা তারা পাবে। যাতে করে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ঢাকায় এসে স্বাচ্ছন্দ্যে আমাদের এই ঐতিহ্যের স্থাপনাগুলো উপভোগ করতে পারে, ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে তারা অনুধাবন করতে পারবে। '

এসময় ৭টি ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা নিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, "ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে আমাদের ৫ নম্বর বলয় শুরু হবে। আপনারা জানেন যে, এটা আমাদের জাতীয় মন্দির এবং সারাবিশ্বেই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের একটি খ্যাতি রয়েছে। এটার নান্দনিকতা রয়েছে, স্থাপত্যশৈলী রয়েছে। তার সাথে সাথে ধর্মীয় আকর্ষণও রয়েছে। সবমিলিয়ে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। এরপরে রয়েছে লালবাগ কেল্লা। যেটি বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত স্বনামধন্য একটি স্থাপনা। এই লালবাগ কেল্লার অনেক অংশ ভেঙ্গে গেছে। সেগুলো কিভাবে সংস্কার করা যায় সেটাও আমরা এই বলয়ের আওতায় বিবেচনা করব। এরপর আরেকটি বলয় হলো আমাদের আহসান মঞ্জিল কেন্দ্রিক। তারপর আরেকটি বলয় হলো আমাদের রুপলাল হাউজ কেন্দ্রিক, আরেকটি হলো বড় কাটরা ও ছোটকাটরা নিয়ে। এভাবে আমরা বিভিন্নভাবে সাতটি বলয় সৃষ্টি করছি। আজকে আমরা একটি বলয় দিয়ে শুরু করছি। পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে আমরা সব বলয় সৃষ্টি করব। যেখানে একজন পর্যটক হেঁটে হেঁটে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই  সে সকল স্থাপনা উপভোগ করতে পারে। '

সম্প্রতি ধানমন্ডিতে গাছ কাটা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'গাছ কাটা নিয়ে কেউ কেউ মর্মাহত হতেই পারেন, কষ্ট পেতেই পারেন। এটা তাদের আবেগের বিষয়। আবার অনেকেই ঢালাওভাবে অনেক কথা বলছেন। পূর্ণ তথ্য না নিয়েই কথা বলেন। আসলে উন্নয়ন কাজে অনেক সময় গাছ ফেলে দিতে হয়, কেটে ফেলতে হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু আমরা তখনই করি, যখন নিতান্তই আর কোনো উপায় নেই। সুতরাং, যে গাছগুলোকে ফেলে দিতে হয়েছে বা কেটে ফেলতে হয়েছে সেই জায়গায় আমরা অবশ্যই অন্য গাছ লাগাবো। উন্নয়ন কাজের প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে সেখানে নতুন করে আমরা তিনগুণ বেশি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি একটা গাছ অপসারিত হয় তাহলে সেখানে আমরা তিনটা গাছ লাগানোর লক্ষেই কাজ করছি। ওই সড়ক বিভাজনে আমরা আরও অনেক বেশি গাছ লাগাব। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমী প্রায় দশ হাজার গাছ লাগাব। সুতরাং এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। '

এর আগে মেয়র ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।  

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিকের অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ, করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ, ঢাকায় গেজেটভূক্ত ৭৪টি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার মধ্যে ৬৬টির অবস্থান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায়। এ ৬৬টি স্থাপনাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক কয়েকটি স্থাপনাকে নিয়ে ৭টি ঐতিহ্য বলয় সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

news24bd.tv/FA