'সাংবাদিক ইব্রাহীম রনিকে কোনো ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়নি'

'সাংবাদিক ইব্রাহীম রনিকে কোনো ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়নি'

আতাউর রহমান কাবুল

সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, টিউবারকিউলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা না হলেও বাংলা ট্রিবিউনের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহীম রনিকে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যক্ষ্মা না হয়েও যক্ষ্মার পুরো কোর্স সম্পন্ন করায় তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ভুল চিকিৎসায় অভিযুক্ত করা হয়েছে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক, ল্যাব এইড হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আলী হোসেনকে।

এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।  

বিষয়টি নিয়ে নিউজ টোয়েন্টিফোরের পক্ষে অনুসন্ধান করা হয়েছে। দেশের শীর্ষ বক্ষব্যাধি চিকিৎসকরা বলছেন, অধ্যাপক আলী হোসেন কোনো ভুল চিকিৎসা দেননি।  বরং তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গাইডলাইন মেনেই রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন।

অন্যদিকে জানা গেছে, সাংবাদিক ইব্রাহীম রনির অবস্থাও গুরুতর নয়। তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি অবস্থায় হাঁটাচলাও করছেন।  

গাইড লাইনে যা আছে
টিবি বা যক্ষ্মা রোগ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) framework for tuberculosis revision এ বলা আছে, A clinically diagnosed TB case is one who does not fulfil the criteria for bacteriological confirmation but has been diagnosed with active TB by a clinician or other medical practitioner who has decided to give the patient a full course of TB treatment. This definition includes cases diagnosed on the basis of X-ray abnormalities or suggestive histology and extrapulmonary cases without laboratory confirmation. Clinically diagnosed cases subsequently found to be bacteriologically positive (before or after starting treatment) should be reclassified as bacteriologically confirmed.

অর্থাৎ ব্যাকটিরিওলজিকাল পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া ছাড়াও ক্লিনিক্যালি টিবি কেস হিসেবে একজন চিকিৎসক রোগীকে টিবি বা যক্ষ্মা চিকিৎসার সম্পূর্ণ কোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।  সূত্রের লিঙ্ক

অন্যদিকে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) গাইড লাইনে স্পষ্ট লেখা আছে, কফ পরীক্ষায় যক্ষ্মা শনাক্ত না হলেও উপসর্গ এবং চেস্ট এক্সরের ভিত্তিতে `ক্লিনিক্যালি ডায়াগনসড্ কেস' হিসেবে পূর্ণ মেয়াদে টিবির চিকিৎসা দেওয়া যাবে।  

এ ব্যাপারে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তা এমবিডিসির সহাকারী পরিচালক ডা. আফজালুর রহমান বলেন, যক্ষ্মার জীবাণু না পেলেও ক্লিনিক্যালি অন্যান্য বিচার-বিশ্লেষণে চিকিৎসক মনে করলে যক্ষ্মার চিকিৎসা শুরু করতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

জাতীয় বক্ষ্মব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক, দেশের বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রাশিদুল হাসান বলেন, জিন এক্সপার্ট মেশিনে পরীক্ষার ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে যক্ষ্মার পজিটিভ রিপোর্ট আসে আর ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে নেগেটিভ আসে। তবে আমরা চেস্ট এক্সরেতে শ্যাডো পেলে, জ্বর ও কাশি থাকলে ক্লিনিক্যাল গ্রাউন্ডে পজিটিভ ধরে নিয়ে যক্ষ্মার ডোজ শুরু করার পরামর্শ দেই।  

অধ্যাপক আলী হোসেনের বক্তব্য
সাংবাদিক ইব্রাহীম রনিকে যক্ষ্মার যে ওষুধ দিয়েছিলেন তা কোনো ভুল চিকিৎসা ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আলী হোসেন নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর রোগী চাঁদপুর থেকে আমার কাছে এসেছিলেন। মূলত চাঁদপুরের চিকিৎসক তাকে প্রথমে যক্ষ্মার ওষুধের ডোজ দিয়েছিলেন। রোগী তা সেবন না করে আমার পরামর্শ চাইলে আমি সেই ওষুধ-ই চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলাম।

অধ্যাপক ডা. আলী হোসেন বলেন, আমার কাছে রোগী যখন আসেন তখন ওনার চেস্ট এক্সরেতে যক্ষ্মার একটা 'শ্যাডো' ছিলো। ওই সময় রোগীর জ্বর ছিল এবং ওজনও যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। ফলে আমি তাকে যক্ষ্মার ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। রোগী ওষুধ খাওয়ার দুইমাস পর আবার আমার চেম্বারে এলে দেখা যায়-এক্সরেতে ওই শ্যাডোটা আর নেই। তখন ওনার জ্বর ছিল না, ওজনও বেড়েছিল যথেষ্ট। তার মানে হলো, চিকিৎসায় তার উপকার হয়েছে এবং তিনি সুস্থ।  এই রোগী আবার চার মাস পর যখন আমার চেম্বারে আসেন তখন যক্ষ্মার সমস্যা পাওয়া যায়। এটাতো হতেই পারে। এমডিআরসহ যেকোনো রোগ আবার ফিরে আসতেই পারে।

অধ্যাপক ডা. আলী হোসেন বলেন, যক্ষ্মার ন্যাশনাল গাইডলাইনেই বলা আছে -যদি রোগীর ওজন কমে যায়, বিকেলের দিকে জ্বর আসে, কাশি থাকে তবে যক্ষ্মার ওষুধ ফুল ডোজ দেওয়া যাবে। সুতরাং আমি এখানে কোনো ভুল চিকিৎসা দেইনি।

বর্তমান চিকিৎসকের বক্তব্য
সাংবাদিক রনি বর্তমানে ভর্তি আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমানের অধীনে। সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, এখানকার চিকিৎসকরা নাকি জানিয়েছেন, তার ফুসফুস দুটিতে অস্বাভাবিকভাবে ক্ষত হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে যক্ষ্মার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। কোনো চিকিৎসকের বরাত দিয়ে অবশ্য রিপোর্ট লেখা হয়নি। তবে এতে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক আতিকুর রহমান নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, যিনি নিউজ লিখেছেন সেটা তার নিজের কথা। আমি, এমনকি আমাদের কোনো চিকিৎসক এমন কথা বলেননি। আর রোগী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। এ রকম লেখা ঠিক না। রোগী রীতিমতো হাঁটাহাঁটিসহ সব করতে পারে। আপনি চাইলে কাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গিয়ে রোগীকে দেখে আসতে পারেন।

এর আগে কি ভুল চিকিৎসা হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে আপনাদের- এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, ভুল চিকিৎসা নয়। এটাতো যক্ষ্মা বা টিবি চিকিৎসার একটা ধাপ। পরীক্ষায় টিবির জীবাণু যে সব সময় পাওয়া যায় তা কিন্তু নয়; আবার ওষুধ যে সব সময় কাজ করে তাও নয়।