নির্বাচনসহ পাঁচ ইস্যুতে আলোচনা করবে মার্কিন প্রতিনিধিদল

উজরা জেয়া

নির্বাচনসহ পাঁচ ইস্যুতে আলোচনা করবে মার্কিন প্রতিনিধিদল

নির্বাচনসহ অন্তত পাঁচটি ইস্যুতে আলোচনা করবে মার্কিন প্রতিনিধিদল। আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফরে আসছে এই প্রতিনিধিদল। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা শিবির পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারেও যাবেন।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি এবং তিব্বতবিষয়ক মার্কিন বিশেষ সমন্বয়ক উজরা জেয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অঞ্জলি কৌরও থাকছেন এই দলে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত শুক্রবার রাতে উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটির সফরসূচি ঘোষণা করেছে। সফরসূচি অনুযায়ী, মার্কিন প্রতিনিধিদলটি গতকাল শনিবার  ভারত সফর শুরু করেছে। এ অঞ্চলে সফর শুরুর আগে উজরা জেয়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান ও ভারতের রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে এবং তার মধ্যে নির্বাচন আসতে পারে। তবে এটি নির্বাচনকেন্দ্রিক সফর—এমনটি ভাবাও ঠিক হবে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া ৮ থেকে ১৪ জুলাই ভারত ও বাংলাদেশ সফর করবেন। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান, গণতন্ত্র, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের অগ্রগতিসহ মার্কিন-ভারত অংশীদারির গভীরতা ও স্থায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করতে তিনি ভারতে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, শ্রম ইস্যু, মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবপাচার মোকাবেলাসহ অভিন্ন মানবিক উদ্বেগ নিয়ে আলোচনার জন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেই উজরা জেয়া ধর্মীয় ও নৃগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুসহ মত প্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা, নারী ও কন্যাশিশুদের অন্তর্ভুক্তি, প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে এমন নাগরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধিদলের সফর নিয়ে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা আছে। এর মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এই লক্ষ্যে দেশটি গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে।

ওই নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেওয়া ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন। ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশটি থেকে এখন পর্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের এটিই প্রথম সফর।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডারসেক্রেটারি একজন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা। ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তাঁর আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া ভারতে অবস্থানরত তিব্বতের ধর্মগুরু দালাইলামার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর মাধ্যমে তিনি চীনকে বার্তা দেবেন।

উজরা জেয়া নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে আঞ্চলিক ইস্যুতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও স্থিতিশীলতা নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরব। তবে ভারত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে—এমনটিই নয়াদিল্লি বলে থাকে। নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শেখ হাসিনার সরকারের ভূমিকার কথাও ভারত স্বীকার করে।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে ভারতেও আলোচনা হয়েছে। গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করবেন। শেষ পর্যন্ত বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল কি না সে বিষয়ে কোনো পক্ষই কোনো বক্তব্য দেয়নি।

news24bd.tv/আইএএম