পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন ধর্ম ও মতের বর্ণনা

ফাইল ছবি

পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন ধর্ম ও মতের বর্ণনা

 আলেমা হাবিবা আক্তার

ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার ধর্ম। চরম শত্রুর সঙ্গে ইসলাম ইনসাফপূর্ণ ব্যবহারের নির্দেশ দেয়, বিশেষত ভিন্নমত গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষেত্রে সহনশীল হওয়াই ইসলামের শিক্ষা। কোরআনে বর্ণিত ভিন্নমতাবলম্বীদের বক্তব্য থেকে মুমিনরা সহজেই সহনশীলতার পাঠ গ্রহণ করতে পারে। নিম্নে কোরআনে ভিন্নমতের প্রকাশ ও সহনশীলতার পাঠ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

কোরআনে ভিন্নমতের প্রকাশ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ অবিশ্বাসী, ধর্মদ্রোহী ও দ্বিনবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত মুনাফিকদের বক্তব্য প্রকাশ করেছে, যা মুমিনদের ভিন্নমতের মানুষের কথা শুনতে উদ্বুদ্ধ করে। যেমন :

১. ইহুদিদের বক্তব্য : কোরআনে আল্লাহর প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশকারী ইহুদি জাতির একাধিক বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘ইহুদিরা বলে, আল্লাহর হাত রুদ্ধ। তারা রুদ্ধহস্ত এবং তারা যা বলে তজ্জন্য তারা অভিশপ্ত; বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত।

তিনি যেভাবে ইচ্ছা দান করেন। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬৪)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কথা আল্লাহ শুনেছেন যারা বলে, আল্লাহ অবশ্যই অভাবগ্রস্ত আর আমরা অভাবমুক্ত। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮১)

২. খোদাদ্রোহীর বক্তব্য : পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ংকর খোদাদ্রোহীদের একজন ফেরাউন। সে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছিল এবং মুসা (আ.) ও তাঁর জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল।

পবিত্র কোরআনে তার বক্তব্য এসেছে। সে বলেছিল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য আছে বলে আমি জানি না। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৩৮)

তার ব্যাপারে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু সে অস্বীকার করল এবং অবাধ্য হলো। অতঃপর সে পেছনে ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হলো। সে সবাইকে একত্র করল এবং উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করল এবং বলল, আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।

অতঃপর আল্লাহ তাকে আখিরাত ও দুনিয়ায় কঠিন শাস্তিতে পাকড়াও করলেন। ’ (সুরা : নাজিআত, আয়াত : ২১-২৫)

৩. অবিশ্বাসীদের বক্তব্য : বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয় এমন বহু অবিশ্বাসীর বক্তব্যও কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন এবং আমরা পুনরুত্থিতও হবো না। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ২৯)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদেরকে বলা হয়, সিজদাবনত হও রহমানের প্রতি, তখন তারা বলে, রহমান আবার কে? তুমি কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব?’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৬০)

৪. মুনাফিকদের বক্তব্য : পবিত্র কোরআনে মুসলমানের মুখোশধারী মুনাফিক সম্প্রদায়ের বক্তব্যও স্থান পেয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, মুনাফিকরা ও যাদের অন্তরে ছিল ব্যাধি তারা বলছিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ১২)

৫. বিদ্রুপকারীদের বক্তব্য : যারা আল্লাহ, তাঁর রাসুল, কোরআন ও দ্বিন নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত, কোরআনে তাদের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছেন? তখন তারা বলে, পূর্ববর্তীদের উপকথা! ফলে কিয়ামতের দিন তারা বহন করবে তাদের পাপাভার পূর্ণ মাত্রায়। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ২৪-২৫)

ভিন্নমত প্রচারে সতর্কতা

দ্বিন, সমাজ ও সামাজিক মূল্যবোধ বিরোধীদের বক্তব্য প্রচারের সময় মুসলিমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো স্মরণে রাখবে। যেমন-

১. বক্তব্যের মন্দ দিক পরিষ্কার করা : কোনো সন্দেহ নেই আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য বর্ণনা করেছেন মানবজাতিকে সতর্ক করার জন্য। যেন মানুষ বুঝতে পারে আল্লাহর অবাধ্যরা দুনিয়া আখিরাতে কী কী কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। কোরআনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের বক্তব্যের অসারতা ও পরিণামও তুলে ধরা হয়েছে। সুতরাং মুমিন যদি দ্বিনবিরোধীদের কোনো বক্তব্য প্রচার করে তারাও এসব বক্তব্যের মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এরাই তারা, যারা অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি ও তাঁর সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোনো ব্যবস্থা রাখব না। ’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ১০৫)

২. কুতর্ক পরিহার করা : ভিন্নমত প্রচারের সময় মুমিনরা কুতর্ক পরিহার করবে। পবিত্র কোরআনে যাকে এভাবে চিত্রিত করা হয়েছে, ‘আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিয়ো না। কেননা তারা সীমা লঙ্ঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকেও গালি দেবে। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১০৮)

৩. মন্দের পরিবর্তে ভালো করা : যদি ভিন্নমতাবলম্বীরা বিতর্কে জড়িয়ে যায়, তবে মুমিনরা উত্তম পন্থা অবলম্বন করবে। কেননা মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। ’ (সুরা : হা-মিস-সাজদা, আয়াত : ৩৪)

সর্বজনীন কল্যাণই মুমিনের লক্ষ্য

ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে মুমিনের যেকোনো ধরনের আলাপ, সংলাপ ও সৌজন্যপূর্ণ বিতর্কের মূল লক্ষ্য হবে সর্বজনীন কল্যাণ। মুমিন রহমাতুল্লিল আলামিনের উত্তরসূরি হিসেবে তাদের প্রতি সর্বদা কল্যাণকামী হবে। ঠিক যেমনটি পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বলো, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করে থাকেন, আর তা তোমাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছে, আমি কি এ বিষয়ে তোমাদের বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা তা অপছন্দ করো? হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের কাছে ধন-সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহরই কাছে। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ২৮-২৯)

আল্লাহ সবাইকে সুপথ দান করুন। আমিন।