ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

সংগৃহীত ছবি

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

অনলাইন ডেস্ক

ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বিচারপ্রার্থীরা যাতে দ্রুত ন্যায় বিচার পায়, সে লক্ষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারিক কর্মকাণ্ডে মামলা নিষ্পত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারযু গান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। আশা করব, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনায়েড’ প্রবাদটি বিচার বিভাগে উদাহরণ হিসেবে আর ব্যবহৃত হবে না।

সোমবার ১৮ (ডিসেম্বর) ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস’ উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি মামলা নিষ্পত্তির পর রায়ের কপির জন্য যেন বিচারালয়ের বারান্দায় ঘুরতে না হয়, সে ব্যাপারেও সবাইকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন।

রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, সুপ্রিম কোর্ট ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে ও জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ৩০ লাখ শহিদের রক্তে লেখা সংবিধানের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করবেন। অমর শহিদের রক্তে লেখা সংবিধান রাষ্ট্র পরিচালনা ও বাঙালির অধিকার আদায়ের যেমন অনন্য দলিল, তেমনি বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে মুক্তির পথ দেখাবে।

আইনজীবীদের বিচার ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনজীবীদের সহায়তা ছাড়া বিচারের কাজ কিছুতেই অগ্রসর হতে পারে না। বিচার কাজে বেঞ্চ ও বারের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা খুবই জরুরি। আইন, নির্বাহী ও বিচার- রাষ্ট্রের এই ৩ অঙ্গের সমন্বয় ও সহযোগিতা রাষ্ট্র পরিচালনায় খুবই অপরিহার্য।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক এবং চূড়ান্ত ব্যাখ্যা প্রদানকারী। সুপ্রিম কোর্টের জুডিসিয়াল রিভিউ’র ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টই রায়ের মাধ্যেম অসাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বর্তমানে বিচার বিভাগের গুরুদায়িত্ব হচ্ছে, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত মামলাজট নিরসন করা। এই জট নিরসন করতে পারলে বিচারপ্রার্থী মানুষকে যেমন দ্রুত ন্যায়বিচার প্রদান করা সম্ভব, তেমনি বঙ্গবন্ধুর সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যও সফল হবে। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হবে।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, দুর্নীতি নির্মূল, বিচার ব্যবস্থায় গতিশীলতা আনয়ন, গবেষণামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত মানোন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন নানা পদক্ষেপ জোরদার করেছে।

তিনি বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তিতে বিচার বিভাগের সক্ষমতা সংকুচিত হওয়া এবং এ সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ দেওয়ার পাশাপাশি বড় ধরনের আইনি সংস্কারের গুরুত্বের কথা ব্যক্ত করেন। উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতে বিচারক সংকটের কথা তুল ধরে প্রধান বিচারপতি পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট জাজেস কমিটির সভাপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

এদিকে ‘সুপ্রিম কোর্ট দিবস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি দিবস’ পালন করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের সভাপতিত্ত্বে সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলালের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনয়াতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম প্রমুখ।