বিদেশে একা সন্তান আর দেশে কাঁদছে মায়ের মন

বিদেশে একা সন্তান আর দেশে কাঁদছে মায়ের মন

হাসিনা আকতার নিগার

মনের বোবা কান্নায় চোখে জল আসে না। সব কিছু থমকে গেছে। সারা বিশ্ব আজ লড়াই করছে ক্ষুদ্র একটা ভাইরাসের সাথে। তার ক্ষমতার কাছে এখনো পরাজিত মানুষ।

বিধাতার কাছে সার্বক্ষণিক একটাই চাওয়া, এ বিপদ থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করো।

এক সাথে সব দেশ আজ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। গ্লোবাল ভিলেজ শব্দটা আগামীতে কতটা অর্থবহ হবে তা এখন প্রশ্ন হয়ে রইল। এ মুহূর্তে ভারী ভারী কথাতে অনেক বেশি শঙ্কিত হয় মায়ের মন।

বিদেশ পড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে এত উদ্বিগ্নতা এভাবে জীবনে আসবে তা ছিল কল্পনাতীত। ঘুমহীন রাতে অপেক্ষার প্রহর কাটছে শুধু সন্তানকে কাছে পাওয়ার আকুলতা নিয়ে।

সব বাবা-মা চায় সন্তানের জন্য একটা সাজানো পৃথিবী ও সুন্দর জীবন। সে জন্য সন্তানকে উচ্চ শিক্ষা দিতে ছেলেমেয়েকে বিদেশে পাঠায়। সাধারণত উন্নত বিশ্বে পড়ালেখার সিস্টেমে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে না। আর তাদের জীবনযাত্রাতে অনিশ্চিয়তা নেই বললে চলে। তাই কোভিড-১৯ শুরু হবার পরেও বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে বিদেশে রয়ে গেছে পড়ালেখার কারণে। তাদের যুক্তির কাছে বাবা-মায়ের আবেগ টিকেনি। ক্লাস পরীক্ষার কারণে তারাও বাবা-মায়ের কথা শুনে দেশে ফিরে আসেনি।

কিন্তু  কোভিড-১৯ আবেগ, যুক্তিকে মিথ্যে করে দিয়েছে। সামাজিক দূরত্বের নামে কার্যত আলাদা করে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। করোনা ভাইরাসের জীবাণু শরীরের মাধ্যমে বহন করে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য  দেশে নিয়ে যায়। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্ধ হয়ে যায় সব দেশের বিমান চলাচল। ফলে এক দেশের সাথে আরেক দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় চাইলেও সন্তান বা মা-বাবা কেউ কারো কাছে যাওয়া অসম্ভব। অনলাইনেই যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। একজন মা, একজন বাবার কাছে কোভিড-১৯ আপৎকালীন সময়ে একটাই ভাবনা, 'আবার কবে সন্তানকে নিজ হাতে ছুঁয়ে দেখব। ' বিদেশের একা জীবনে ছেলে-মেয়েরা কী করে পার করছে তাদের ঘরবন্দী জীবন। সব কিছু লকডাউন। শরীর খারাপ করলে ছেলে বা মেয়েটাকে কে দেখবে এ সব চিন্তা করলে স্থির থাকা অসম্ভব হয়। তাই প্রবাসে থাকা ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই মা-বাবার।   

বিদেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি কোনোকালে। আর এ মহামারীর কালে কিছু প্রত্যাশা করা হবে অহেতুক। তবে এ মুহূর্তে তারা যদি অন্তত দেশের শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েরা কে-কোথায় আছে সে তথ্য সংগ্রহ করে রাখত। তা হয়ত একটা স্বস্তির জায়গা হতো।

সন্তানকে ফোন করে না পেলে ভয়ে অস্থির হয় মা-বাবা। বিদেশের খবরে কোভিড-১৯ এর পরিস্থিতির অবনতি দেখে কান্না পায়। শুধু মনে হয়, 'কেন বাচ্চাটাকে জোর করে নিয়ে এলাম না। ' এক ধরনের অসহায়ত্ব সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতি আর নিয়তির হাতে এখন সব কিছু।

ছেলেমেয়েগুলো এ মহামারীর কালে যেন ভালো থাকে এ প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বিধাতার কাছে একটাই চাওয়া, 'এ  বিপদ দূর করে আমার সন্তানকে তুমি ভালো রাখো প্রভু। '

লেখক : কলামিস্ট 

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর