মিসাইল-কয়রা-চিল-সাপ ঘুুড়ি উড়ছে নাটোরের আকাশে

মিসাইল-কয়রা-চিল-সাপ ঘুুড়ি উড়ছে নাটোরের আকাশে

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

যাদের দুরন্তপনায় মেতে থাকার কথা, সেই শিশু-কিশোররাও কার্যত এই দুঃসময়ে ঘরবন্দী। এই বন্দীদশা থেকে পরিত্রাণ পেতে উত্তরের জেলা নাটোরে শিশু-কিশোরদের অনেকেই মেতে উঠেছে ঘুড়ি উৎসবে।

রাতের আকাশে শত শত ‘আলোকিত’ ঘুড়ি উড়ছে জেলার গ্রামগুলোতে। ঘুড়িগুলোর মধ্যে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা রঙের এলইডি বাতি।

লকডাউনের মধ্যে এই ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য রাতের প্রকৃতিতে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।

অনেকে বলছেন, মনোমুগ্ধকর এই আয়োজন যেন করোনামুক্ত ভোরের বার্তা। করোনা পরিস্থিতে থমকে যাওয়া জনজীবনে স্বস্তির এক ছোঁয়া নিয়ে নাটোরের আকাশে উড়ছে শতশত বাহারি ঘুড়ি। লাল-নীল-সাদা -কালো-হলুদ-খয়েরি- এ যেন প্রকৃতির এক অবাক করা মনোরম দৃশ্য।

বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নাটোর জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের মাঠে, শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে, রেল লাইনের ধারে এ যেন বাঙলার অপরুপ সৌন্দর্যে শোভিত এক রঙিন পরিবেশ।

ছোট, বড় লম্বা, চিকন –অনেক রকম ঘুড়ি উড়ছে আকাশজুড়ে। তাছাড়াও কেউ কেউ ঘুড়ি ওড়ানোর টিম বানিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করছে, মিসাইল ঘুড়ি, কয়রা ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি, সাপ ঘুুড়ি ও লাইটিং করে বানানো হচ্ছে ফানুষ ঘুড়ি। ঘুড়ি ওড়ানোর এমন আয়োজনে বিমোহিত এখন নাটোরবাসী।

নাটোরের নলডাঙ্গার মাধনগর গ্রামের মমিন মোল্লা বলেন, ঘুড়ি আমার একটি শখ, নীল আকাশে ঘুড়ি উড়াতে আমার অনেক ভালো লাগে।

ঘুড়ি ওড়ানোর এমন আয়োজন ও মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সারা দেখে নাটোরের নলডাঙ্গার শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ তোতা বলেন, ঘুড়ি ওড়ানোর এমন আয়োজনকে তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন।

ঘুড়ি ওড়ানোর এমন দৃশ্য দেখে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সিনিয়র সাংবাদিক মামুনুর রশীদ বলেছেন, একটা সময় ছিল যখন আমরা বিকেল হলেই বেরিয়ে পরতাম ঘুড়ি ওড়াতে, যা বর্তমান সময়ে চোখে পরে না। তবে করোনাকালীন এমন সময়ে ঘুড়ি বানানো ও ওড়ানোর আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা বাঙালী, আমাদের চিন্তা ও চেতনায় বাঙালী ঐতিহ্যের যে দম্ভ তা ঘুড়ি ওড়ানোর এমন আয়োজনে আবারও প্রকাশ পেয়েছে।

পরিবেশ কর্মী ফজলে রাব্বী বলেন,দেশের এমন পরিস্থিতে ঘুড়ি ওড়ানোর এই আয়োজন অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে মানুষের মনে। তাছাড়া বিভিন্ন শ্রেশি-পেশার মানুষের মধ্যেও ব্যাপকভাবে সারা জাগিয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর এমন আয়োজন। বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন নাটোর জেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
কিন্তু-অনেক সময়ই দেখা যায় শহর কিংবা গ্রামে ঘুড়ি উড়ানোর সময় সেটা বিদ্যুৎ লাইনের কাছাকাছি চলে আসে। বিষয়টি নিয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

ঘুড়ি উড়োনোর বিষয়টি নিয়ে নলডাঙ্গা সাব-জোনাল অফিস যোগাযোগ করলে তারা বলেন, অনেক সময় ঘুড়ি বিদ্যুৎ লাইনের সাথে আটকে যায় বা সুতো ছিঁড়ে ঘুড়ি সঞ্চালন লাইনের সাথেই আটকে যেতে পারে। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমন অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা হলে সকলেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এসব অনেক সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটেরও কারণ হয়ে থাকে। তাই সবার উচিৎ বিদ্যুৎ লাইনের আশেপাশে ঘুড়ি উড়ানো পরিহার করা।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর