এবারের মার্কিন নির্বাচনে যে বিষয়টি প্রভাব ফেলবে সবচেয়ে বেশি

এবারের মার্কিন নির্বাচনে যে বিষয়টি প্রভাব ফেলবে সবচেয়ে বেশি

অনলাইন ডেস্ক

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরপরই শুরু হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।   নির্বাচনে প্রধান দু্ই দল হলো: ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান।   দেশটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।

এ নির্বাচনের প্রভাব থাকে গোটা বিশ্বজুড়ে। তাই দেশটির নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই বিশ্বের প্রতিটি দেশের আনাচে-কানাচে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শুধু তার নিজ দেশের নেতা নন। তিনি সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।

তিনি যা করেন তা আমাদের সবার জীবনে কিছু না কিছু প্রভাব ফেলে। এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের জয় পরাজয়ের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের বিষয়টি বড় ফ্যাক্ট বলে মনে করা হচ্ছে।
 
বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। রোববার (১ নভেম্বর) পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯৪ লাখ ২ হাজার ৫৯০। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭২ জন।

এমন অবস্থার মধ্যেই আগামীকাল দেশটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে এক নম্বর ইস্যু যে করোনাভাইরাস, তাতে মার্কিন বিশ্লেষকদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই।  


আরও পড়ুন: ফ্রান্সে তিন সন্দেহভাজনের মুক্তি


করোনা পরিস্থিতি এবারের নির্বাচনে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শুরু থেকেই করোনা মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যর্থতা নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। এমনকি সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, ১০ জন মার্কিন নাগরিকের মধ্যে অন্তত ছয়জন মনে করছেন, করোনা নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন ট্রাম্প।

তবে করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্প সরকারের কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়া ভোটের দিন প্রকাশ পাবে কি না, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

কৃষ্ণাঙ্গ এক তরুণী বিবিসিকে বলেন, ‘যেভাবে ট্রাম্প পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন, তা অনেক দুর্বল। ’ শ্বেতাঙ্গ এক নারী বলছেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) চান না যে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ুক, সে বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ’


আরও পড়ুন: কাজল আগারওয়ালের বিয়ে দেখুন ছবি ও ভিডিওতে


ট্রাম্পকে নিয়ে আরেক শ্বেতাঙ্গ তরুণীর বক্তব্য, ‘তিনি (ট্রাম্প) অনেক ভালো কিছু করেছেন তা নয়, আবার খুব যে খারাপ কিছু করেছেন তাও বলব না। ’

মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বলেন, ‘এ পরিস্থিতিকে তিনি (ট্রাম্প) অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এটি অনেক বড় ইস্যু। ’

ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জো গার্সটেনসন বলছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যা করছেন, অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক তাতে সন্তুষ্ট নন। দলীয় সমর্থনের ভিত্তিতেই যে শুধু মতামতের ভিন্নতা রয়েছে তা নয়, এলাকা ভিত্তিতেও জনমত ভিন্ন। যেসব এলাকার মানুষ এ মহামারিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেসব এলাকার মানুষ বেশি ক্ষিপ্ত। ’


আরও পড়ুন: আশাবাদী হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই: সৌমিত্রের চিকিৎসক


বছরের শুরুর দিকে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে জনমত জরিপে খুব সামান্য এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। কিন্তু গ্রীষ্মে অঙ্গরাজ্যটিতে কোভিড-১৯ ভয়ংকর রূপ নেওয়ার পর বাইডেনের পক্ষে সমর্থন অনেক বেড়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটার অনুযায়ী, অ্যারিজোনায় করোনায় এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৯৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালের ভোটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে জিতেছিলেন। এবারও বছরের অধিকাংশ সময় জুড়ে ট্রাম্পের সমর্থনে তেমন কোনো ভাটা দেখা যায়নি। কিন্তু অক্টোবরে হঠাৎ সংক্রমণ বাড়তে থাকায় জনমত ঘুরে গেছে। সর্বশেষ জনমত জরিপে উইসকনসিনে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে ৭ থেকে ১৭ পয়েন্ট এগিয়ে গেছেন।

এ ছাড়া রিপাবলিকানদের অন্যতম ঘাঁটি টেক্সাসেও ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে নিয়ে বিরূপ মনোভাব দেখা যাচ্ছে। কারণ, দুই দফা করোনা সংক্রমণে টেক্সাস নাজেহাল হয়ে পড়েছে। করোনায় এ অঙ্গরাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৬১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

টেক্সাসের চিত্রশিল্পী শেন রেইলি তাঁর অঙ্গরাজ্যে কোভিড-১৯-এ এত লোকের মৃত্যু দেখে প্রথমবারের মতো দল বদলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় রক্ষণশীলদের ভোট দিয়েছি। কিন্তু এই মহামারি মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা যা করছে, তাতে জীবনে প্রথমবারের মতো আমি ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেব। ’

তবে এত জরিপের ফল আর মতামতকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরং গত শনিবার পেনসিলভানিয়ার নিউটন শহরে এক সভায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘জো বাইডেন যা বলছেন, তা আমি দেখলাম। তাঁর মুখে সেই একই কথা, কোভিড, কোভিড আর কোভিড। তাঁর কাছে বলার মতো আর কিছুই নেই। ’ ট্রাম্পের ওই নির্বাচনী সভায় অনেককেই মাস্ক ছাড়া দেখা যায়।

অবশ্য অধ্যাপক গার্সটেনসন মনে করছেন, ‘অনেক মানুষের ভোটের সিদ্ধান্তের পেছনে করোনাভাইরাস মহামারি একমাত্র বিবেচ্য নয়। খুব কম রিপাবলিকানই তাঁদের দলীয় আনুগত্য ভঙ্গ করে জো বাইডেনকে ভোট দেবেন। ’

তবে মঙ্গলবারের নির্বাচনে যদি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পট বদলে যায়, তবে করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্পের ব্যর্থতাকেই এর অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হবে বলে বিশ্লেষকদের মতামতে উঠে এসেছে।

news24bd.tv নাজিম