এক বিকেলের  চা’য়ের গল্প :

এক বিকেলের চা’য়ের গল্প :

বন্যা মির্জা

আমার ফুপা খুবই ধার্মিক, যতটা সম্ভব সকল বিধান মেনে চলেন, নামাজ বাদ তো দূরের কথা উনি অসুস্হ হলেও নামাজ কাযা করেন না। তিনি কাজ করতেন বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডে। একবার আমার ফুপু মারাত্মক আঘাত পান চাপ কল চাপতে গিয়ে, চাপ কল হাত থেকে পিছলে যায় ও তার নাকমুখ ফেটে যায়, খুব কষ্ট পেয়েছিলেন সেসময়। সহ্য করা কঠিন ছিল।

তখন বাংলাদেশে চাপকল ছিল অনেক, আর সেগুলো কেমন হয় তার ধারনা আছে নিশ্চিয় অনেকের, যাহোক  হাতল ছিটকে গেলে কত ভয়াবহ হতে পারে তাও জানেন অনেকেই। আর এই কারণে ফুপুর শ্বাস নিতে কষ্ট হতো, ফুপু শ্বাস নিতেন তিন চার মিনিট পর পর, এমন পরিস্হিতে ফুপা ফুপুকে নিয়ে কোলকাতা যান চিকিৎসা করাতে, ফুপার পোষ্টটিং ছিলো যশোরে আর তাই উনার জন্য কোলকাতা যাওয়া সহজ ছিল।

আরও পড়ুন: 


নতুন বিয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সবাই: সিদ্দিক

সাকিবের ঘটনা নিয়ে এবার বিস্ফোরক মন্তব্য কঙ্গনার


ফুপুকে নিয়ে তিনি কোলকাতা যান এবং সেই তার প্রথম কোলকাতা যাওয়া! ফুপুকে অপারেশনের জন্য তাকে অচেনা জায়গাতে নানা প্রতিকূল পরিস্হিতে পড়তে হলেও কিছু মানুষ সাহায্য করেছিল সেসময়।

এই পর্যন্ত গল্পটা সাদামাটা, কি আছে এই গল্পে যে এমন যে লিখতে হবে! ঠিক তাই, কিছু নেই।

যা আছে তা মায়াময়, বাকিটা সেই জন্য লেখা।

ফুপা ফুপুকে অপারেশনের পর হসপিটালে রেখে গেলেন তার বাষট্টির বাংলাদেশ ছেড়ে আসা বন্ধুকে খুঁজতে! যার নাম মুকু! অচেনা শহরে একটা ঠিকানা ধরে উনি খুঁজে বের করতে গিয়ে তিনি বুঝলেন বিষয়টা এতো সহজ না। যাহোক হাল না ছেড়ে তিনি খুঁজলেন ও পেলেন।  

অনেকটা পথ বাসে গেলেও পায়ে হেঁটেছিলেন তিনি, এই পর্যায়ের পর একটু থেমে বললেন প্রথমবার পায়ে হেঁটে গেলেও পরেরবার রিক্সায় গিয়েছিলেন, লোকজন কে জিজ্ঞাসা করে যখন উনি বাড়ি খুঁজে পেলেন, এটা বলার পরে তার গলা কাঁপছিল, তাকে আর্দ্র দেখাচ্ছিল, অনেকদিন বাদে বন্ধুকে দেখবেন! বাড়ির দরজায় কড়া দিতে এক নারী বের হয়ে এলেন পরনের শাড়ি মলিন ও তিনি ভাত খাচ্ছিলেন। এঁটো হাতে উঠে জানতে চাইলো কাকে খুঁজছেন ? ফুপা বললেন এটা কি মুকুদের বাড়ি ? 

নারী বললেন হ্যাঁ, কিন্তু উনিতো বাড়িতে নেই! ফুপা তার পরিচয় দিলেন। তখন তাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন নারীটি এবং তাদের সাথে খাবার অনুরোধ করলেন। ফুপা রোজা ছিলেন, তিনি তা বললেন, ও নামাজ পড়তে চাইলেন। ততক্ষনে নামাজের সময় হয়ে গিয়েছিল। একটা তকতোপোশ দিলেন নারী তাকে। ফুপা নামাজ পড়লেন।  

নারী মুকু নামক বন্ধুর স্ত্রী! উনারা মুকু বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেন, মুকু বন্ধুর স্ত্রী বললেন ফুপাকে না বলতে যে তিনি কে, দেখা যাক মুকু তাকে চেনে কিনা! মুকু আসলেন অবাক তাকালেন ! চিনলেন না! বাষট্টির পরে পঁচিশ বছর বাদে দেখা! চেনা অচেনা দোলাচলে ফুপা বললেন তিনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ও তার নাম’ মূহুর্তে সব বদলে গেল! ফুপাকে জড়িয়ে ধরে মুকু কাঁদছেন! গল্প বলা থামিয়ে ফুপাও কাঁদছেন! 
 
পঁচিশ বছর বাদে দেখা বন্ধুর জন্য কাঁদছেন !

এর পর ফুপুকে নিয়ে তিনি ঐ বাড়িতেই তিনদিন ছিলেন। তারা তাদের শোবার একমাত্র চৌকি ছেড়ে মেঝেতে ছিলেন আর ফুপা ফুপু চৌকিতে! 

এই গল্প বিশেষ কি! হ্যা বিশেষ, এই যে মায়া তা বিশেষ ! অচেনা লোককে সাথে নিয়ে খেতে বলার যে বিশ্বাস তা বিশেষ! অন্য ধর্মের মানুষের বাড়িতে অনায়াস নামাজ এর আসনে বসা তা বিশেষ! বন্ধুর জন্য পরম মমতা তাও বিশেষ! 

এই গল্পটা বলার মুহুর্ত বিশেষ! কিন্তু এই গল্পগুলো বিশেষ হবার কথা ছিল না। সাধারণ জীবনের গল্প এইসব ! কিন্তু বিশেষ হয়ে ওঠে এক, মায়াতে আর দুই ,ঠিক তার বিপরীতে বিদ্বেষ আর অসহিষ্ণুতায়! কেবল মায়াটুকু দিয়ে এক জীবনের সকল আনন্দ পার করা যেত। বাকী সব অদরকারী আয়োজন! 

আমরা যেখানে এসেছি, সেখানে এই মায়া নেই! সাধারণ জীবনের গল্প নেই,এক জীবনে তার আর ফেরত হবে না!  আমরা কার কাছে ক্ষমা চাই আল্লাহ ব্যতীত! ক্ষমার মালিক কেবল তিনিই।

(ফেসবুক থেকে)

news24bd.tv কামরুল