৯০ এর গণআন্দোলনের তিনদশক, ছাত্রঐক্যের ১০ দফা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

৯০ এর গণআন্দোলনের তিনদশক, ছাত্রঐক্যের ১০ দফা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

মঞ্জুরে খোদা টরিক

তারুণ্যের একটা ভাষা আছে। কিন্তু সেই ভাষা ও মাত্রাও সব তারুণ্য ধারন করে না। আমাকে-আমাদের করেছিল। সেই তারুণ্য সন্ধি ও আত্মসমর্পনের ছিল না, ছিল আপোষহীন ও বেপরোয়া।

ছিল দারুণ দূর্বার, তুমুল তুখোর! চোখে আগুন, বুকে বারুদ আর মুঠে ছিল প্রচন্ড ঘৃনা ও প্রতিবাদ। যে স্পর্দ্ধিত তারুণ্য লড়েছিল নিরস্ত্র, এক বিশ্ব ব্যহায়া সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে! সে এক রক্ত হিম করা গল্প! তিনদশক পার হলো যে গল্পের! সেকি কেবলি গল্প নাকি এক দুস্বপ্নের রুপকথা?

ভূমিকা
আজ থেকে ৩০ বছর আগে তৎকালীন স্বৈরাচারী সামরিকজান্তা এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সারে ৯ বছর আন্দোলনের পর তার পতন ও বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল। সেই গণআন্দোলনে প্রায় ৩৭০ জন মানুষ নিহত হয়েছিল, পঙ্গু ও গুম হয়েছিল অসংখ্য মানুষ। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায় মিলে হরতাল হলেছিল ৩২৮ দিন, প্রায় ১ বছর! অবরোধ হয়েছিল প্রায় ৭০ দিন।

জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট ও আর্থিক ক্ষতিও হয়েছিল অনেক। যে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে। সেই দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আমরা কি অর্জন করলাম? সব আন্দোলনের একটি চেতনা ও অঙ্গীকারের দিক থাকে। ৯০’র গণআন্দোলনেরও ছিল। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শাসনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, ঘুষ-দূর্ণীতি বন্ধ, আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন ইত্যাদি। সে আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ১০ দফা, তিনজোটের রুপরেখা ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায় ও গণদাবীতে পরিণত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৬ ও ১১ দফার মতই বিষয়টি কাজ করে। সে আকাঙ্খার কতটুকু অর্জিত হলো, সে বিশ্লেষনই এ প্রবন্ধের মূল আলাপ।

ক্ষমতা দখলের খেলা
১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ তৎকালীন সামরিক বাহিনীর প্রধান হোসাইন মোহাম্মাদ এরশাদ বন্দুকের নলে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ক্ষমতা দখল করেই সামরিক ফরমান “এমএলআর ৮২” জারি করেন। এতে যে কোন ভাবে সামরিক শাসনের বিরোধিতা করলে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়। আর এই তথাকথিত কালো আইনের অধীনে হাজার-হাজার নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষকে গ্রেফতার হয়। ক্ষমতা দখল করেই সামরিক শাসকরা যা বলে সুন্দর সুন্দর কথা, তিনিও তাই বলেছিলেন, কিন্তু তিনিও তার কথা রাখেননি। শুরু করেন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া। দল গঠন, নির্বাচন, প্রতিশ্রুতি আর উন্নয়নের ফুলঝুরির আড়ালে চলতে থাকে দূর্ণীতি, লুটপাট। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে রাবার স্ট্যামে পরিণত করেন। এবং ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হত্যা-খুন-গুম-দমন-পীড়নের রাজনীতিতে নিজেকে বিশ্ববেহায়ায় পরিণত করেন।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়া
এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সকল ছাত্রসংগঠন ও রাজনৈতিক দল তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও এ সংগ্রামে যোগ দেয়। স্বৈরাচার মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে বোঝাপড়া ও সমঝোতার পরিবেশ তৈরী হয়। নানা প্রাক্রিয়ার বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে জোট-ঐক্য গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রধানত তিনটি জোটে ঐক্যবদ্ধ হয়। ৮ দল, ৭ দল ও ৫ দল। আন্দোলন-সংগ্রামকে করতে জোটগুলোর মধ্যে গতিশীল যোগাযোগ করতে তৈরী করা হয় ৩ জোটের লিয়াজো কমিটি। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেও ২ টি জোট গড়ে ওঠে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও সংগ্রামী ছাত্র জোট এবং পরিবর্তিতে সংগ্রামকে আরও জোড়দার করতে ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর শহীদ জেহাদের লাশকে সামনে রেখে ২৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করা হয়।

জোট-ঐক্যে বোঝাপড়ার ক্ষেত্র
আন্দোলন চলাকালে জনগন ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে থেকে চাপ আসতে থাকে যে, এরাশাদ পতনের মাধ্যমে আমরা কি অর্জন করতে চাই, সে প্রশ্নটির। দল ও জোটগুলোও আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সে তাগিদ উপলব্ধি করতে থাকে। ক্ষমতা দখল ও রক্ষার নেতিবাচক রাজনীতি কারণে মানুষ আস্থাহীনতায় ভূগছিল, কাউকে বিশ্বাস করছিল না। রাজনীতির কথা আসলেই মানুষ লঙ্কা ও রাবণের গল্প শুনিয়ে দিতো। কারন আন্দোলনের তোলপাড় করা অবস্থায় বাঘা-বাঘা রাজনীতিকের সকাল-বিকাল চরিত্র পরিবর্তনের ঘটনা মানুষের মধ্যে ব্যাপক অবিশ্বাসের জন্ম দিলেছিল। সেই পরিস্থিতিতে জনগনকে আস্থায় নেয়ার তাগিদেই ৩ জোটের রুপরেখা ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ১০ দফা রচিত হয়েছিল।

তিনজোটের রুপরেখা কি ও কেন
তিনজোটের রুপরেখা হচ্ছে স্বৈরাচার হটানো ও ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি-প্রক্রিয়ার একটি দলিল। এই দলিলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় প্রথম পর্ব হচ্ছে এর মূল ঘোষণা এবং দ্বিতীয় পর্বে আচরণ বিধি। এটি ৪টি ধারা ও ৮টি উপধারার একটি ছোট দলিল। কিন্তু অল্প পরিসরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উত্তরণ ও ধারাবাহিকতার একটি পরিষ্কার নির্দেশনা এতে ছিল। যে ধারাবাহিকতা অনুসরন করলে বাংলাদেশের রাজনীতি, উন্নয়ন গনতন্ত্রের অনেক সমস্যার সমাধান হতো।
তিন জোটের রুপরেখা বিশ্লেষন করলে বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রধানত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 

লক্ষ্য করা যায়ঃ
এক। নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি, যে সরকার তিন মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে, রুটিন দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করবে এবং সবার জন্য একটি সমতল ক্ষেত্র প্রস্তত করবে।

দুই। একট আচরণবিধি, যাতে অবাধ সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের লক্ষ্য দলগুলোর করণীয় অনেকগুলো অঙ্গীকার ছিল, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল “এরশাদ স্বৈরাচারী সরকাররের চিহ্নিত ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের নিজেদের দলে স্থান না দেয়ার।

তিন। নির্বাচন পরবর্তি সরকারের কিছু করণীয়, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ছিল সংসদকে কার্যকর করে সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং জনগনের অধিকার হরণকারী সকল কালো আইন বাতিল করা। তিন জোটের রুপরেখার সবচেয়ে প্রনিধানযোগ্য অঙ্গীকার ছিল নির্বাচনে প্রদত্ত জনরায় মেনে চলা, অসাংবিধানিক পহ্নায় ক্ষমতা দখলের সকল প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা এবং নির্বাচন ব্যতীত সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় তথা কোন।

আরও পড়ুন:


আপনার উদ্বেগের সঙ্গে সুর মেলাতে পারছি না

সিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের সেই ঘটনা

ভারতের তৈরি টিকা নিয়ে করোনায় আক্রান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী!

যে সময় দোয়া পড়লে দ্রুত কবুল হয়

যে দোয়া পড়লে কখনো বিফলে যায় না!

কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে যে দোয়া পড়বেন!


news24bd.tv কামরুল