চিরঞ্জীব কমরেড মণি লাল সালাম

চিরঞ্জীব কমরেড মণি লাল সালাম

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

কমরেড মণি সিংহ ছিলেন আমাদের উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা, তার অন্যতম স্থপতি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ। তিনি ছিলেন, এদেশের তরুণ বিপ্লবীদের কাছে অনুপ্রেরণা ও উজ্জীবনের অনন্ত উৎস। ছিলেন, মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সৃজনশীল বৈজ্ঞানিক মতাদর্শে দৃঢ় আস্থাবান একজন খাঁটি কমিউনিস্ট নেতা।

তাঁর বিপ্লবী জীবনাদর্শ ও অক্ষয় বিপ্লবী কর্মকান্ডের মাঝেই তাঁর কালজয়ী পরিচয় লিপিবদ্ধ। এই কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে আলাদা অন্যকোনোভাবে তার পরিচয় খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা বৃথা। এই পরিচয়েই তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ জাতীয় নেতা।

মার্কসবাদী বিপ্লবী জীবনাদর্শই কমরেড মণি সিংহকে একজন বড় মাপের মানুষ হিসাবে তার পরিচয় ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে যেতে পথ দেখিয়েছে।

তাঁর জীবন সংগ্রাম ছিল মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য, এবং তার মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে মানবমুক্তির জন্য। ‘মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ’ তথা সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য ছিল তাঁর আমৃত্যু সংগ্রামী প্রয়াস। মানুষই ছিল তাঁর সাধনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি সবসময় ‘বিপ্লবী মানবতাবাদের’ পক্ষে প্রচার করতেন। মানুষের প্রতি ভালবাসা ও মানবপ্রেমকে বিপ্লবী ধারায় সমাজে সার্বজনীন করে তুলতেই পরিচালিত হয়েছিল তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। সেই কর্মকাণ্ড এদেশে ও বিশ্বে আজও অব্যাহত আছে। প্রবল প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হলেও নবজাগরিত শক্তি নিয়ে তা অগ্রসর হচ্ছে। মণি সিংহ এই সংগ্রামে আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস হিসাবে চিরঞ্জীব।

কমরেড মণি সিংহকে আমি প্রথম দেখেছিলাম, যেদিন তাঁর বক্তৃতা প্রথম শুনেছিলাম, সেদিন জানতাম না যে যাকে দেখলাম যার বক্তৃতা শুনলাম তিনি মণি সিংহ। ১৯৬৬ সালের মে মাসের এক সন্ধ্যায় ঢাকার কল্যাণপুর এলাকায় একটি বাশের বেড়ায় ঘেরা টিনের বাসায় অনুষ্ঠিত সন্ধ্যা রাতের ছাত্র কর্মীদের বৈঠকের স্মৃতি আমার কাছে আজও উজ্জ্বল। কমিউনিস্ট পার্টি তখন নিষিদ্ধ অবস্থায় আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবস্থায় কাজ করছে। আমরা কলেজের শিক্ষা জীবনে প্রবেশ করে পার্টির কর্মী গ্রুপে গোপনে সংগঠিত হয়েছি। কমিউনিস্টদের মধ্যে তখন চলছে চীন-রাশিয়া নামে আদর্শগত-তাত্তি¡ক বিতর্কের ঝড়। আরো চলছে বিভেদ-বিভক্তির ট্র্যাজিক সব ঘটনাবলী। পার্টির ঢাকাস্থ সব ছাত্র কর্মীদের একটি সভা করে তাদের সামনে আত্মগোপনে থাকা পার্টি নেতাদের নিয়ে এসে তাত্ত্বিক ও সাংগঠনিক শক্তি সংহত করার জন্য মহান মে দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যার পর সেদিন সেই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।

সেদিন সন্ধ্যায় আধার ঘনিয়ে আসার পরপরই কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডে নেমে মিনিট দশেক হেঁটে আমাদের পার্টি গ্রুপের ৫জন সদস্যসহ গন্তব্যে পৌঁছেছিলাম। সভাস্থানে আগেই হাজির হয়েছিল ৬০/৭০ জন ছাত্র কমরেড। অধিকাংশই পার্টি গ্রæপের সদস্য (সে সময় ছাত্রদের মধ্যে পূর্ণ পার্টি সদস্য ছিল মাত্র ৮/১০ জন)। দেখলাম, হারিকেনের আলোতে আলোকিত সভাকক্ষের একপাশ ধরে বসে আছেন তিন জন প্রবীণ ও একজন অপেক্ষাকৃত তরুণ অপরিচিত ব্যক্তি। একে একে তাঁরা সবাই বক্তৃতা করলেন। কমরেড আজাদ (মণি সিংহ), কমরেড আমিন (অনীল মুখর্জী), কমরেড করিম (জ্ঞান চক্রবর্তী) এবং কমরেড কবির (মো. ফরহাদ) নামে তাদেরকে আমাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। সাদা পায়জামার উপর সাদা ফুল হাতা লম্বা কুর্তা-সার্ট গায়ে ফর্সা, লম্বা, কালো চশমা পড়া কমরেড আজাদ নামের যে মানুষটির তেজদীপ্ত বক্তৃতা সেদিন শুনেছিলাম তিনিই যে কমরেড মণি সিংহ সে কথা জানতে পেরেছিলাম পার্টির অন্য নেতাদের কাছ থেকে আরো কয়েক মাস পরে। এরপর, ১৯৬৮ সালে তিনি গ্রেফতার হয়ে যান। উনসত্তরের গণঅভূত্থানের সময় তিনি মুক্ত হয়ে আসেন। তখনই তাঁর সাথে আমার দেখা-স্বাক্ষাতের ও সামনা-সামনি কথাবার্তা বলার প্রথম সুযোগ হয়।

কমরেড মণি সিংহের সাথে আমার পরিচয় ঘনিষ্ঠতা লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন কয়েকবার তাঁর সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে। ২/৪ দিন একই বাসায় রাত কাটিয়েছি। আমি ছিলাম প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রথম দলের একজন কমান্ডার। তিনি আমার কাছে অস্ত্র-শস্ত্র সম্পর্কে, যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কে, আমাদের গেরিলা দলগুলোর তৎপরতা সম্পর্কে খুটিয়ে খুটিয়ে সবকিছু জানতে চাইতেন। এসব বিষয় যেন সবই তার নিজস্ব বিষয়, একান্ত আপন ভ‚বনের ব্যাপার। গারো পাহাড় এলাকার টংক প্রথা বিরোধী সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহের সেনাপতি অস্ত্র কাঁধে ঝুলানো সাদা ঘোড়ায় সওয়ার চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকের মণি সিংহই আমার মানসচক্ষে সামনে এসে দাাড়তো, তাঁর সাথে এসব বিষয়ে আলোচনার সময়।
কমরেড মণি সিংহ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্যতম ব্যক্তিত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য এবং কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কর্মকণ্ডের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক, আন্তর্জাতিক, আদর্শিক সহ বহুবিধ কাজে সে সময় সত্তর বছর এই বয়সের মানুষটি নয় মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন মুক্তিযুদ্ধের গতিধারা সঠিক পথে প্রবাহিত করতে, তার প্রগতিমূখীনতা নিশ্চিত করতে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দেশি-বিদেশি শক্তির সমাবেশ ও ঐক্য গড়ে তুলতে, এবং জাতির এই মরণপণ সংগ্রামকে বিজয়ের পথে নিয়ে যেতে অমূল্য অবদান রেখেছেন। এতো কাজের মাঝেও আমার সাথে দেখা হলেই তাঁর উচ্ছ্বাস বেড়ে যেতো। স্পষ্টই বুঝতে পারতাম যে তাঁর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠেছে। যেন তাঁর যৌবন তিনি আবার ফিরে পেয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন অকৃত্রিম ‘জাত বিপ্লবী’।

স্বাধীনতার পর আরো অনেক কাছ থেকে কমরেড মণি সিংহকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। অগণিত সভায়, প্রকাশ্য-গোপন বৈঠকে, আন্ডারগ্রাউন্ডে এক ডেনে, জেলা সফরে, জনসভায়, বিদেশ সফরে, পার্টির সমাবেশে, কৃষক সমিতি-ক্ষেতমজুর সমিতির কর্মসূচিতে তাঁর সাথে কাজ করেছি। । পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবং এক পর্যায়ে পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীতে তাঁর সাথে কাজ করার সুযোগও আমার হয়েছে। তাঁকে কাছে থেকে দেখেছি, তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর মাঝে আমি কুজে পেয়েছি অসাধারণ এক ‘মানুষ’কে।

এসব ছাড়াও আমার দুর্লভ সুযোগ হয়েছিল তাঁর সাথে অনেকগুলো মাস জেলখানায় একসাথে একই ওয়ার্ডে পাশাপাশি সিটে থাকার। আমার কারাজীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন ছিল কমরেড মণি সিংহের নিবিড় সঙ্গ পাওয়া, কারাগারের আচার্যের সান্নিধ্য পাওয়া। বিপ্লবী রাজনৈতিক জীবনবোধের নিখুঁত প্রতিফলন তাঁর মাঝে তখন দেখেছি। শৃংখলাপূর্ণ প্রাত্যহিক জীবনাভ্যাস, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ-বিনোদন, বন্দীদের প্রতি মমত্ববোধ, সাধারণ কয়েদিদের প্রতি প্রীতিময় আচরণ- এসব বৈশিষ্ট্যে মণ্ডিত ছিল তখনকার পঁচাত্তর বছর বয়সী মণি সিংহের কারাগারের দিনগুলো।  

এসবের সাথে প্রত্যক্ষ করেছি অধিকার ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কারা কর্তৃপক্ষের সাথে তার নিরন্তার লড়াই চালানোর সব ঘটনা। বন্দী করে রেখেছ, তাতে কী? এখানেও লড়াই চলবে। বিপ্লবী জীবন অব্যাহত থাকবে কারাগারেও। হয়তো অন্য পথে, অন্য পন্থায়। জেলখানার বন্দী দিনগুলোকেও কাজে লাগাও। বই পড়। পাঠচক্র চালাও। আলোচনা সভা কর। উন্নত পরিবেশের জন্য জেল কর্তৃপক্ষের সাথে দরবার কর। রেশন কেন খারাপ এলো? পত্রিকা আসতে বিলম্ব হয় কেন? ডাক্তার রাউন্ডে থাকে না কেন? বন্দী জীবন, তাতে কি? সেখানেও আরো ভালো থাকার জন্য সংগ্রাম কর। যা বিদ্যমান তাকেই ধ্রুব ধরে নিয়ে, “বাস্তবতা” বলে অজুহাত দিয়ে, চলতি অবস্থার কাছে, চলতি হাওয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করা চলবে না। যা বিদ্যমান রয়েছে তাকে উন্নত করার জন্য, তাকে বদলানোর জন্য চেষ্টা করে যেতে হবে। সে চেষ্টা আংশিক হতে পারে, ক্ষুদ্র হতে পারে- তাতে পরোয়া নেই। তাই, কারাগারেও চলবে সংগ্রাম! সেই সংগ্রামই নিরানন্দ পাষাণসম বন্দী জীবনকে অর্থপূর্ণ ও আনন্দময় করে তুলবে। এসব হলো ১৯৭৭ সালের কথা। এসবের মাঝে প্রতিবিম্বিত হতে দেখেছিলাম একজন প্রকৃত বিপ্লবীর অন্তরের অবিরাম সঙ্গীত মুর্চ্ছনার মর্মবাণী।

পাকিস্তানের শুরুর দিকে টংক আন্দোলনকে দমন-পীড়ন চালিয়ে নিস্তব্ধ করে দেয়ার পর নূরুল আমিনের সদম্ভ আস্ফালন “কমিউনিস্টদের এবার কবর দিয়ে দিলাম” প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে মণি সিংহ তার ভাষণে প্রায়শই এ বিষয়ে উপসংহার টানতেন এই বলে, “কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিকের পার্টি, গরীবের পার্টি, ইনসাফের পার্টি। এই পার্টিকে যারা ধ্বংশ করতে চাবে তারাই ধ্বংশ হয়ে যাবে। কমিউনিস্ট পার্টি জিন্দা আছে, জিন্দা থাকবে। ” 

পার্টির মধ্যে ক্রমে প্রসারমান দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদী, মধ্যবিত্তসূলভ প্রবণতা ও বিচ্যূতি সম্পর্কে তিনি খুবই সচেতন ছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি বহুবার সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। দু’এক সময় ক্রোধান্বিত হয়ে এও বলেছেন যে, এভাবে যদি চলে তা হলে পার্টি একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। আজ তোমরা যে সব কথা বলছো, দেখো এসব কথার সুর ধরেই একদিন বলবে যে পার্টিই বাতিল করা হোক, শ্রেণি সংগ্রাম বাতিল করা হোক। এসব এখনই তোমরা বন্ধ কর। নয়তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। পার্টির ভেতরে আমলাতান্ত্রিক প্রবণতা, শ্রেণি সংগ্রাম থেকে দূরে থেকে পার্টি নেতৃত্বের কাছে ভীড় করার প্রবণতা, নানা অযুহাতে পার্টির শৃংখলা, নিয়মানুবর্তীতা, সময়ানুবর্তীতার লংঘন, সার্বক্ষণিকদের কর্মকাণ্ড ঢিলা-ঢালা ভাব ইত্যাদির তিনি কঠোর সমালোচক ছিলেন। পার্টিতে এসবের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতেন।

কমরেড মণি সিংহ কোনো বড় মাপের মার্কসবাদী এ্যাকাডেমিক ছিলেন না। তাত্ত্বিক খুটি-নাটিতেও তিনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। কিন্তু তিনি মার্কসবাদকে গভীরতা দিয়ে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তিনি তত্ত্ব মুখস্ত বলতে পারতেন না, কিন্তু প্রজ্ঞার সাথে তত্ত্বকে প্রয়োগ করতে পারতেন। তাই তার জীবন পর্য্যালোচনা করে দেখতে পাই যে বড় বড় মৌলিক ক্ষেত্রে তিনি প্রায় সবসময়ই সঠিক অবস্থান নিয়েছেন, দৃঢ়তার সাথে। ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ধারা থেকে প্রথম সুযোগেই মার্কবাদী জীবনাদর্শ গ্রহণ করা, শ্রমিক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ, নিজ জেলায় পারিবারিক আভিজাত্য ও স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক সশস্ত্র টংক আন্দোলন পরিচালনা, সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তান রাষ্ট্রে সাহসের সাথে তিলে তিলে গণতন্ত্র, স্বাধীকারের আন্দোলনের ভিত্তিভ‚মি রচনা করা, ‘মাওবাদের’ বিষয়ে সঠিক অবস্থান নিয়ে বামপন্থী বিচ্যূতির বিরুদ্ধে দৃঢ় সংগ্রাম পরিচালনা, দক্ষিণপন্থী পদস্খলনের বিপদ সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক হুশিয়ারি দেয়া, পার্টিতে বিভেদের বিরুদ্ধে সবসময় অবস্থান নেয়া এবং গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা কঠোরভাবে অনুশীলন করা- এসবই কমরেড মণি সিংহকে পার্টির স্বাভাবিক শীর্ষ নেতৃত্বের আসনে পৌঁছে দিয়েছিল।  

নীতি-আদর্শের প্রশ্নে সবসময় অবিচল-অনমনীয় থাকলেও তিনি কখনও সংকীর্ণ ছিলেন না। মূল শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যের বিষয়টিকে বিপ্লবী কর্মকৌশল বলে জানতেন, রণনীতি ও রণকৌশলের আন্তঃসম্পর্ক সম্পর্কে কখনো বিস্মৃত হতেন না এবং সবসময়ই পার্টির স্বাধীন রাজনৈতিক ভ‚মিকাকে গুরুত্ব দিতেন।

কমরেড মণি সিংহের কমিউনিস্ট আদর্শবোধই তাকে একজন বিশুদ্ধ অনুপম অনুকরণীয় দেশপ্রেমিকের পরিচয় এনে দিয়েছে। সততা, ত্যাগ, আদর্শ নিষ্ঠা, কঠোর শৃংখলাবোধ, বিপ্লবী আত্মসচেতনা, অধ্যাবসায়, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দরদ, দায়িত্ববোধ, দেশমাতৃকার স্বার্থে আত্মস্বার্থ বিসর্জন দেয়া, জনসেবা-দেশসেবাকে একটি সাধনা হিসাবে গ্রহণ করা, প্রতিদিন চিন্তায় ও কাজে মানবমুক্তির ও দেশপ্রেমের অধ্যায়ন করা, নিত্যদিনের ছোট বড় সব কাজে বিপ্লবী জীবনাদর্শের প্রতিফলন ঘটানোর নিরন্তর প্রয়াস - কমরেড মণি সিংহের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থানীয় রূপে বিরাজমান ছিল।  

এসব অমূল্য গুণাবলীর সমাহারই তাঁকে এদেশের রাজনীতিতে অনন্য সম্মানের স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে যখন অপরাজনীতি, ব্যবসায়িক রাজনীতি, সুবিধা ও হালুয়া রুটির রাজনীতি, আত্মস্বার্থের রাজনীতি এবং ‘বাজার অর্থনীতির’ দানবীয় বিস্তারের মুখে ‘বাজার রাজনীতি’ সবকিছুকে গ্রাস করে চলেছে- তখন ‘রাজনীতি বাঁচাও’ জাতির সামনে আজ এক অগ্রগণ্য কর্তব্য। অপরাজনীতিকে পরাজিত করে “রাজনীতিকে” বাঁচানোর সংগ্রামে মণি সিংহ জাতির সামনে এক অজেয় শক্তিমান প্রতীক হয়ে আছেন। নীতি, আদর্শ, ত্যাগ, দেশপ্রেম, প্রগতির রাজনীতির পুনরুজ্জীবনের জন্য আজ ডাক এসেছে। এ আজ মাতৃভ‚মির ডাক। এ ডাকে সাড়া দিতে হবে সব সৎ মানুষকে। কান্ডারী হয়ে পথ দেখাচ্ছেন চিরঞ্জীব কমরেড মণি সিংহ।

কমরেড মণি সিংহ, সালাম, তোমাকে সালাম!

লেখক: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি

news24bd.tv তৌহিদ